ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:যশোরে প্রতি বছর বাড়ছে এইচআইভি রোগির সংখ্যা। সর্ব প্রথম ২০০৩ সালে এ জেলায় সাতজন এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। বর্তমানে তা বেড়ে দাড়িঁয়েছে ১০৯ জনে। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই ভারতফেরত অভিবাসী বলে জানা গেছে। যশোর জেলায় এ পর্যন্ত দশ হাজার ৭৯৯ জনের এইচআইভি পরীক্ষা করানো হয়েছে, যাদের মধ্যে এইচআইভি পজিটিভ ১০৯। এদের মধ্যে ২৯ জন চিকিৎসাধীন আছেন। যশোর জেলা এইডস কমিটির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। এইডস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্য আমার অধিকার’।এই মারণব্যাধি প্রতিরোধ এবং এর বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্বে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে এটি পালন শুরু ১৯৮৯ সালে।
যশোর জেলা এইডস কমিটির ফোকালপারসন মো. আবিদ হোসেন জানান, জেলায় ২০০৩ সাল থেকে সাতজন এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায় । যারা সবাই মারা গেছেন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ছিলেন চারজন পুরুষ এবং তিনজন নারী। এ পর্যন্ত দশ হাজার ৭৯৯ জনের এইচআইভি পরীক্ষা করানো হয়েছে, যাদের মধ্যে এইচআইভি পজিটিভ ১০৯। তিনি বলেন, এদের মধ্যে ২৯ জন চিকিৎসাধীন আছেন। চলতি বছর যশোর জেলায় ২৫৩ জনের এইচআইভি পরীক্ষা করানো হয়েছে। এদের মধ্যে পজিটিভ সাতজন।
আবিদ হোসেনের মতে, এইডস প্রতিরোধের বড় প্রতিবন্ধকতা হলো সচেতনতার অভাব। যশোরে ২০০৩ সাল থেকে কাজ শুরুর পর এইচআইভি পরীক্ষার জন্য যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো সংস্থা থেকে রেফার করা। ব্যক্তিগত বা অন্য কোনো উৎস থেকে পরীক্ষার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না। প্রচার-প্রচারণা না থাকা এর জন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন। আবার যারা আসছেন তাদের মধ্যেও অনেকে পজিটিভ অবস্থায় আত্মগোপনে চলে যান। এটি একটি ভয়াবহ প্রবণতা। তিনি জানান, যশোরে এইডস আক্রান্ত বা এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই ভারতফেরত অভিবাসী।
বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। বর্তমানে দেশের তিন হাজার ৬৭৪ জন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত। ঝুকিতে আছে আরো ১৪ হাজার ৩০০ জন।
২০১০ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতে প্রায় ২৫ লাখ এবং মিয়ানমারে দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষ এইডসে আক্রান্ত। চীনের তিন লাখ ৭০ হাজার মানুষ এইডস আক্রান্ত।
ইউএন এইডসের দেয়া তথ্যে জানাযায়, মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিগত নিপীড়ন শুরুর পর সেখান থেকে বিতাড়িত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৫৫ জন এইডস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর আগে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে দশজন এইডস রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আশিকুজ্জামান আশিক মনে করেন, যদি কোনো ব্যক্তি স্বাস্থ্য অধিকারের সঙ্গে আপস করেন তাহলে তার যে কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে। কিন্তু, আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার সুনিশ্চিত নয়। বিশেষ করে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যৌনকর্মী, মাদকসেবী এবং অভিবাসীরা স্বাস্থ্য অধিকার লাভ করতে পারেন না। অথচ, এরাই এইচআইভি/এইডস-এ আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ডা. আশিক বলেন, ‘এসডিজি অর্জনের সাথে মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি জড়িত। সে হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে জনস্বাস্থ্যের হুমকি হিসেবে এইডস মহামারীর সমাপ্তিসহ সবার স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিতকরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ওষুধ গ্রহণের চেয়েও জরুরি।’
একইসঙ্গে যারা এই রোগে আক্রান্ত তাদের সঠিক চিকিৎসা, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন ডা. আশিক।
Check Also
৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …