গণধর্ষণের পর ছাত্রীহত্যা : পুলিশ হেফাজতে প্রধান আসামির মৃত্যু

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:বরিশাল নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোডস্থ ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্রী সাদিয়া আক্তারকে (২১) গণধর্ষণের পর হত্যা মামলার প্রধান আসামি সিরাজুল ইসলাম (২২) পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।

হাসপাতালের চিকিৎসাপত্র ও চিকিৎসকের তথ্য অনুযায়ী- তার শরীরে টর্চারের আঘাতের কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে তার মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ ডিসেম্বর সিরাজ বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওইদিন রাত আটটার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিরাজ পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার পুত্র।

সূত্রমতে, গত ৪ ডিসেম্বর সিরাজ ও তার সহযোগী হাফিজ আকনকে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ আব্দুল ওহাব। আটকের পর ৫ ডিসেম্বর সিরাজকে আদালতে সোপর্দ করার পর সে সাদিয়াকে গণধর্ষণ করে হত্যার পর লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এসময় আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায়। ৮ ডিসেম্বর সিরাজ বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত আটটার দিকে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাপাতালে ভর্তির পর শনিবার দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

সিরাজের মৃত্যু সম্পর্কে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শারীরিক আঘাতের কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল অমিন রোববার বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আসামি সিরাজুল ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলার আসামি। সে আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে- সাদিয়া আক্তার নামের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে আমাদের অফিসাররা তাকে এবং তার এক সহযোগীকে পিরোজপুর মঠবাড়িয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ায় অন্য কোনো বিষয় এরমধ্যে আসার প্রশ্ন আসে না। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। আর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

অপরদিকে কারাগার হাসপাতালের সহকারী সার্জন কর্তৃক শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণের পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে জেলের বাইরে সিরাজ আহত হয়েছে। হাসপাতালের মৃত্যুর প্রমাণপত্রেও শারিরীক আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নগরীর ডেফুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আলমগীর খানের মেয়ে সাদিয়া আক্তার ১৯ নভেম্বর বাসা থেকে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ২২ নভেম্বর কোতোয়ালী মডেল থানায় সাদিয়ার বাবা আলমগীর খান একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৪ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওহাব মঠবাড়িয়া পুলিশের সহায়তায় প্রধান অভিযুক্ত সিরাজ ও তার সহযোগী হাফিজকে গ্রেফতার করেন।

এসময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজ স্বীকার করে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাদিয়াকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন (১৯ নভেম্বর) তার আরেক সহযোগী বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আব্দুর রব হাওলাদারের ছেলে নাজমুল ইসলাম নয়নের সহায়তায় সাদিয়াকে মঠবাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে নয়টায় বড়মাছুয়া এলাকায় বলেশ্বর নদীর পাড়ে নিয়ে সাদিয়াকে তিনজন মিলে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে সাদিয়াকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর লাশ বলেশ্বর নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এখনও সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এনিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর কোতোয়ালী মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করা হলেও সিরাজকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়নি।

১০ ডিসেম্বর  ২০১৭,রবিবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।