ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:মাজহারুল মান্নান, রংপুর:রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশনের উম্মুক্ত টক শো’র শুটিংয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের কর্মীরা ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পর শুটিং শেষ করেন সংশ্লিষ্টরা। রোববার দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এই ঘটনায় নগরীজুড়ে ওই দুইপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টুয়েন্টি ফোর মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে নাগরিকদের ভাবনা বিষয়ে উন্মুক্ত টকশোর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করছিলেন সামিয়া জামান। টকশোতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু, বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা, বাসদের আব্দুল কুদ্দুস, এনপিপি’র সেলিম আখতার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু অংশ নেন।
শুটিং চলাকালে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সঞ্চালক দর্শকদের প্রশ্ন নেয়ার সময় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য সাইফুল ইসলাম মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলেন, আমি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখেছি, রংপুরে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জরিপে এগিয়ে আছে। ওনার প্রতীক লাঙ্গল। উনি জেতার সম্ভাবনা বেশি। তার কথা শেষ হতে না হতেই বিরোধিতা করেন নৌকা প্রতীকের সমর্থক মিঠু। এসময় তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলে সাথে সাথেই তার প্রতিবাদ জানান জাতীয় পার্টির মহানগর সেক্রেটারি এসএম ইয়াসির। এ নিয়ে মুহূর্তেই উভয়পক্ষের লোকজন জড়িয়ে পড়েন উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে। এক পর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি। চেয়ার ছোড়াছুড়ি। আতংকিত লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেন মাঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঙ্গল প্রতীকের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি এসএম ইয়াসির এবং মহানগর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল নিজ নিজ কর্মী সমর্থকদের থামানোর চেষ্টার করেন। খবর পেয়ে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
কোতয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) মোক্তারুল আলম জানান, টকশোর শুটিংয়ের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে আগে থেকে জানানো হয়নি। তবে হাতাহাতির ঘটনা জানতে পেরে আমরা সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার পর শান্তিপূর্ণভাবে টকশো শেষ হয়।
এ ব্যাপারে মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী এসএম ইয়াসির জানান, টকশোতে উপস্থাপক প্রশ্ন করতে বলেছেন। একজন দর্শক মোস্তফা ভাইকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন করার সময় তার পক্ষে বলেছেন। আমাদের নেতা সাথে সাথেই সেই দর্শকের মতামতের উত্তরে বলেছেন আপনি এভাবে বলতে পারেন না। কিন্তু তার পরেও নৌকা প্রতীকের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি যেভাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহুম্মদ এরশাদকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। তারপরেও আমার নেতাকর্মীরা ধৈর্য ধারণ করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এভাবেই নৌকা প্রতিকের প্রার্থী লোকজন নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগের তুষার কান্তি মণ্ডল জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। মাঠেই সমঝোতা হয়েছে। টকশো শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।
নৌকার প্রার্থীকে জরিমানা
আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টুকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ জানান, শনিবার রাতে পায়রা চত্বরে সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টুর মেয়র থাকাকালে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছিল। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রজেক্টরসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি জব্দ করে। একইসঙ্গে এসময় ঝন্টুকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন। একইভাবে নগরীর মাহিগঞ্জ খাসবাগ এলাকায় ঝন্টুর সমর্থনে পথসভা করার সময় ভোটারদের মাঝে খাবার বিতরণ করায় তাকে আরো তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আগামী ২১ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ১৯৩টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৭৭টি কক্ষে ভোট নেয়া হবে। এবার এই সিটিতে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪২১ ভোটার রয়েছেন। যা গত নির্বাচনের চেয়ে ৩৬ হাজার বেশি।
১০ ডিসেম্বর ২০১৭,রবিবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি