বিশেষ প্রতিনিধি : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিষিদ্ধ এবং পরিবেশের উপর ভারসাম্য বিনষ্টকারী পলিথিন আবারো উৎপাদন ও বিপনন শুরু হয়েছে জোরেশোরে। পরিবেশ আইন লংঘন করে কিছু অসাধু ব্যবসয়ী ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পলিথিন উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। এতে পরিবেশকে আবারো হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কিছু ব্যবসায়ী বিপনন সুবিধার জন্য বেছে নিয়েছে এই পলিথিন এবং সাধারণ জনগণও তা সাদরে গ্রহণ করছে। এতে আবারো পরিবেশ ক্ষতিকারক, অপচনশীল পলিথিন পরিবেশের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রতিটি বাজারের দোকানদাররা পলিথিন ব্যবহার করছে। অথচ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা তাদের কাছাকাছি থাকে। তবুও তারা এই পলিথিন ব্যবহার রোধে কোনো প্রকার ভূমিকা নিচ্ছেন না। এতে করে এদেশের সচেতন মহল ধারণা করছে যে, প্রশাসন সকল ব্যবাসায়ীদের কাছ থেকে নিজেরা ফায়দা লুটে নিয়ে তাদেরকে সুযোগ করে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে অনেক ব্যবসায়ী দোকানদার পলিথিন বাজারজাত নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, প্রশাসনকে আমরা কোনো মাসোয়ারা দিই না। তবে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পলিথিন নিয়ে কয়েকদফা অভিযান চালিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে অভিযান না থাকার কারণে আমরা পলিথিন বিক্রি করি। পরিবেশের বিষয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, পরিবেশ দূষণ হয় ঠিকই তবে সরকার যদি পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, তবেই সম্ভব। তিনি আরও বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন, বিপনন এবং সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া একান্ত জরুরী।
অভিযোগ আছে লোকজন তাদের পলিথিন, আবর্জনা, ময়লা, মলমুত্র, ট্যানারীর বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে নদীতে নিক্ষেপ করে। বিগত দিনে এই নদীতে হাতমুখ ধোয়া ও গোসলসহ রান্নার কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতো। চরম দূষণের কারণে পানি ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি শিল্পশহর নওয়াপাড়া এলাকায় ভৈরব নদী খনন কাজ চলছে। পুনরায় যাতে নদী দূষণ না হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সকল মহলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সরকার চাইলেও পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব নয়
পলিথিনের ব্যবহার সরকার বন্ধ ঘোষণা করলেও ব্যবসায়ীরা কেন পলিথিনের ব্যবসা করছেন জানতে চাইলে বুধবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর চকবাজারের পলিথিন ব্যবসায়ীরা অকপটে এসব কথা বলেন।
চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের পলিথিন হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি হচ্ছে। হাতলওয়ালা পলিথিন নিষিদ্ধ করা হলেও এখানে দেদারসে বিকিকিনি চলছে। চকবাজারে চায়না পিপি পাউন্ড ৬০ টাকা, শাপলা পলি ১ হাজার ৪৫ টাকা, কর্ণফুলী পলি পাউন্ড ৬৫ টাকা, লক পলি ৪০০ টাকা, হাতলওয়ালা কালো ও সবুজ পলিথিন কেজি ১৩০ টাকা, ছোট পলি দোকানে ব্যবহৃত সবুজ ও গোলাপি রঙের মাঝারি সাইজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, কালো বড় ২০০ টাকা, আঠাযুক্ত বড় পলি বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৫০ টাকা পাইকারি দরে।
চকবাজারে পলিথিন কিনতে আসা এক ক্রেতা মিনহাজ বলেন, পলিথিনের দাম কম। বাসায় বিয়ের অনুষ্ঠান তাই পলিথিন লাগবে। কাগজের প্যাকেট কিনতে বেশি খরচ হবে। কাগজের চেয়ে কম মূল্যে পলিথিন পাওয়া যায় বলে এর ব্যবহারও বেশি।
পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ জানেন কিনা প্রশ্ন করলে ওই ক্রেতা বলেন, জানি, তবুও প্রয়োজনের তাগিদে ব্যবহার করতে হয়।
পলিথিন ব্যবসায়ী নাবিল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার বলেন, বাপ-দাদারা জন্ম থেকে পলিথিনের ব্যবসা করেছেন। সেই ব্যবসা কি আর সহজে বন্ধ করা যায়! সরকার ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ ঘোষণা করে। তখন ঘোষণা দেয় পলিথিন ব্যবসায়ীদের জন্য প্লাস্টিক কারখানার জায়গা দেওয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছরেও সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো জায়গা দিতে পারেনি। তাহলে যারা পলিথিনের ব্যবসা করে পরিবার ও কমর্চারীদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করছেন তারা কীভাবে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই এই ব্যবসা বন্ধ করে দেবে?
সরকার বিকল্প ব্যবস্থা করলেই পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হতে পারে
০৮ ডিসেম্বর ২০১৭,শুক্রুবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি