সাদেকুর রহমান : সেই বেদনাঘন ১৪ ডিসেম্বর আজ বৃহস্পতিবার। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ঊনিশশ’ একাত্তর সালের এ দিনটি ছিল মঙ্গলবার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটে শীতার্ত এই দিনে। আমাদের জাতীয় জীবনের আরেক শোকাবহ দিন এটি। বিজয়ক্ষণে বাংলাদেশ তার বিশিষ্ট ও শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারায়। বিন¤্র শ্রদ্ধায় জাতি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে। এ উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, মৌন মিছিল, দোয়া ও প্রার্থনা সভা ইত্যাদি। এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এ দিন রেডিও শুনতে শুনতে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী তার স্ত্রী লিলি চৌধুরীকে ডেকে গভীর প্রত্যয়ে বলেছিলেন, ‘আর মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা বাকি আছে দেশ স্বাধীন হতে।’ কিন্তু ঘাতকরা তাকে স্বাধীনতার লাল সূর্য দেখতে দেয়নি। শুধু মুনীর চৌধুরীকেই নয়, বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জন করে যেনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য শত্রুরা নিখুঁত পরিকল্পনায় বেছে বেছে হত্যা করে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চর্চায় অগ্রবর্তী ব্যক্তিদের। ধীমান, অনন্য মনীষা সেসব ব্যক্তিত্বের প্রতি জাতির সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তাদের স্মরণে প্রতি বছরই ১৪ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
সেইসব ক্ষণজন্মা ব্যক্তিদের স্মৃতি স্মরণে রাজধানীর মিরপুরে নির্মিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধে শ্বেতপাথরে খোদিত রয়েছে তাদেরই অমরত্বের কথা- ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,/ভয় নাই, ওরে ভয় নাই-/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান,/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ কবিতার মতো করেই শহীদ বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। তবে তাদের হারানোর বেদনায় স্বজনসহ দেশবাসী আজো কাতর। তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ফুলেল ভালোবাসা জানাতে ভোর থকেই সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামবে সেদিনের সেই নারকীয় হত্যাকান্ডের স্মৃতিবিজড়িত রায়ের বাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিস্তম্ভে।
ইতিহাস বলে, একাত্তর সালে টানা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন শত্রুদের হাত থেকে জাতি পরম মুক্তির প্রহর গুণছিল, ঠিক তখনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর ঘাতকচক্রের হাতে প্রাণ হারান বাংলাদেশের মেধা ও মননের ধারক, প্রথিতযশা সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদগণ। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয়ের পূর্ব মুহূর্তে দেশকে মেধা, শিক্ষা, সংস্কৃতিশূন্য করার হীনমানসিকতা থেকেই ছেচল্লিশ বছর আগে এমনি একদিনের নীলনকশা অনুযায়ী ঠান্ডা মাথায় মানব সভ্যতার অন্যতম বর্বর ও কাপুরুষোচিত এই হত্যাকান্ড পরিচালিত হয়।
গা শিউরে ওঠা সেই দিনে অকল্পনীয় নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যা করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব (জিসি দেব), অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আ ন ম মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সাপ্তাহিক শিলালিপি পত্রিকার সম্পাদিকা বেগম সেলিনা পারভীন, ডা. আবুল খায়ের, ডা. রাশিদুল হাসান, ডা. ফজলে রাব্বী, ড. আবুল কালাম আজাদ, ডা. গোলাম মর্তুজা, ডা. ফজলুর রহমান, অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদেক, ড. ফয়জুল মুতী, আব্দুল মুক্তাদীর, সন্তোষ ভট্টাচার্য, আবুল বাশার চৌধুরী, সাহিত্যিক-সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ বুদ্ধিজীবীকে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঢাকার রায়ের বাজারসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে অনেকের গলিত লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। বাকিরা রয়ে যায় নিখোঁজ, অজ্ঞাত। স্বজনরা আজ আর তাদের প্রতীক্ষায় নেই, তবে বুকচাপা আর্তনাদ আর দুঃসহ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী। স্বাধীনতা লাভের পর দীর্ঘ সাড়ে চার দশকেও বুদ্ধিজীবী হত্যার কোন কিনারা আজো হয়নি। বুদ্ধিজীবীদের কে কোথায় কিভাবে শহীদ হয়েছেন তারও কোন কিনারা হয়নি। তাদের পরিবারবর্গও জানতে পারেনি প্রিয় এই মানুষগুলোর লাশ কোথায়? এ নিয়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হত্যা রহস্য উন্মোচন এবং দোষীদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবের মুখ দেখেনি।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তারা শহীদ হন এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। হানাদার বাহিনী তাদের পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে। তারা স্পষ্ট দেখে চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে- তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল।
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত কবি আসাদ চৌধুরী তার ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “১৪ ডিসেম্বর গবর্নর হাউজে গবর্নর ডা. মালিক, চরমপত্রের ভাষায় ‘ ঠেটা মালিক্যা’, মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এই বৈঠকের ব্যাপারে রাও ফরমান আলী এবং চীফ সেক্রেটারি মুজাফফর হোসেনের সায় ছিলো। মন্ত্রিসভার বৈঠক বসছে এগারোটায়, ভারতীয় মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি ওয়্যারলেসে সংবাদ ধরে ঠিক এগারোটায় যে রুমে বৈঠক বসেছিল সেখানে উপর্যুপরি রকেট বর্ষণ করে। বিমান হামলা বন্ধ হতে না হতেই চীফ সেক্রেটারি, পুলিশের আইজি এবং অন্যান্য কর্মকর্তা পালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মালিক সাহেব পদত্যাগ করে ঢাকায় আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রতিনিধি মিস্টার রেনড-এর কাছে আশ্রয় চাইলেন। ঐ দিনই মালিক দলবল নিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টালের (অধুনা বন্ধ পাঁচতারা হোটেল রূপসী বাংলা) নিরাপদ আশ্রয়ে হাজির হলেন। ডা. মালিকের এই সিদ্ধান্তে নিয়াজীর মনোবল আরো ভেঙ্গে যায়। নিয়াজী তখনও মার্কিন সপ্তম নৌবহরের প্রত্যাশায় বলছেন, ‘একেবারে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালাবো।’ ঢাকার বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে যেতে এবং হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য তখনও বেতারে (ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা) মানেকশ’র ভাষণ বার বার প্রচারিত হচ্ছে। নিয়াজী শর্তসাপেক্ষে আত্মসর্পণের প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে ধর্ণা দিচ্ছেন।”
এ দিন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীসহ ভারতীয় ১০১ কম্যুনিকেশনের একটি অংশ গাজীপুর জেলার শফিপুরের মৌচাকে পরাজিত করে পাকবাহিনীকে। যৌথ বাহিনীর জন্য দলটি সেদিন সাভার নবীনগরের বিকল্প পথ ধরে ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়েছিল। নবীনগরে ঢাকা-যশোর সংযোগস্থলে আসার পর যৌথবাহিনী হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ করেছিল। যৌথবাহিনীর একটি অংশ ১৫ ডিসেম্বর মিরপুর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৪ ডিসেম্বর লে. জেনারেল একে নিয়াজীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন।
এদিকে বিজয় অর্জনের প্রাক্কালে এদিন মুক্তিযুদ্ধের যৌথ কমান্ড মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে রাজধানী ঢাকা। দখলদার বাহিনীর সব কয়টি ডিভিশন ইতোমধ্যেই সেন্ট্রাল কমান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হানাদারদের উত্তর সেক্টরের ময়মনসিংহ ব্রিগেড ঢাকার পথে পশ্চাদপসারণ করলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকা পৌঁছাতে পারেনি। তারা জয়দেবপুরে আটকে পড়ে। মিত্রবাহিনীর অবস্থানের কারণে দখলদার বাহিনীর উত্তর-পশ্চিম সেক্টরের ১৬তম ডিভিশন কিংবা পশ্চিম সেক্টরের ৯ম ডিভিশন কারো পক্ষেই পশ্চাদপসারণ করেও ঢাকার ডিফেন্সে এগিয়ে আসার কোন পথ ছিল না। তাদের প্রতিটি ডিভিশন ইতোমধ্যে যৌথবাহিনীর আক্রমণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ইস্টার্ন কমান্ডের কিছু সৈন্য ঢাকায় আসতে পারলেও তাদের অধিকাংশ সৈন্য ইতোমধ্যে যৌথবাহিনীর হাতে বন্দী হয়। বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে একের পর এক পরাজয়ের সংবাদে দখলদারবাহিনী তখন দিশেহারা ও পরাজয়ের আশঙ্কায় ভীত এক বাহিনী।
এদিন মিত্রবাহিনীর কাছে খবর পৌঁছায়, চতুর্মুখী আক্রমণে দিশেহারা পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও হানাদার বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ১৪ ডিসেম্বর গবর্নর হাউসে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন। মিত্রবাহিনী এ বৈঠক পন্ড করার লক্ষ্যে ঢাকায় গবর্নর হাউসে বিমান হামলা চালায়। এ হামলায় গবর্নর হাউস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপায়ন্তর না দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত পূর্ব পাকিস্তান মন্ত্রিপরিষদ পদত্যাগ করে। এসময় চট্টগ্রামে দখলদার বাহিনীর কামানের অবস্থানসহ গ্যারিসন, ওয়্যারলেস স্টেশন, জ্বালানি ডিপো ও বন্দরসমূহের উপর ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্রমবর্ধমান বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে।
বিভিন্ন রণাঙ্গনে ক্রমাগত উড়তে থাকে বাংলাদেশের বিজয় পতাকা। এদিন শত্রুমুক্ত হয় ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুরের পুবাইল, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বৈদ্যের বাজার, বগুড়া জেলার শেরপুর ও শিবগঞ্জ থানাসহ জেলা শহরের একাংশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জ এলাকা, আক্কেলপুর ও পাঁচবিবিসহ জয়পুরহাট জেলা, যশোরের কেশবপুর, রংপুরের মিঠাপুকুর, বান্দরবান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া ও কুমিড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল প্রভৃতি এলাকা। এদিনই সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান পূর্বাঞ্চলীয় দখলদার বাহিনী প্রধান নিয়াজী ও গবর্নর ডা. মালিকের কাছে যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে এক তারবার্তা পাঠালে চূড়ান্তভাবে ভেঙ্গে পড়ে দখলদার বাহিনীর মনোবল।
এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি জাতির পক্ষে প্রত্যুষে মিরপুরস্থ স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যগণ এ সময় উপস্থিত থাকবেন। বিএনপি প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। দিবসটি উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়ের বাজার বধ্যভূমি ধোয়ামোছা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সকল প্রস্তুতি পূর্বাহ্নেই সম্পন্ন করা হয়েছে। জাতীয় দৈনিকসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশনসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ব্যবস্থা নিয়েছে।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় ওইদিন যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ভোর ৬টা হতে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বিকল্প সড়কে চলাচলের জন্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার ডিএমপি’র এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে সব যানবাহন আশুলিয়ার দিক থেকে বেঁড়ীবাধ দিয়ে মিরপুরের দিকে আসবে, সেসব যানবাহন নবাবেরবাগ ক্রসিং হতে বামে মোড় নিয়ে শাহআলী থানা রোড ব্যবহার করবে। যে সব যানবাহন মাজার রোড ক্রসিং দিয়ে শাহআলী মাজার সংলগ্ন এলাকা অতিক্রম করবে, সেসব যানবাহন টেকনিক্যাল মোড় হয়ে দারুস সালাম রোড ব্যবহার করবে। যেসব যানবাহন মিরপুর-১০ নম্বর হতে গাবতলীর দিকে যাবে, সেসব যানবাহন মিরপুর-১ নম্বর দারুসসালাম রোড হয়ে টেকনিক্যাল মোড় হয়ে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।
কর্মসূচি : সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সরকারিভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। এর পরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গৃহিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং ৭টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে স্বাধীনতার মহান স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। এছাড়াও সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সকাল সাড়ে ৯টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) গৃহিত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য রয়েছে সকাল সোয়া ৬টায় ভিসি ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান-প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে যাত্রা, বেলা ১১টায় ভিসি সভাপতিত্বে টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভা। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হবে।
এছাড়াও জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), জাতীয় পার্টি, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় জাদুঘর, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ’৭১, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি নিয়েছে।সংগ্রাম
Check Also
৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …