তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন: খালেদা জিয়া – প্রধানমন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে অসত্য বলছেন,সুরা নিসার’ আয়াত তরজমা করে আদালতে বক্তব্য শেষ করলেন খালেদা জিয়া

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা:জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় পবিত্র আল-কুরআনের সুরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতের বাংলা তরজমার পাঠের মধ্য দিয়ে বক্তব্য শেষ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্যে শেষে খালেদা জিয়া বলেন, আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ১৩৫ নং আয়াতের বাংলা তরজমা উল্লেখ করে। বাংলা তরজমা : “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কেই অবগত।” (৪ : ১৩৫)

মঙ্গলবার বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে শেষ দিনের বক্তব্যে খালেদা জিয়া পবিত্র কুরআনের এই আয়াত পাঠ করে আদালতে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ দেন।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে খালেদা জিয়া বলেন ‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং এ মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ার যোগ্য। আমি এই মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি এবং আপনার আদালতে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ নিরপেক্ষতার বিধান লঙ্ঘন করে কোনো রুপ দালিলিক প্রমাণ ছাড়া ১৫ দিনের মাথায় আমার বিরুদ্ধে একটি হয়রানিমূলক ও মিথ্যা রিপোর্ট দাখিল করেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি নিরপেক্ষ থাকলে এ রূপ অনুমান নির্ভর সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ থাকত না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অপপ্রয়াস হিসেবে অনুমান নির্ভর ও কাল্পনিক অভিযোগে এই মামলায় মিথ্যা বর্ণনায় আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমাকে, জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে হয়রানি করার প্রয়াস হিসাবে এ মামলাটি করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজের সঙ্গে আমি কোনোভাবে জড়িত নই।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন থাকার সময় কোনো মাধ্যমে আমার পদের অপব্যবহার করিনি। আমার পদের অন্যায় প্রভাব খাটাইনি।’
আমাদের পারিবারিক বাসস্থান ৬ মঈনুল রোড, এখানে আমার পরিবারের সবাই থাকতেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নয়। আমি আমার পদে থাকার সময় কারও মাধ্যমে আমার পদের প্রভাব খাটাইনি। আমি কাউকে কোনো অন্যায় আদেশ প্রদান করিনি। আমি আমার পদে থাকার সময় কারও কোনো অর্থের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হইনি। কাউকে অনৈতিকভাবে লাভবান করিনি। আমি আমার পদে আসীন থেকে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো আইন ভঙ্গ করিনি ও কোনো অপরাধ করিনি।’
আজ বেলা সোয়া ১১টা থেকে ২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষ হলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও একই দিনে সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

——————–0———————–

প্রধানমন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে অসত্য বলছেন: খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন,  প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে অসত্য কথা বলে বেড়াচ্ছেন। আর আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারাও অসত্য বলেছেন।মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন দেয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

বেলা সাড়ে ১১টার কিছু সময় পর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন বিএনপির প্রধান।
এর আগে আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন খালেদা জিয়া। এ সময় তার পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়।শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক।আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে দুটি আবেদন করা হয়। এগুলো হল- যুক্তিতর্ক স্থগিত করে আত্মপক্ষে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ এবং আত্মসমর্পণ করে জামিন।
খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ার পাশাপাশি যুক্তিতর্ক শুরুর জন্য আদালতের দেয়া আগের আদেশ বাতিল করে আত্মপক্ষ সমর্থনের অনুমতি দেন আদালত।আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এবং দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল।
এর আগে বেলা সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে বকশীবাজারে ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
গত ৩০ নভেম্বর দুর্নীতির এ দুই মামলায় খালেদা জিয়া হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। একই সঙ্গে দুই মামলার শুনানির জন্য এই দিন ধার্য করেন।
এর আগে চলতি বছরের ১২ অক্টোবর বিদেশে থাকাকালে খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত।
১৯ অক্টোবর দুই মামলায় আত্মসমর্পণ করে অস্থায়ী জামিন পান। এর পর থেকে মামলার ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন তিনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুদক।আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় অপর মামলা করা হয়।

ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মনগড়া সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অপপ্রয়াস হিসেবে অনুমান নির্ভর ও কাল্পনিক অভিযোগে এই মামলায় মিথ্যা বর্ণনায় আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমাকে, জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে হয়রানি করার প্রয়াস হিসাবে এ মামলাটি করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজের সঙ্গে আমি কোনোভাবে জড়িত নই।
তিনি বলেন, এ মামলায় কোনো সাক্ষী বক্তব্য দেয়নি যে আমি এ ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মিথ্যা এবং মনগড়া সাক্ষ্য দিয়েছেন আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। তিনি নিরপেক্ষ থাকলে এ রুপ অনুমান নির্ভর সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ থাকতো না।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।