সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার কাজ অনিশ্চিত— হ্যাঙ্গারে ঝুলে আছে বিমানবন্দরের মেগা প্রকল্প

ঋণ চুক্তি বাতিল করতে পারে জাইকা * দীর্ঘসূত্রতায় বাড়বে প্রকল্প ব্যয় * এপ্রিলে শুরু হচ্ছে না মূল কাজ * ৪৩০ কোটি টাকার হ্যাঙ্গার প্রকল্পের শুরুতেই বাধা

ক্রাইমবার্তা অনলাইন ডেস্ক:

হ্যাঙ্গার প্রজেক্টের কারণে আটকে আছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের মেগা প্রকল্প। আগামী এপ্রিলের মধ্যে হ্যাঙ্গার নির্মাণ শেষ না হলে মেগা প্রকল্পের জন্য জাইকার সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণচুক্তি বাতিলের আশঙ্কা আছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে কাজ শুরু না হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হবে । এতে ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণসহ মেগা প্রকল্পের অন্যান্য কাজ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। জাইকার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সিভিল এভিয়েশনকে জানানো হয়েছে, প্রকল্প শুরুতে বিলম্ব হলে ব্যয় বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তারা ঋণ চুক্তি বাতিলের জন্য সরকারের কাছে চিঠি দেবে।
এ প্রসঙ্গে সিভিল এভিয়েশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেক যুগান্তরকে বলেন, হ্যাঙ্গার প্রকল্প নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় মতামতের জন্য বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আইন শাখায় পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) কাছেও চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি আশা করছেন দ্রুত বিষয়টি সুরাহা হবে। কারণ এপ্রিলের আগে হ্যাঙ্গার প্রকল্পটি শেষ করতে না পারলে জাইকার সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার মূল প্রকল্প আটকে যাবে।
সূত্র জানায়, মেগা প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, ৩২টি বোডিং ব্রিজ তৈরি, নতুন কার্গো ভবন, ভিভিআইপি ভবন, জেনারেল এভিয়েশন হ্যাঙ্গার, হ্যাঙ্গার অ্যাপ্রোন ও ফায়ার স্টেশনসহ বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণের কথা রয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এ লক্ষ্যে ২৯ জুন সরকারের সঙ্গে জাইকার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী আগামী বছরের এপ্রিল মাসের আগে মূল প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা। এর আগে বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের নিজস্ব এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স সেন্টারগুলো সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়। এগুলো সরিয়ে নিয়ে রাখার জন্য নতুন হ্যাঙ্গার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এর কাজ শেষ করার কথা ২০১৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে। কারণ জাইকা এ সময় থেকে মূল প্রকল্পের কাজ শুরু করবে।
জানা গেছে, হ্যাঙ্গার প্রকল্পটি ইএম ও পূর্ত কাজের সমন্বয়ে একটি বিশেষায়িত প্রকল্প। এটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের আগের ধাপ। এ প্রকল্পে পূর্ত কাজের আওতায় স্টিল স্ট্রাকচার, কংক্রিট স্ট্রাকচার, কংক্রিট পেভমেন্ট তৈরি হবে। ইএমের আওতায় অভ্যন্তরীণ ইলেকট্রিক্যাল, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেমসহ অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট স্থাপনের কাজ হবে। হ্যাঙ্গার প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩১ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব তহবিল থেকে এটি নির্মাণ করা হবে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে প্রকল্প এলাকা থেকে [শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর] বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের নিজস্ব এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স হ্যাঙ্গারগুলো অপসারণ করতে হবে। পাশাপাশি একই সময়ের মধ্যে নির্মিত নতুন হ্যাঙ্গারে এগুলো সরিয়ে নিতে হবে। এপ্রিলের আগেই নতুন হ্যাঙ্গার নির্মাণ ও পুরনোগুলো অপসারণের কাজ শেষ করতে হবে। এ লক্ষ্যেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া। কিন্তু এখন পর্যন্ত আইনি জটিলতায় হ্যাঙ্গার নির্মাণ শুরু না হওয়ায় মেগা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কাজেই উল্লেখিত সময়ের মধ্যে হ্যাঙ্গার প্রকল্প শেষ নয়, এর কাজ শুরু হবে কিনা তা নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ কাজের জন্য সিভিল এভিয়েশন যে দরপত্র আহবান করেছে তার সঙ্গে সিপিটিইউর (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেনিক্যাল ইউনিট) আইনগত পার্থক্য আছে। সিপিটিইউ বলেছে, যৌথ উদ্যোগে কাজের ক্ষেত্রে মূল অংশীদার ছাড়া অন্যান্যা পার্টনারদের নূ্যূনতম ২৫ শতাংশ কাজ করার মতো আর্থিক যোগ্যতা থাকতে হবে। কিন্তু সিভিল এভিয়েশন যে দরপত্র আহবান করেছে তাতে এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। ফলে সর্বনিন্ম দরদাতা চিহ্নিত হওয়ার পরও কাজ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এপ্রিলের মধ্যে হ্যাঙ্গার নির্মাণ শেষ হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
খোদ সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান ১০ নভেম্বর সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) দেয়া এক চিঠিতে বলেছেন, হ্যাঙ্গার প্রকল্পের দরপত্র খোলার পর জয়েন্ট ভেঞ্চারে অংশ নেয়া ঠিকাদারদের মধ্যে লিড পার্টনার ছাড়া অন্য পার্টনারদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পরে এ নিয়ে জটিলতা নিরসনে তা সিপিটিইউতে পাঠানো হয়। কিন্তু সিপিটিইউও যে মতামত দিয়েছে তার সঙ্গেও সিভিল এভিয়েশনের ব্যাখ্যার ভিন্নতা দেখা দিযেছে। এ কারণে চলমান দরপত্র প্রক্রিয়া কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জটিল হয়ে পড়েছে। চিঠিতে তিনি আরও বলেন, চলমান দরপত্র যদি আবারও বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহবান করা হয় তাহলে হ্যাঙ্গার নির্মাণ বিলম্বিত হবে। এতে জাইকার অর্থায়নে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের মূল মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এতে উভয় কাজের সময় ও ব্যয় বাড়বে। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান তার চিঠিতে আরও বলেন, জয়েন্টভেঞ্চার কোম্পানির লিড পার্টনার ছাড়া অন্যদের যোগ্যতা ন্যূনতম ২৫ শতাংশের শর্ত আরোপ করা হলে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে না।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু হ্যাঙ্গার নির্মাণই শেষ হবে না, সে কারণে আগামী এপ্রিল থেকে কোনোভাবেই জাইকা মূল প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না। এই দীর্ঘসূত্রতায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যেতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করেছেন।jugantor.com/

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।