০৬ ডিসেম্বর ২০১৭,বুধবার: ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। ডিপিই থেকে এ ধরনের একটি প্রস্তাব গত সপ্তাহে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ডিপিই মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল গতকাল নয়া দিগন্তকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত ৩০ নভেম্বর তিনি অধিদফতরে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতেও এ কথা জানান। প্রধান শিক্ষকেরা এখন বেতন স্কেলের ১১ ও ১২তম গ্রেডে (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন) বেতন পাচ্ছেন।
ডিপিইর সুপারিশ ও প্রস্তাব অনুসারে প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ ও ১১ গ্রেডে উন্নীত হলে সহকারী শিক্ষকদের সাথে বেতনবৈষম্য আরেক ধাপ (চার ধাপ) বৃদ্ধি পাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সহকারী শিক্ষকেরা। সহকারী শিক্ষকেরা এখন প্রধান শিক্ষকদের তিন ধাপ নিচে বেতন পাচ্ছেন। একে চরম বৈষম্য ও হতাশার বলে অভিহিত করেছেন তারা। শিক্ষক নেতারা জানান, সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে যারা মেধাবী তারা এ পেশায় থাকতে নারাজ। অনেকেই পেশা পরিবর্তনও করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া হলেও বেতন স্কেল সমমর্যাদার না করার ওই সুপারিশ ও প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে ডিপিই সূত্রে বলা হয়েছে। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান শিক্ষকদের উন্নীত বেতন স্কেলে প্রদান করে জিও রাজি করে।
এরপর আবারো বেতন স্কেল বাড়ানোর জন্য ডিপিই থেকে নতুন করে আরেক ধাপ বেতন স্কেল উন্নীত করার যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তাতে সহকারী শিক্ষকেরা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সহকারী শিক্ষক নেতারা ৩০ নভেম্বর গণশুনানিতে ডিপিইর মহাপরিচালকের কাছে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে নির্ধারণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে কি না জানতে চান। ডিপিইর ডিজি এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
প্রধান শিক্ষকেরা বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদা ভোগ করলেও সহকারী শিক্ষকেরা এখনো তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর স্তরে রয়ে গেছেন বলে জানান। তারা বলেন, প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা এবং বেতন স্কেল বাড়লেও সহকারী শিক্ষকেরা এখনো আগের অবস্থায়ই রয়ে গেছেন। এটাকে বড় ধরনের হতাশার কারণ বলছেন একাধিক সহকারী শিক্ষক নেতা।
অথচ কিছু দিন আগেও প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকেরা সমমর্যাদার (তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী) ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণের শুরু থেকেই সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল প্রধান শিক্ষকের একধাপ নিচে ছিল। ২৯ আগস্ট ২০০৬ সাল থেকে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রধান শিক্ষকদের দুই ধাপ নিচে নির্ধারণ করা হয়। এ ধারা এখনো বিরাজমান। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অষ্টম ও সর্বশেষ পে-স্কেলেও এ ধাপ বজায় রাখা হয়।
এ নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। গত ৪ বছর ধরে বেতন স্কেল প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে নির্ধারণের জন্য অব্যাহত আন্দোলন করার পরও মন্ত্রণালয় এবং ডিপিইর কোনো ধরনের উদ্যোগ না থাকায় বিষয়টি নিয়ে সহকারী শিক্ষক নেতারা ৩০ নভেম্বর এবং পয়লা ডিসেম্বর দফায় দফায় বৈঠক করেছেন ঢাকায়। সংশ্লিষ্টরা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সহকারী শিক্ষকদের সব কয়টি সংগঠন এ ব্যাপারে (প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে বেতন স্কেল নির্ধারণ) একমত ও একাট্টা।
এ দাবিতে তারা জোটবদ্ধ হয়েছেন এবং সম্ভাব্য আগামী ২৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচি শুরুর ব্যাপারে একমত ও চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৩০ নভেম্বর ও পয়লা ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতাদের যে বৈঠক হয়েছে তাতে শাসমুদ্দিন মাসুদের নেতৃত্বাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, তপনকুমার মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমাজ, শাহীনুর আল আমিন নেতৃত্বাধীন সহকারী শিক্ষক সমাজের অপর গ্রুপ, শাহীনুর আক্তার নেতৃত্বাধীন সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন, শিবাজী বিশ্বাসের নেতৃত্বাধীন সহকারী শিক্ষক পুল এবং রোজেল সাজু ও মিজানুর রহমান নেতৃত্বাধীন প্যানেল শিক্ষক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর আরো তিন-চারটি সংগঠন ওই দাবি ও কর্মসূচির সাথে এক মত পোষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ক্রাইমর্বাতাডটকম/নয়াদিগন্ত/আসাবি