ক্রাইমবার্তা রিপোট: কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ইংরেজি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার দুপুর ১টায় শুরু হওয়া ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষার শুরুতেই কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মো. স্বপনসহ কয়েকজন নেতাকর্মী কলেজের বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব একাডেমিক ভবনের ৪১০৭ নম্বর কক্ষে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে নেয়।
এরপর বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সংবাদ শুনে কলেজ অধ্যক্ষ কাজী মনজুর কাদির দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাৎক্ষণিক কাউকে পাওয়া না গেলেও প্রশ্নপত্র মোবাইল ফোনসহ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া ওই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দেয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কুষ্টিয়ার অন্যতম বিদ্যাপীঠ সরকারি কলেজে এমন কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তা বোধগম্য নয়। তবে যার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ সেই ছাত্রলীগ সভাপতি মো. স্বপন দাবি করেন কলেজে গিয়েছিলাম ঠিকই, তবে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা সঠিক নয়। তাছাড়া আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে সহযোগিতা করেছি। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব একাডেমির ৪১০৭ নম্বর কক্ষে দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ইশরাত জাহান মনিকা বলেন, পরীক্ষার শুরুতে অনেক গ্যাদারিং থাকে। বহিরাগত কিংবা ছাত্রলীগের কেউ প্রবেশ করেছিল কিনা তা জানি না। ওই সময় আমি নিজেই প্রশ্নপত্র বিতরণ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। প্রশ্ন দিতে দিতে পেছনের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ দুই-তিনজন ছেলেকে দৌড়ে যেতে দেখলাম। তারা প্রশ্নের ছবি তুলে নিয়েছে কিনা বা অন্য কোনো কারণে দৌড় দিয়েছে কিনা, তা জানতে পারিনি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কাজী মনজুর কাদির বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর আমার কানে এলে আমি অন্য শিক্ষকদের নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। তবে তাৎক্ষণিক কাউকে খুঁজে পায়নি। অবশ্য প্রশ্নপত্র বিভিন্ন মোবাইল ফোনে দেখে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই বলে দাবি করেন। তবে কিভাবে কারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যারাই জড়িত থাক না কেন, তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষার বলেন, সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। মঙ্গলবার সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল হক রিয়াদকে এক অভিযোগে বহিষ্কার করেছি। এর পরদিন আবার একই শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা শুনছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মঙ্গলবার কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে একই পরীক্ষার ফরম পূরণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল হক রিয়াদকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। আর ওই ঘটনার ঠিক পরদিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. স্বপনের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠল।