সরকারের সময় শেষ : মির্জা ফখরুল

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:‘চুরিতন্ত্র’ আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতই পন পন করে ঘুরতে থাকেন কোনো লাভ হবে না। যদি মনে করে থাকেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ করে দেশের মানুষকে বোকা বানাবেন, আবার ক্ষমতায় যাবেন, সেটা এদেশের মানুষ হতে দেবে না। আপনাদের সময় শেষ। আইয়ুব খান, এরশাদ মানুষকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি।

আজ বুধবার বিকেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব বলেন। রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।

সমাপনী বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শহীদ জিয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন, জাতির সামনে একটা নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন শহীদ জিয়া। সেই স্বপ্নটা ছিল পরিবর্তনের। অর্থাৎ আগের রাজনীতি নয়। মানুষের কল্যাণ এবং দেশের উন্নয়নের রাজনীতি। দারিদ্র্য দূর করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। সেই স্বপ্নকে গ্রহণ করে দেশের মানুষ দিনরাত কারখানা খোলা রেখে উৎপাদন করেছেন। কৃষক-কৃষাণীরা উৎপাদনের গান গেয়েছেন। স্কুলে স্কুলে ডাবল শিফটে পড়াশোনা হয়েছে। মানুষ নতুন স্বপ্নের পথ দেখতে পেয়েছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছিল এদেশের শত্রুরা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ সময় নয়, মাত্র সাড়ে তিন বছরে শহীদ জিয়া অর্থনীতির ভিত্তি রচনা করেছিলেন। সেই ভিত্তির ওপরেই আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অট্টালিকা নির্মিত হচ্ছে। আজকে মুখে মুখে বড় কথা বললেও সরকার অন্তসারশূন্য। এতগুলো ব্যাংক দিয়েছে। চারদিকে বন্ধু-বান্ধক সকলকে ব্যাংক দিয়েছে। এমনকি ম খা আলমগীরকেও ব্যাংক দিয়েছে। কিন্তু এমন অবস্থা হয়েছে আজকে তার ফার্মাস ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করে তাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। চুরির দায়ে এমডিকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার প্রত্যেকটা ব্যাংকে চুরি করে এমন অবস্থা করেছে যে, ব্যাংকের আমানতকারীরা বলছেন- ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি। ইসলামি ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক গিলে ফেলেছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত গেলার চেষ্টা করেছিল। এরা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। রেমিট্যান্সেও কমতে শুরু করেছে। অর্থনীতির মূল স্তম্ভ গার্মেন্টস সেক্টরও ধ্বংস। আজকে প্রশ্নপত্রও ফাঁস হচ্ছে। ক্লাস এম এ থেকে শুরু করে চাকরি, প্রথমশ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণির প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। সব ফাঁস। মানুষ যাবে কোথায়? এই পয়সাগুলো তারা নিজেদের পকেটে ঢুকায়। পদ্মাসেতু-মগাবাজার উড়ালসেতুর মতো সব মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে অর্থ লুট করে নিচ্ছে। এরা হচ্ছে বর্গী। যারা দেশ থেকে লুটে নিয়ে যাবে।

বিএনপিরসহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তৃতা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন প্রমুখ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এম এ মালেক, খন্দকার মাশুকুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর হাজী শফিকুল ইসলাম রাসেল ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করা। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও আজকে গণতন্ত্র আওয়ামী লীগের বাক্সে বন্দি। যারা আগেও গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। আজকে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ও লুট করেছে। জাতীয় সংসদে জনপ্রতিনিধি নেই। নির্বাহী বিভাগ দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করা হচ্ছে। বিচার বিভাগেও নিম্ন আদালতে সুবিচার নেই। এস কে সিনহাকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টকে পদদলিত করে আইনের শাসন ভেঙে ফেলা হয়েছে। সব অপকর্ম করে সরকার গুম খুন দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। এক যুগসন্ধিক্ষণে দেশ।

তিনি আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আজকে জনরব উঠেছে বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আগামীতে সরকার গঠন করবে। সেজন্য সরকার দিশেহারা। তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো খালেদা জিয়াকে ছাড়া ফের নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু খুব স্পষ্ট কথা- খালেদা জিয়াকে ছাড়া শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না হতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন আদায় করা হবে। এ জন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান ড. মোশাররফ।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের মহান বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। কথা বলা ও লেখার স্বাধীনতা নেই। আজকে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে। কিন্তু আমাদের ভয় পেলে চলবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে আবারো স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হবে। কেননা আমাদের চারদিক শত্রুপরিবেষ্টিত। আসলে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ঘোষণা বিএনপির কাছ থেকে ছিনতাই করেছে।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশের গণতন্ত্র ও অর্থনীতিকে মুক্ত করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আজকে স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে। তাদেরকে সেদিন দেশে পাওয়া যায়নি। তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সব আকাশেই কালো মেঘাচ্ছন্ন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলনের বিকল্প নেই। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে।

২০ডিসেম্বর২০১৭,বুধবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।