রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে মগসেনা ও উগ্রপন্থীদের কঠোর অবরোধ

মুসলমান যুবককে গুলী করে হত্যা
কামাল হোসেন আজাদ, কক্সবাজার: প্রত্যাবাসন চুক্তি উপেক্ষা করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আরাকান। পুরানো রীতির কায়দায় নতুন করে পাখির মতো গুলী চালিয়ে খুন করা হচ্ছে অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের। তাও আবার প্রকাশ্য দিবালোকে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে নিরস্ত্র নিরীহ মুসলমানদের গুলী করে খুন করার ঘটনার মাধ্যমে ভীতি ছড়ানোর জন্যে মগসেনারা বেপরোয়া ভাব প্রদর্শন করছে। এমন জঘন্যতম ঘটনা অব্যাহত থাকলে প্রত্যাবাসন চুক্তিও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকগণ। সেই সাথে সংকট নিয়ে বেঁচে থাকা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবনে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তৃণমূল পর্যায়ে মানবতার জন্য কাজ করা মানবাধিকার কর্মীদের পক্ষ থেকে।
আরাকানের মংডুতে উক্ত রোহিঙ্গা মুসলমান যুবককে গুলী করে হত্যা করেছে মগসেনারা। মঙ্গলবার (২৮ নবেম্বর) সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে গুলী করে মানুষ হত্যার এ ঘটনা ঘটে । সূত্র জানিয়েছে, মংডুর নাকফুরা গ্রামের নুরুল আলমের ছেলে মো. আনিস (৩৩) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নিকটস্থ বাজারের উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে ঘর থেকে বের হয়। বাজার নিয়ে ফিরে আসার সময় ২জন সেনা সদস্য আনিসের পিছু নিয়ে পথ গতিরোধ করে। এসময় তার কাছ থেকে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাই মগ সেনারা। বাড়িতে খাবার-দাবার না থাকায় দ্রব্য কিনতে বাজারে যাওয়ার কথা বলাতে সেনা সদস্যরা তার দিকে অস্ত্র তাক করে এবং জনসম্মুখে গুলী করে।
গুলীবিদ্ধ হওয়ার পরপরই আনিস ঘটনাস্থলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ ঘটনায় নতুন করে ওই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। জীবন ঝুঁকি নিয়ে আরাকানে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে। এদিকে আরাকানে যেসব গ্রামে এখনো রোহিঙ্গারা রয়ে গেছে সেসব গ্রাম অবরোধ করে রেখেছে সৈন্য ও তাদের লেলিয়ে দেয়া উগ্রপন্থীরা। সাথে রয়েছে এলাকাভিত্তিক গঠিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সশস্ত্র সংগঠন নাডালা বাহিনী। তাদের ভাতে-পানিতে মারার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বার্মা প্রশাসন। জীবিকার সন্ধানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের কোনভাবেই ঘর হতে বের হতে দিচ্ছে না। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে বাজারে যেতেও বারণ করা হয়েছে মগসেনার পক্ষ থেকে। এমনকি চিকিৎসার জন্যও গ্রামের বাহিরে যাওয়ার রোহিঙ্গাদের জন্য বন্ধ। গোটা আরাকানে উগ্রপন্থী ও মগসেনা কর্তৃক নির্যাতনের বিষয়কে ভিন্ন অবস্থায় পরিবেশন করে সেদেশের সেনাপ্রধান জঘন্যতম মিথ্যাচার করছে। আরাকানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং বার্মায় কোন ধর্মীয় বৈষম্য নেই বলেও জাহির করছে বার্মা সফররত পোপ ফ্রান্সিসকে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বার্মা কর্তৃপক্ষ চাপ প্রয়োগ করছে পোপকে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বার্মা-বাংলাদেশ চুক্তি শুধু যে লোক দেখানো তার প্রমাণ মিলতে শুধু করেছে চলমান পরিস্থিতি থেকে। এখনও বন্ধ হয়নি সেনা অভিযান। অব্যাহত রয়েছে জাতগত বিভাজনে মুসলমান নির্যাতন। অবরুদ্ধ রোহিঙ্গারা দিনের পর দিন অনাহারে-অর্ধহারে থাকতে না পেরে মুখিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের দিকে।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।