রাণীশংকৈল প্রতিনিধি : ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল কোচল ও হরিপুর চাপসা সীমান্তে ১ ডিসেম্বর শুক্রবার ভারত ও বাংলাদেশের ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। প্রতি বছর পাথর কালীর মেলা বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই এই সাক্ষাতের সুযোগ সৃষ্ঠি হয়। কাঁটাতারের বেড়া তাদের আলাদা করে রাখলেও আবেগ পৌঁছে যায় দেশকালের সীমানা ডিঙ্গিয়ে। কোন নাটক বা সিনেমার স্যুটিং নয় বাস্তবতার হৃদয় বিদারক চিত্র ফুটে ওঠে আসে এখানে।
মেলা স্থলে কথা হয় জয়পুরহাট থেকে আসা মলিনার সাথে তিনি বলেন ১৬ বছর পর ছোট ভাইয়ের দেখা পেয়ে চোখে আনন্দ যেন বাঁধ মানছিল না ভাই। সে থাকে ভারতের জলপাইগুরি জেলার রায়গঞ্জ থানায়। অনেক দিন দেখা না হলেও আজ রক্তের টান তাদের ঠিকই হাজির করেছে কাঁটাতারের পরে।
বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর এবং ভারতে কোচবিহার, আসাম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কলকাতা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাই সাইকেল, অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, মিনিবাস যোগে মেলা স্থলে আসেন লাখো মানুষ। এর পর চলে প্রতিক্ষার প্রহর। শুক্রবার বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে সকাল ১০ টা থেকে চলে এ মিলন মেলা। সীমান্ত এলাকার স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা সীমান্তে আসেন। দির্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবার এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না কেউ। প্রতি বছর দু’দেশের স্বজনদের এ মিলন মেলা এখানে জন্ম দেয় এক বিরল দৃশ্যের।
লাখো মানুষ কথা বলেছে এই দিনে তাদের প্রিয় স্বজনদের সাথে। দুই দেশের সীমারেখা কাঁটাতার দিয়ে আলাদা করা হলেও আলাদা করা যায়নি তাদের ভালবাসার টান। দীর্ঘদিন পর স্বজনদের সাথে দেখা হওয়ায় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আবার কেউ প্রতিক্ষার প্রহর গুনে প্রিয়জনের দেখা না পেয়ে হতাশার গ্লানি নিয়ে বাড়ি যেতে হয় চোখের পানি ফেলে।
দু’দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সাধারণ মানুষ টাকা পয়সার অভাবে পাসপোর্ট ভিসা করতে পারেন না তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে। সারা বছর দুই দেশের মানুষ অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আগে থেকেই জানিয়ে দেয় স্বজনরা। কে কোথায় দেখা করবে। ভারতীয় অধিবাসীরা কাঁটাতারের পাশে এলে সেখানে বাংলাদেশেরও লাখো নারী পুরুষ সমবেত হয়।
সীমা রাণী ভারতীয় সীমান্তে ও শ্বাশুড়ী মালতি রাণী বাংলাদেশ সীমান্তে। নাতী নাতনি সবাই সবার সাথে কথা বলছে কান্নাজড়িত কন্ঠে । মালতি রাণী বলেন ৬ বছর পর জামাই ও মেয়ের দেখা পেলাম একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা থাকলেও পারছিনা। বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া। ইচ্ছে হচ্ছিল একটু ছুঁয়ে দেখার কিন্তু ছুতে পারিনি। জড়িয়ে একটু চিৎকার করে কান্না করি তবে হয়তো দির্ঘদিনের জমে থাকা কষ্টগুলো থেকে একটু রেহাই পেতাম বলছিলেন ভারতের মাকড় হাটে থাকা ছোট খালা জোসনাকে দেখতে আসা ফুলবাড়ির রফিকুল ইসলাম। পাথর কালীর মেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নগেন কুমার পাল জানান, কৃষকের ধান মাঠে থাকার কারনে এক সপ্তাহ পিছিয়ে এ মেলা করা হচ্ছে। ১৯৭৪ সালে পর উপজেলার সীমান্ত এলাকা পাক ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধিনে ছিল। এ কারনে দেশ বিভাগের পর আত্মীয় স্বজনেরা দু’দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সারা বছর কেউ কারো সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারেননা। অপেক্ষা করে থাকেন এই দিনটির জন্য।
থানা অফিসার ইনর্চাজ বলেন আইন শৃংখলার রক্ষার জন্য পুলিশ বাহিনী সেখানে দায়িত্ব পালন করছে।