ইউডিসি ব্যতিত দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় রেকর্ড পরিমাণ আর্থিক অনিয়ম হচ্ছে: টিআইবি

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা: ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) ব্যতিত দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় রেকর্ড পরিমাণ আর্থিক অনিয়ম হচ্ছে বলে তথ্য জানিয়েছে টিআইবি।

টিআইবি তার রিপোর্টে বলেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমির পরচা তুলতে ৫৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে গড়ে ৭৩৭ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। তবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) সেবাগ্রহীতাদের একই সেবা পেতে কোনো আর্থিক অনিয়মের শিকার হতে হয় না। সে ব্যাপারে টিআইবি প্রশংসা করেছে ইউডিসিকে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘নাগরিক সেবায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার: ভূমিকা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
রোববার দুপুরে ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে টিআইবি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালে আগস্ট পর্যন্ত এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণা প্রতিবেদনটি বলছে, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের কাছে সরকারি, বাণিজ্যিক ও তথ্যসেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে দ্রুত ও সহজলভ্য করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) একটি সম্ভাবনাময়ী উদ্যোগ। এ উদ্যোগের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে জমির পরচা উত্তোলনের আবেদন, প্রবাসী শ্রমিক নিবন্ধন, হজ নিবন্ধন, পাসপোর্টের আবেদনসহ বিভিন্ন সরকারি তথ্যভিত্তিক সেবা পেতে অর্থ ব্যয়, সেবার জন্য গমনসংখ্যা ও সময় হ্রাসের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইউডিসিগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যন্ত্রপাতি অচল, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অপর্যাপ্ততা ও ইন্টারনেটের ধীর গতি সত্ত্বেও এই সেন্টারগুলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
গবেষণায় উঠে আসে, জমির পরচা তুলতে আবেদনের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ের সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশকে চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে। আর থাকা-খাওয়া-যাতায়াত বাবদ গড়ে ৪৪৯ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে এবং তিনবার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া ৫৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে গড়ে ৭৩৭ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। অন্যদিকে ইউডিসি থেকে জমির পরচা আবেদনের ক্ষেত্রে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে, থাকা-খাওয়া-যাতায়াত বাবদ কোনো টাকা খরচ করতে হয়নি এবং দুবার ইউডিসিতে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া জরিপভুক্ত সেবাগ্রহীতাদের কেউ আর্থিক অনিয়ম, ঘুষ বা আর্থিক লেনদেনের শিকার হননি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াটা বেশ কয়েক বছর আগে থেকে নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও খুব বেশি তা বাস্তবায়ন হয়নি। এর কারণ ভূমি খাতে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তাঁরা লাভবান হন। এই গবেষণা পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দেয় যে ডিজিটালাইজেশন করতে পারলে মানুষ প্রতারণা বা হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে। যত দ্রুত সম্ভব সব সেবা খাতে ডিজিটালাইজেশন ত্বরান্বিত হবে, তত বেশি মানুষ অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে মুক্তি পাবে।
এ গবেষণায় পরিমাণগত ও গুণগত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। দেশের ১০৫টি ইউডিসিতে জরিপ চালানো হয়। পরিমাণগত তথ্যের ক্ষেত্রে খানা পর্যায়ে (৩০৩৫টি খানা), ইউনিয়ন পরিষদে সচিব (৯১ জন) ও ইউডিসির উদ্যোক্তাদের (১০৪ জন) মধ্যে পৃথক জরিপ পরিচালনা করা হয়। গুণগত তথ্যের ক্ষেত্রে মুখ্য তথ্যদাতা হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ৮২ জন সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
গবেষণায় উঠে আসে, ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে সিম মডেম ব্যবহারের আধিক্য থাকায় ইন্টারনেটের ধীরগতি দেখা যায়। এ কারণে অধিকাংশ ইউডিসিতে অনলাইন সেবা প্রদান বিলম্বিত হয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে সেবা ব্যাহত হয়। তবে জরিপ করা ইউডিসিগুলোতে সপ্তাহে ছয় দিন এবং প্রতিদিন নয় ঘণ্টা খোলা থাকে।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।