মীর খায়রুল আলম:
দেবহাটা উপজেলার আটশতবিঘা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এক যুগেরও বেশি সময় পার হলেও সরকারীকরণ হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অত্যান্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় মোট ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ হয়নি। প্রত্যন্তঞ্চালের মানুষের শিক্ষার আলো জ্বালাতে লক্ষ্যে ২০০৬সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয়রা। এরপর বিদ্যালয়টি জাঁকজমক ভাবে শিক্ষার আলো বিস্তার করে যাচ্ছিল সরকারীকরণ হওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু বহুবার আবেদন-নিবেদন, আন্দোলন করে দীর্ঘ দিনও সেট হয়নি। এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি সরকারিভাবে কোন ভবন।
সূত্রে জানা যায়, এলাকার বিদ্যানুরাগী ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা শিক্ষার প্রসারে নিজ উদ্যোগে এলাকার স্কুলটি স্থাপন করেন। কিন্তু সকল শর্ত পূরণ করে সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে ভাল ফলাফল অর্জন করে আসলেও এমপিওভুক্ত হয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান প্রতিষ্ঠানটি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের টিন সেটের ঘরগুলোরও বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া সংস্কারের অভাবে মরিচা পড়া ছাউনির টিন ভেঙে বর্ষাকালে পানি পড়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এমনকি শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বর্তমানে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের মাঠে গাছতলায় পাঠদান চলছে। এ সংকট নিরসন না হলে প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় গড়ে তোলার কাজটিও মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় অনেকে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে অন্য পেশায় চলে গেছেন আবার উপবৃত্তি সুবধা না পাওয়াতে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে। যার কারণে বিদ্যালয়টি ইতিমধ্যে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এদিকে, সকল শর্ত পূরণ করে সুনামের সাথে বিনা বেতনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে ভাল ফলাফল অর্জন করে আসলেও বহুবার আবেদন নিবেদন ও আন্দোলন করেও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি। বর্তমানে শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের মাঠে গাছতলায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করতে হয় অনেক সময়।
সদ্য চাকরি ছেড়ে যাওয়া এ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, দীর্ঘ এক যুগ ধরে বিনা বেতনে কাজ করেছি। পরিবারে অভাব-অনাটনের কারণে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছি।
বিদ্যালয়ের শুরু থেকে কর্মরত শিক্ষিকা স্বপ্না রানী মন্ডল জানন, তিনি বিদ্যালয় শুরু থেকে এপর্যন্ত বিনা বেতনে পাঠ দান করে যাচ্ছেন। তার বাড়ি হতে বিদ্যালয় প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলো রাস্তা একসময় হেটে প্রতিদিনই হেটে আসতে হত। এমনকি বৃষ্টির সময়গুলোতে ব্যাপক কাঁদা জমে থাকত রাস্তায়। তিনি অশ্রুশিক্ত চোখে আরো বলেন, বৃষ্টির মৌসুমগুলোতে আলাদা কাপড় নিয়ে আসতে হত। কেননা এত পরিমান কাঁদা ছিল যে, চলতে গেলে প্রতিনিয়ত যাওয়া আসার পথে কাঁদায় কয়েকবার গড়াগড়ি দিতে হত। তিনি কালের বিবর্তনে কাঁদার রাস্তাটি বর্তমানে পিচ ঢালা হয়ে গেছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি তাদের ভাগ্যের। সময় বাড়ার সাথে সাথে তার চাকুরীর মেয়াদ বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু বহুল প্রতিক্ষার জাতীয়করণ আজও হয় নি।
প্রধান শিক্ষক গোপিনাথ ঘোষ জানান, এ বিদ্যালয়টি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। আমি এখানে ৭ বছর ধরে আছি। বর্তমানে ৪জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ১৫৬জন ছাত্র-ছাত্র রয়েছে। ২০১২ সালে সরকার কর্তৃক ডিজি চাইলে আমরা সকল কাগজপত্র জমা প্রদান করি। ৩ দফায় দেশের প্রতিটি এলাকার বেসরকারি প্রাথমিকগুলো সরকারিকরণ হবে। বহু আশায় ছিলাম ১ম, ২য় অথবা ৩য় দফায় সরকারিকরণ হবে। কিন্তু সে আশাটি নিরাশায় পরিণত হতে বসেছে। উপজেলার ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৯টি সরকারিকরণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েগেছে। সরকারিকরণ না হওয়ায় সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের পাশের হার ও শিক্ষার মান ভালো হলেও উপবৃত্তিসহ নানা সুযোগ সুবিধার জন্য আশেপাশের বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রী চলে যাচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালটি সরকারিকরণ করে নতুন ভবন ও আধুনিককরণ করার দাবি জানান তিনি।
বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের টিন সেটের ঘরগুলোরও বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে মরিচা পড়া ছাউনির টিন ভেঙে বর্ষাকালে পানি পড়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ দানও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অচিরেই এ সংকট নিরসন না হলে এ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। যুগ ধরে বেতন বঞ্চিত ভূক্তভোগী শিক্ষকদের তাদের চরম দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে দ্রুততার ভিত্তিতে এমপিও ভূক্ত এবং একটি সময়োপযোগী ভবন নির্মানের আকুল নিবেদন জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিবের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
০৯ ডিসেম্বর ২০১৭,শনিবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি