ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ইকবাল : হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে দেশব্যাপী বিরোধী নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেফতার, ধরপাকড় এবং মামলা দেয়ার হিড়িক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সরকারের এমন আচরণে বলছেন, আগাম জাতীয় নির্বাচনের অংশ হিসেবেই সরকার এটি করতে পারে। তারা বলছেন, সত্ত্বর জাতীয় নির্বাচন দেয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রেফতার, মামলা দিয়ে হয়রানি এবং পাইকারি হারে গ্রেফতার করে নির্বাচনের মাঠ পরিষ্কার করছে। তারা চাচ্ছে, যারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তারা যেন মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন অথবা পালিয়ে থাকে। এছাড়া যারা নির্বাচনে দলের পক্ষে মাঠে কাজ করবে সেসব ত্যাগী কর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের করে ভীতির সঞ্চার করা। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশে কোনো ধরনের আন্দোলন বা রাজনৈতিক তৎপরতা নেই। অথচ সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের যেভাবে গ্রেফতার, মামলা দিয়ে হয়রানি এবং নাজেহাল করছে তাতে সবার মনে প্রশ্ন জাগছে যে, তাহলে নির্বাচন কি আসন্ন? যদি তাই হয়, তাহলে সরকারের এতে খুশি হবার কারণ নেই। কারণ ক্ষমতাসীনরা যে কৌশল নিয়েছে সেটি অনেক পুরনো। দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হলে অবশ্যই বিরোধী নেতাকর্মীদের প্রচারণার সুযোগ দিতে হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবাধে প্রচারণার সুযোগ থাকতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার অথবা স্থগিত করতে হবে। অন্যথায় দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
সূত্র মতে, কয়েক মাস আগে দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছিলেন। সেই সময় আগাম নির্বাচন নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। তখন এটি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কিছু না বললেও এখন তারা আগাম নির্বাচনের কথা বলছেন। গত মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার নেতাকর্মীদের আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তিনি নেতাকর্মীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, যদি আগামী মার্চ মাসে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় তাহলে নেতাকর্মীরা সেজন্য প্রস্তুত কিনা। জবাবে তাকে জানানো হয়েছে, মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বত্র দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তখন তিনি দলের নেতাকর্মীদের আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তার একদিন পরেই সাংবাদিকরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার কাছে জানতে চান নির্বাচন কমিশন কি আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিবে সরকার। নির্বাচনের জন্য আমরা ৯০ দিন সময় পাবো। সরকার আগাম নির্বাচনের কথা বললে আমরা করতে পারবো, আমাদের সেই প্রস্তুতি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনের তিনি এসব মন্তব্য করেন।
জানা গেছে, আগামী মার্চ মাসের শেষের দিককে টার্গেট করে জাতীয় নির্বাচনের দিকে হাঁটছে সরকার। এজন্য তারা নির্বাচনী মাঠ পরিষ্কার করার কাজও শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে সরকার দেশব্যাপী বিরোধী নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করছে। কোনো রকম রাজনৈতিক তৎপরতা ছাড়াই গ্রেফতার অভিযান চলছে। প্রতিদিনই নির্বাচনের মাঠে তৎপর থাকবে এমন ত্যাগী নেতাদের মধ্য থেকে ৪০/৫০ জন করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তল্লাশী করা হচ্ছে। এছাড়া মিথ্যা মামলায় সিনিয়র নেতাদের সাজা দেয়ার আয়োজনও চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনগণকে আতঙ্কে রেখে বিএনপি আগামী দিনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তিনি বলেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অবশ্যই যাবে তবে হাসিনার অধীনে নয়। আমরা যেখানেই যাই জনগণ এখন একটি প্রশ্নই করে- ভাই আগামী দিনে আমরা কি ভোট দিতে পারবো? জনগণের মধ্যে এ আতঙ্ক তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। তাই জনগণকে আতঙ্কে রেখে আমরা নির্বাচনে যেতে পারি না। তিনি বলেন, সারাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের জন্য ভোট চাওয়া হচ্ছে দাবি করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সরকারি সব সুবিধা নিয়ে ভোট চাওয়া শুরু করেছেন, অন্যদিকে বিএনপিকে ছোট্ট একটা সমাবেশও করতে দেয়া হয় না। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে জনগণ তা ভালো করেই বুঝতে পারে। আগাম নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। এই সরকার যত আগে বিদায় নেবে ততই জাতির জন্য মঙ্গল। তবে তারা যেভাবে গ্রেফতার, ধরপাকড় ও মামলা দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে তাতে নির্বাচন আদৌ হবে বলে মনে হয়না। কারণ বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানি করে, গ্রেফতার করে, কারাগারে আটকে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবেনা।
সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন থেকে। চলছে ব্যাপক তোড়জোড়ও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ কিছুদিন থেকেই নৌকার পক্ষে ভোট চাইছে। দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নৌকা মার্কায় ভোট চাইছেন। তাদের এমন বক্তব্যে এখন একটি বিষয়ই আলোচনা হচ্ছে। সেটি হলো-দেশে কি নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে? বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারাও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। একইসঙ্গে দলটির নেতারা বলছেন, তারা ক্ষমতাসীনদের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেনা। এমনকি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনও হতে দিবেনা বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। কিন্তু এ ব্যাপারে জনগণ মনে হয় অনেকাংশেই নির্বিকার। হয়তো কিছুটা আতঙ্কিতও। তারা নির্বাচনের আগে কোনো হানাহানি দেখতে চান না। তারা চান ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল। দেশের সকল নাগরিক মুখিয়ে আছেন নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য। এজন্য তারা স্বপ্নে বিভোর। সবার আশা, অচিরেই দেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুস্থ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে দেশ পরিচালনায় তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পাবেন। নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্রের সত্যিকার বহিঃপ্রকাশ চান তারা। কিন্তু সরকার যেভাবে এগুচ্ছে তাতে দেশে আবারো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গতবার একতরফা নির্বাচন করতে পারলেও এবার বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন সহজ হবে না। তিনি বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনে বিএনপির ৯০০ প্রার্থীর খসড়া তালিকা প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির তিন-চারজন করে প্রার্থী আছেন। তিনি বলেন, বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অথবা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে বা হয়রানি করে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন করার যে স্বপ্ন দেখছে তা কোনদিন সফল হবেনা। তিনি বলেন, দেশে এখন কোন আন্দোলন বা রাজনৈতিক তৎপরতা নেই। অথচ সরকার বিরোধী নেতাকর্মীরদের পাইকারি হারে গ্রেফতার করছে। নতুন করে মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। এটি কোন শুভ লক্ষণ নয়।
আবারো ক্ষমতায় থাকতে সর্বস্তরে গ্রাউন্ড তৈরী করেই আ’লীগ প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সরকার ক্ষমতায় থাকতে সর্বস্তরে দলীয়করণ করেছে। সিটি মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ এখন সরকারি দলের দখলে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অর্থ পাচার মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। এখন রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বরাবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতাদের মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে, নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে আগাম নির্বাচন দিতে পারে। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনের মতো আবার সাজানো নির্বাচন করতে চাইলে দেশের পরিস্থিতি আবারো নাজুক হয়ে পড়বে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছলে, বলে ও কৌশলে যেভাবে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে একইভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয় নিতে চায়।
এ বিষেয় সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচনটিও কারো কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা। যেমনীভাবে ২০১৪ সালের তা পায়নি।
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি তো তার বক্তব্যে কোনো ফাঁক রাখেননি। কেউ যদি একে আগাম নির্বাচনের আভাস হিসেবে দেখে কলাপাতায় ঘি খাওয়ার স্বপ্ন দেখে, তাহলে তারা দেখতে থাকুক। এটা তাদের বিষয়। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো ভাবনা নেই।dailysangram
Check Also
সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …