আলিফ হোসেন, তানোর
রাজশাহীর তানোরে গত মৌসুমে আমান কোল্ড স্টোরেজ (আমান সীড) থেকে উচ্চ মূল্য কেনা বীজ আলু রোপণ করে এলাকার শত শত আলুচাষি কৃষক সর্বশান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমান সীডের প্রতারণায় নিঃস্ব এসব কৃষকগণ ক্ষতিপূরুণের দাবিতে দীর্ঘ এক বছর ধরে হন্য হয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। বিগত ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সোমবার আলু বীজ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরুণের দাবিতে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ ও মানববন্ধন এবং পথসভা করেছেন। কিšত্ত দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এসব কৃষকরা এখানো ক্ষতিপুরুণের কোনো টাকা পায়নি। আমান সীডের প্রতারণার খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ কৃষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও আমান সীড নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে আমান সীডের ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুন্ন ও চরম ইমেজ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর বীজ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ঘটনা ধামাচাঁপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে আমান গ্র“পের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, তানোরে গত মৌসুমে আমান কোল্ড স্টোর থেকে দেয়া আলুবীজ রোপণ করা আলুখেতে কোনো গাছ গজায়নি। সাধারণ কৃষকরা উচ্চমূল্য কিনে এসব নিম্নমাণের আুল বীজ রোপণ করে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে। আলু বীজ আসল, নকল, নিুমাণের না ভেজাল সেটা বোঝার ক্ষমতা নাই সাধারণ কৃষকের। কৃষকের সরলতার সুযোগে আমান কোল্ড স্টোরের (সীড) একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারি রাঁতের আঁধারে ভেজাল ও নিম্নমাণের আলু বীজ আমান সীডের ব্যাগে রিপ্যাক করে কৃষকদের কাছে সরবরাহ করে প্রতারণা করছে। তাদের মণ ভূলানো কথায় সরল বিশ্বাসে সাধারণ কৃষকরা উচ্চমূল্য কিনে নিম্নমাণের এসব আলু বীজ রোপণ করে সর্বশান্ত হচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তানোরের চাঁন্দুড়িয়া ইউপির চকদমদমা গ্রামের রাজ্জাক আলী (৪০) জানান, আমান কোল্ড স্টোর থেকে তিনি ১৮০০ টাকা ব্যাগ (৪০ কেজি) দরে ৩০ ব্যাগ লাল আলু বীজ কিনে রোপণ করেছেন। কিšত্ত তার জমিতে রোপণ করা এসব বীজ থেকে কোনো গাছ গজায়নি। অথচ জমির ভাড়া, বীজ, সার, কীটনাশক. সেচ ও শ্রমিকের মজুরী দিয়ে ইতিমধ্যে বিঘা প্রতি তার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। রাতৈল গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম (৩৩) জানান, তিনি আমান কোল্ড স্টোর থেকে প্রতি ব্যাগ ১৮৫০ টাকা দরে ২৭ ব্যাগ আলুবীজ কিনে ৫ বিঘা জমিতে রোপণ করেন। কিšত্ত তার জমিতে কোনো আলু গাছ গজায়নি। বাজেআকচা গ্রামের জুয়েল সোনার (২৮), ইলামদহী গ্রামের কৃষক রাজু (৩৩) ৮ ব্যাগ, চাপড়া গ্রামের কৃষক সাইফুল (৪৩) ২০ ব্যাগ, আকবর আলী (৪৪) ৬০ ব্যাগ, আয়েশ উদ্দিন (৩৪) ২০ ব্যাগ, গোল্লাপাড়া গ্রামের অধির সরকার (২৯) ১২ ব্যাগ, সরনজাই গ্রামের কৃষক তাহের (৫৫) ১৮ ব্যাগসহ এলাকার শত শত কৃষক আমান স্টোরের আলু বীজ কিনে রোপণ করে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে। ইতিমধ্যে এসব কৃষকরা প্রতি বিঘায় গড়ে ২৫ হাজার টাকা করে লোকসানের মূখে পড়েছেন। তানোরের আমান কোল্ড স্টোরের এজেন্ট শাহিন আলী মাস্টার ও আয়েশ উদ্দীন অভিযোগ করে বলেন, কোল্ড স্টোরের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারি এসব নিম্নমাণের আলু বীজ রিপ্যাক করে আমাদের মাধ্যমে কৃষকের মধ্যে সরবরাহ করেছেন। তারা বলেন, এসব আলু বীজ কৃষকের কাছে সরবরাহ করে এখন তাঁরা নিজেরাই বিপাকে পড়েছেন। এব্যাপারে তানোরের আমান কোল্ড স্টোরের ম্যানেজার জালাল উদ্দীন বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত বছর আলু বীজ রোপণ করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সত্য, তবে ইতিমধ্যে কোম্পানি কমিটি গঠন করে ক্ষতিগ্রস্ত আলুখেত পরিদর্শন করে তাদের দেয়া প্রতিবেদন মত ক্ষতি পূরুণ দেয়া হয়েছে।
Check Also
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …