স্টাফ রিপোর্টার : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে সিপিবি,বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। একই সাথে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদেও এ হরতাল। সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। হরতাল চলছে। সকাল থেকে কোন মিছিল বা পিকেটিং এর খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েক জন বাম নেতা আজ মকালে ঢাকার প্রধান সড়কে হাটতে দেখা গেছে।
এদিকে, বামদের ডাকা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ হরতালে সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিকল্পধারা, নাগরিক ঐক্য ও বাংলাদেশ ন্যাপ।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে। গত ২৩ নবেম্বর বিইআরসির ওই ঘোষণার পরপরই হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে বাম দলগুলো। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ওই সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী বলছে তারা।
গতকাল বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক। রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা হামিদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার এমন এক সময়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে, যখন চাল, পিঁয়াজসহ নিত্য ব্যবহার্য্য পণ্যের দাম নিয়ে মানুষ দিশেহারা। বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধির কারণে শ্রমজীবী মেহনতি, স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ এবং নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়, দুর্দশা, দুর্গতি আরও বেড়ে যাবে। হরতালের সমর্থনে প্রচারে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জয়পুরহাট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি বাধা এসেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাইফুল হক বলেন, এখুনি জনগণের উপর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির অত্যাচার-আঘাত প্রতিরোধ করতে না পারলে আগামী দিনগুলোতে জনগণের উপর আরও নতুন নতুন অত্যাচার নেমে আসবে।
সাইফুল হক সাংবাদিক সম্মেলনে আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সভা, সমাবেশ, গণসংযোগ, পদযাত্রা ও প্রচার মিছিলের মাধ্যমে হরতাল পালন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে বিএনপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য বাম দলগুলোর এ কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে। রাজনৈতিক দল ছাড়াও ৩০ জন বুদ্ধিজীবী, ২০ জন আইনজীবী, ছাত্র-যুব-শ্রমিক-নারীসহ বিভিন্ন সংগঠন হরতালে সমর্থন জানিয়েছে। এছাড়া তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিও এ হরতালে সমর্থন জানিয়েছে।
এদিকে আজকের হরতালে সমর্থন জানিয়ে গতকাল সকালে মানববন্ধন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-(বাংলাদেশ ন্যাপ)। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি’ শীর্ষক ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনটি আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, সরকার সকল যুক্তি উপেক্ষা করে গায়ের জোরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য কমেছে, ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমেছে। এছাড়া সরকার ভুলনীতি-দুর্নীতি পরিহার করলে কমপক্ষে সাত হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
তিনি বলেন, ডিজেলের বদলে ফার্নেস অয়েল ব্যবহার, বেসরকারি বিদ্যুতের বদলে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গ্যাস সরবরাহ, দুর্নীতি, অপচয়, লুটপাট বন্ধ করলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নয় বরং প্রতি ইউনিটে এক টাকা ৫৬ পয়সা কমানো সম্ভব। অথচ সরকার রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী, বিদ্যুৎ আমদানিকারক, এলএলজি আমদানিকারকদের মুনাফা বাড়ানোর স্বার্থে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি কোনও রকম তালবাহানা না করে জনস্বার্থেই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
বাংলাদেশ ন্যাপের মহানগর সদস্য সচিব মো. শহীদুননবী ডাবলু’র সঞ্চালনায় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, গণতান্ত্রিক ঐক্যের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সহ-সভাপতি মুহম্মদ ফরিদউদ্দিন, ন্যাপ যুগ্ম মহাসচিব স্বপন কুমার সাহা প্রমুখ।