মুনসুর রহমান:রক্তক্ষয়ী নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাঙ্গালির শ্রেষ্ঠ অর্জন এই স্বাধীনতা। শুধুমাত্র পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরের নয়। হাজার বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল এই স্বাধীন বাংলাদেশ। আর এই স্বাধীন ভূখন্ড প্রতিষ্ঠার জন্য মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম, শের-ই- বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সহ জানা অজানা শত সহস্র নেতা শত শত বছরের মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন অবদান রেখেছেন।
পঞ্চাশের দশকেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। এবং বাঙ্গালিদের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করা বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ হয়ে উঠে। পাকিস্তান থেকে বাঙ্গালিদের বের করে এনে বাঙ্গালি জাতীয়তায় পূর্ব পাকিস্তানে একটি আলাদা দেশ প্রতিষ্ঠা করাই যেন বঙ্গবন্ধু ব্রতি হয়ে উঠে। সর্বশেষে বাঙ্গালির জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আর সে কথাগুলো সকলকে জানানোর জন্য ‘বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক লেখা:
বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই কারণে যে বঙ্গবন্ধুই বাঙ্গালিদের কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তাঁকে বাংলাদেশের স্থপতি বলা হয়। কারণ বঙ্গবন্ধুর মত আর কেউ কখনো এমন করে ভাবেনি বা ভাবতে পারেনি যে-বাঙ্গালির জন্য একটি স্বাধীন, সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের প্রয়োজন। আর তা বাস্তবায়নের জন্য পুরো জীবনটাই উৎসর্গ করেছিলেন ।
১৯৭০ এর নির্বাচনের পরবর্তী ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। তাঁর ভাবনা ছিল – বাঙ্গালীদের জন্য একটি আলাদা আবাসভূমি হবে। সেখানকার মানুষগুলি হবে অসাম্প্রদায়িক, বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, সমাজতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক সাম্যের ভিত্তিতে বিকাশ ও বিস্তৃত হবে অর্থনীতি, গণতান্ত্রিকতা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি ও কল্যাণে নির্মিত হবে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এই ভাবনার আলোকে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় একটি অবশ্যম্ভাবী স্বাধীনতার কথা জানান। এবং তিনি সুস্পষ্ট ভাবে জনসভায় বলেছিলেন “ ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলে। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাহ্ আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’’
অত:পর ২৫ই মার্চের দিবাগত রাতে ১২টা ১ মিনিটে তদানীন্তন ইপিআরের ওয়ারলেছে স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনার একটি অংশ ছিল। তাঁর অনুপস্থিতে কি ভাবে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালিত হবে তার পরিকল্পনাও পূর্বে তিনি দিয়েছিলেন। শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙ্গালিরা বিজয়ের পতাকা উড়াল বাংলাদেশে । বিশ্ব জানতে পারল রক্তস্নাত একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যূদয়ের কথা। লাল-সবুজ পতাকার কোলে জন্ম নিল একটি স্বাধীন দেশ- দেশটির নাম বাংলাদেশ।
লেখক : মুনসুর রহমান,সাধারণ সম্পাদক,বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখা।