‘বেগম রোকেয়া পদক’ প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী
ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:বেগম রোকেয়া পদক-২০১৭ পুরস্কার প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের বেগম রোকেয়া পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী, শিক্ষক শোভা রাণী ত্রিপুরা, গ্রাম বিকাশ সহায়তা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাসুদা ফারুক রত্না, চিকিৎসক ব্রি.জে (অব) সুরাইয়া রহমান এবং সাংবাদিক মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ (মরোণত্তর)।
শনিবার সকাল ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী এ পদক প্রদান করেন। এ সময় আলোচনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
নারী কল্যাণ সংস্থা ১৯৯১ সাল থেকে এই নামের একটি পদক প্রদান করা শুরু করে। সরকারীভাবে ১৯৯৬ সাল থেকে এই পদক প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সর্বশেষ রোকেয়া পদক পেয়েছিলেন আরমা দত্ত ও অধ্যাপক নাসিমা বানু (মরণোত্তর)।
১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করে মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া। সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ছিলেন তার পিতা। মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়াকে ঘরে আরবি ও উর্দু শেখানো হয়।
তবে তার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও তার বোন করিমুন্নেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান। ১৮৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সে ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে রোকেয়ার বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামে পরিচিত হন তিনি। মুক্তমনের মানুষ সাখাওয়াত হোসেনের উৎসাহে বেগম রোকেয়া সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। এর পাঁচ মাস পর ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ নামে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন বেগম রোকেয়া।
১৯১০ সালে সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলার ফলে স্কুল বন্ধ করে কলকাতায় চলে আসেন তিনি। এখানে ১৯১১ সালের ১৫ই মার্চ পুনরায় চালু হয় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। প্রাথমিক অবস্থায় স্কুলে ৮ জন ছাত্রী ছিল। চার বছরের মধ্যে তা বেড়ে ৮৪ জনে দাঁড়ায়। ১৯৩০ সালের মাঝে এটি হাই স্কুলে পরিণত হয়।
১৯১৬ সালে মুসলিম বাঙালি নারীদের সংগঠন ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করেন বেগম রোকেয়া। তার বারবার আবেদনের ফলেই ১৯১৯ সালে কলকাতায় ‘মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল’ স্থাপন করে সরকার। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বেগম রোকেয়া।
বেগম রোকেয়ার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে- মতিচূর (প্রবন্ধ, ২ খণ্ড: ১ম খণ্ড ১৯০৪, ২য় খণ্ড ১৯২২), সুলতানস ড্রিম (নকশাধর্মী রচনা, ১৯০৮), পদ্মরাগ (উপন্যাস, ১৯২৪), অবরোধবাসিনী (নকশাধর্মী গদ্যগ্রন্থ, ১৯৩১) প্রভৃতি। এছাড়া আছে অসংখ্য প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, ব্যঙ্গাত্মক রচনা ও অনুবাদ।
বেগম রোকেয়ার সাহিত্যকর্মে ফুটে উঠেছে সমাজের কুসংস্কার, অবরোধ প্রথার কুফল, নারীদের প্রতি সামাজিক অবমাননা, নারীর অধিকার। নারীশিক্ষার পক্ষে তার নিজস্ব মতামত, বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদও বাদ যায়নি তার লেখনীতে। তার রচনায় ফুটে উঠেছে এক প্রতিকূল সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের খণ্ড খণ্ড চিত্র।
০৯ ডিসেম্বর ২০১৭,শনিবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি