ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:রংপুর অফিস : আজ মঙ্গলবার মধ্যরাতে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হচ্ছে। তাই শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে প্রচার -প্রচারণার ডামা-ডোল নির্বাচন কমিশনের বেধে দেয়া নিয়মের মাঝে মিছিল, সভা, আর মাইকিংয়ের মাধ্যমে গোটা সিটি কর্পোরেশন এলাকা জুড়ে চলছে বর্ণাঢ্য প্রচারণা। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ভোটারদের মধ্যে। সকল স্তরের ভোটারদের প্রত্যাশা এবারের রংপুর সিটি নির্বাচনে প্রতীক নয় সৎ ব্যাক্তির হবে জয়। ভোটাররা সে লক্ষ্যেই প্রার্থী নির্বাচন প্রায় করেই ফেলেছেন। আগামী ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়বারের মত রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হতে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সর্মথকদের বহর নিয়ে। প্রচারণায় প্রার্থীদের পক্ষে নারী কর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা দেখা যাচ্ছে বেশি। এবারে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী লড়াই করলেও মাঠে প্রচারণায় ৩-৪ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদের প্রচারণা তেমন চোখে পড়ছে না। পুরো নগরী জুড়ে বইছে নির্বাচনী গরম হাওয়া। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। সেই সাথে সমর্থকদের মিছিল আর মাইকের প্রচারণায় সরগরম রংপুর সিটি। এ দিকে একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থীরা। প্রার্থীরা সভা সমাবেশের চেয়ে ভোটারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের গুরুত্ব দিচ্ছেন। সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াই হবে ত্রিমুখী। এ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, বিএনপি’র প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর মধ্যেই ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীরা মাঠে না নামায় এ সুযোগে অন্যান্য মেয়র প্রার্থী ভোটের মাঠ গোছালেও মেয়র প্রার্থী ঝন্টু এখনো মাঠ গোছাতে পারেনি। নেতা কর্মীদের অভিযোগ, তফসিল ঘোষণার পর থেকে ঝন্টু আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা কর্মীদের সাথে তেমন আলোচনায় বসেনি। একাই তার ঘনিষ্ঠ জনদের নিয়ে কাজ করছেন। নেতা কর্মীরা ঝন্টুর সামনে নৌকার কথা বললেও আড়ালে নয়। মহানগর যুবলীগ নেতা সিরাজুম মনির বাসার বলেন, সব স্তরের নেতা কর্মীরা যদি স্বতঃস্ফুর্তভাবে মাঠে কাজ করে তবেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত। মাঠ দখলে মরিয়া ঝন্টু বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ভালবেসে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন এর সম্মান রাখতে সকল নেতা কর্মীর উচিৎ ভেদাভেদ ভুলে নৌকার পক্ষে কাজ করা।
রংপুর সিটি নির্বাচনে জামাতের কোন প্রার্থী নেই। ২০ দলীয় জোটের বিএনপি’র প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার পক্ষে তারা মাঠে নিরবে কাজ করছে রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে। মহানগর জামায়াতের আমীর মাহবুবুর রহমান বেলাল বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন। নো-কর্মীদের দেখলেই পুলিশ গ্রেফতার করে তাই গাঢাকা দিয়ে নিরবে যতটা সম্ভব তারা নির্বাচনের কাজ করছেন বলে জামায়াত নেতারা জানান । মহানগর জামায়াতের অপর এক নেতা জানান যে যাই বলুক কেন্দ্রীয় জামায়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী রংপুর মহানগরীর প্রতিটি ওর্য়াডে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সক্রীয় ভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছে। মহানগর বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম মিজু বলেন, জামাতের অনেক নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না তবে ধানের শীর্ষের পক্ষে তারা কাজ করছেন। এদিকে বিএনপি’র প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর লোকেরা নির্বাচনী মাঠে সকল আচরণবিধি ও নিয়মকে পদদলিত করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করছে ভোটারদের মাঝে। ইসি ভয়মুক্ত ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি এখনও। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তা হলে ধানের শীষ জয়ী হবে। অপরদিকে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। নির্বাচনের মাঠ লাঙ্গলের দখলে আছে বলে জানান, জাতীয় পার্টির নেতা এস এম ইয়াছির।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা বলেন, হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা নির্বাচনে অংশ নিলেও তেমন প্রভাব পড়বে না। এদিকে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগ কাছে টানছে। কোন ষড়যন্ত্রই লাঙ্গলের বিজয় আটকাতে পারবে না রংপুরে লাঙ্গলের ভোট বিপ্লব ঘটবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ হাতি প্রতীক নিয়ে বসে নেই। তিনি বলেন, রংপুরের ভোটারা আমাকে গ্রহণ করেছে তাই আমি ভোটারদের কথা বিবেচনা করে রসিক নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে আছি থাকবো।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবারে কাউন্সিলার পদে ২১১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলার পদে ৬৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এসব কাউন্সিলার প্রার্থীগণও টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গোটা ওর্য়াড চষে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় ভাবে ভোটাররা এবারে সৎ, যোগ্য চরিত্রবান, দুনীর্তি ও মাদকমুক্ত ব্যাক্তি। বিশেষ করে মাস্তান ও সন্ত্রাসী নয় এমন ব্যাক্তিকেই তাঁরা কাউন্সিলার পদে নির্বাচিত করতে চান।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের রিটানিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার জানান, প্রার্থীরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন সে লক্ষ্যে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। রংপুর সিটি নির্বাচনে শঙ্কার কোনো কারণ নেই নির্বাচনী আচরণবিধি যে দলের প্রার্থীই ভঙ্গ করবেন,
কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এরই মধ্যে কয়েক মেয়র প্রার্থীকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
১৯ডিসেম্বর,২০১৭,মঙ্গলবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি