কোন পথে বিএনপি

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:    সরকারের কঠোর অবস্থানে বিএনপি কোন পথে হাঁটবে তা নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল দেখা দিয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংলাপ এবং সমঝোতাকে প্রত্যাখ্যান করায় এ বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। আবার বলা হয়েছে, নাকে খত দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসবে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি কোন পথে যাবে। এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলেও।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা  সাফ জানিয়েছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এটি চিরন্তন সত্য। তাই সময় এলে দেখা যাবে কার কঠোর অবস্থান কোথায় গিয়ে ঠেকে। আর এবার তো নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান একেবারে পরিষ্কার। তা হল, বিএনপি নির্বাচনে যাবেই। গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে নির্বাচন থেকে বিএনপিকে কেউ হটাতে পারবে না। তারা বলেন, সরকারি দল আওয়ামী লীগও বিষয়টি নিশ্চিত বুঝে গেছে। তাই তাদের এত গাত্রজ্বালা।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, সরকার বিএনপি ও আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে আবারও একটি একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে। মিথ্যা মামলায় চেয়ারপারসনকে সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। এজন্য সংলাপ বা সমঝোতার আহ্বানকে তারা প্রত্যাখ্যান করছে। বিএনপিকে সহিংসতার পথে ঠেলে দেয়ার ফন্দি আঁটছে। কিন্তু এবার আমরা তাদের পাতা ফাঁদে পা দেব না।

তিনি বলেন, বিএনপি বা খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে দেশে আর কোনো নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এই বার্তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব জায়গায় চলে গেছে। তাই সরকার যতই একতরফা নির্বাচনের চিন্তাভাবনা করুক তা সফল হবে না।

আগামী আন্দোলন ও নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি কেয়ারটেকার সরকার অথবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। এ দাবির পক্ষে যে জনসমর্থন তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সরকার সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলেও শেষ পর্যন্ত তারা সব দলকে নিয়ে সংলাপে বসতে বাধ্য হবে। কারণ এবার পরিস্থিতি আর ২০১৪ সালের পরিস্থিতি এক নয়। বিষয়টি ক্ষমতাসীনরাও উপলব্ধি করছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সরকার নানাভাবে বিএনপিকে সহিংসতার পথে ঠেলে দেয়ার চিন্তাভাবনা করলেও আপাতত সেই পথে হাঁটবে না তারা। হটকারী কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় নির্বাচন অবধি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় চূড়ান্ত করা হবে।

তাদের বিশ্বাস, সরকার যতই কঠোর হোক শেষ পর্যন্ত বিএনপির সামনে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সমঝোতা চেষ্টার নানা প্রস্তাব আসবে। সব সমঝোতার পরিবেশ ও প্রস্তাব প্রকাশ্যে আসে না। তবে সংকটের সমাধান করেই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। দলের মধ্যে কেউ কেউ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে বেশি দুর্ভাবনার ধুয়া তুলছেন।

কিন্তু হাইকমান্ড মনে করে, তাকে জেলে ঢুকিয়ে বিএনপি ভাঙার চেষ্টা কোনোদিন সফল হবে না। বরং বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে। এছাড়া সত্য যে বড়ই কঠিন। ইচ্ছে না থাকলেও সেই কঠিনকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে। সেটি সবার বেলায় সত্য। তারা বলেন, জনতার আদালতে যখন যার সময় শেষ হয়ে যাবে তখন তাকে করুণভাবে বিদায় নিতে হবে। এটিই ইতিহাসের শিক্ষা।

দলের কয়েকজন নেতা যুগান্তরকে জানান, সরকার একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা করছে। তারা আবারও একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাইছেন। কিন্তু এবার ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগকে গোল দিতে দেয়া হবে না। সরকার যত কঠোর হবে বিএনপিও ততই কৌশলী হবে। তবে সরকার শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় না এলে রাজপথকেই বেছে নেয়া হবে। সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন পেশার মানুষের সমর্থন নিয়েই এবার রাজপথের আন্দোলন হবে অভূতপূর্ব। যেটি বিএনপির আন্দোলন না হয়ে জনতার আন্দোলনে রূপ নেবে।

দলটির নেতাকর্মীরা জানান, অতীতমুখিতা বাদ দিয়ে ইতিবাচক ধারায় রাজনীতি শুরু করে বিএনপি। রাজনৈতিক বিপরীতমুখিতা বা সংঘাত-জ্বালাও-পোড়াও থেকে বেরিয়ে সমঝোতার দিকেই গুরুত্ব দেয়া হবে। এর অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার নানামুখী চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, সরকারবিরোধী জনমত তুলে ধরতে ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিভাগীয় ও জেলা সফরের চিন্তাভাবনা করছেন খালেদা জিয়া। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজার গেলেও সেখানে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি হাইকমান্ডে স্বস্তি ফিরে আসে। সড়কপথে বিভিন্ন জেলা বা বিভাগে সফরের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আরও উজ্জীবিত করার বিষয়ে দলের পরিকল্পনা আছে, যা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজে দেবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে তারা বিএনপিকে ভয় পাচ্ছে। ভয় থেকেই তারা নানা ধরনের উদ্ভট কথাবার্তা বলছে। কিন্তু আমরা তাদের কথায় হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সমঝোতাকেই আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সরকার যাই বলুক শেষ পর্যন্ত এ ইস্যুতে সমঝোতায় আসবে বলে আমরা মনে করি।

কিন্তু তারপরও সরকার সমঝোতায় না এলে এবার জনগণ তাদের ছাড় দেবে না। জনগণ তাদের ভোটাধিকার রক্ষায় এবার রাজপথে নামবে এবং তা আদায় করবে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি তাদের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আমরা কাজ করছি। উপযুক্ত সময়ে তা জাতির সামনে তুলে ধরবেন আমাদের চেয়ারপারসন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করি সরকার নির্বাচনকালীন ইস্যুতে সমঝোতা আসবে। কিন্তু সরকার যদি আমাদের নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি মেনে না নেয় তাহলে আমাদের রাজপথ ছাড়া তো যাওয়ার জায়গা নেই। সেক্ষেত্রে দাবি আদায়ে আমাদের আন্দোলন করতে হবে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই সে কর্মসূচি ঠিক করা হবে। কারণ বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া রাজনৈতিকভাবে আÍহত্যা করারই শামিল।

১১ ডিসেম্বর ২০১৭,সোমবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/যুগান্তর/আসাবি

Check Also

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল

র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।