অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃংখলাবিধির গেজেট প্রকাশ

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ ও অপসারণ সংক্রান্ত চাকরির শৃংখলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ হয়েছে। সোমবার বিকালে বহুল আলোচিত এ বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়।

এর আগে বিকাল ৪টার দিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃংখলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট ছাপা হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এক মানবাধিকার সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচারকদের শৃংখলাবিধি নিয়ে যেসব আপত্তি দিয়েছিলেন- তা বাদ দেয়া হয়েছে কি না।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়েছেন। এ কারণে বিধিমালা প্রণয়নে বিলম্ব হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিচারকদের চাকরির শৃংখলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে এ শৃঙ্খলাবিধি গেজেট করা হয়েছে। এ শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে। কিন্তু আমি আজকে আপনাদের বলছি, বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। একজন ব্যক্তি এটাকে রাজনীতিকরণ করার চেষ্টার কারণে এটা বিলম্বিত হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা গেজেটটা করতে পেরেছি। আজই গেজেটটা লিখিতভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।’

সাইবার ক্রামই ট্রাইব্যুনাল চালুর পর আজও নির্ধারিত কোনো এজলাস পায়নি। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ কবে নাগাদ হবে এবং প্রধান বিচারপতি না থাকার কারণে অন্য কোনো বিচারপতি নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘একজন প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তিনি কখন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন তা তিনি আমাকে বলবেন না। এটা আমিও বলতে পারি না।’

তবে বাংলাদেশের সংবিধানে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি, প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালন করতে পারেন। এতেই পরিষ্কার যে, তিনি বিচারপতি নিয়োগ দিলে বা তার পরামর্শে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিলে সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয় না।

মানবাধিকার সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় মানবাধিকার ২০০৯ সালে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তা আমি পুরো বিশ্বাস করি না। তবে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে বাড়াবাড়ি করেন, অপরাধ করেন। তবে এজন্য প্রত্যেকটি বাহিনী সব জায়গায় ইন্টারনাল তদন্ত করে। নালিশ আসা মাত্র সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌদজারি ব্যবস্থা নেয়া হয়। মানবাধিকার কমিশন যখনই যে কোনো বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমরা সেসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আনিসুল হক বলেন, ‘৭ লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। এটা কিন্তু মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী এ মানবতা দেখিয়েছিন।’

মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ১৬৯টি অভিযোগের তদন্তের ও ব্যাখ্যা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে যা বছরখানেক ধরে পেন্ডিং আছে। গত বছর এসব তদন্তের জন্য ওয়াদা করেছিলেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘এসব অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব ব্যাপারে আপনাদের ব্রিফ করা হবে।’

গতকাল (রোববার) রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। এর আগেও গেজেট প্রকাশে দফায় দফায় সময় নেয় সরকার পক্ষ। তারও আগে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর তলবও করেছিলেন আপিল বিভাগ। ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। ১২ দফার মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এ জন্য বারবার আদেশ দিতে হয়েছে আপিল বিভাগকে। এমনকি ২০০৪ সালে আদালত অবমাননার মামলাও করতে হয়েছে বাদীপক্ষকে। এরপর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করেন।

এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগ চার সপ্তাহ সময় দেন সরকারকে। এরপর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। কিন্তু তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে না হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করে আলাদা একটি শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করেন। গত ২ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি আপিল বিভাগ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ-সংক্রান্ত চারটি বিধিমালা সাতদিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ দেন। তবে এ সংক্রান্ত মামলাটি এখনও আপিল বিভাগে বিচারাধীন। ১২ দফা নির্দেশনার যেসব দফা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ রয়েছে।
১১ ডিসেম্বর ২০১৭,সোমবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।