ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: রয়টার্স/ আনাদোলু : গাজায় দুই পা হারানো এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করায় ইসরাইলের সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাই কমিশনার জায়েদ রাদ আল হুসেইন। তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে ইসরাইলের দাবি, তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়নি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থার এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদেন বলা হয়, হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ইব্রাহিম আবু থুরায়েহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় একটি বিবৃতি দেন জায়েদ রাদ আল হুসেইন। তিনি বলেন, আবু থুরায়হ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর জন্য হুমকি ছিলেন তা কোনোভাবেই বলা যায় না। গাজায় কাজ করা জাতিসংঘের কর্মীরা জানিয়েছেন তার ওপর বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
গত ৬ ডিসেম্বর জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। এই ঘোষণায় ফিলিস্তিনিজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গাজা উপত্যকার হাজার হাজার মানুষ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। ফিলিস্তিন ছাড়িয়ে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও।
বিক্ষোভের ১০ দিনের মাথায় ১৬ ডিসেম্বর গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান আবু থুরাইয়াহ। নিহত হওয়ার দুই দিন আগে ইব্রাহিম আবু থুরাইয়াহ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রতি একটি ভিডিও বার্তা রেকর্ড করেছিলেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, জায়নবাদী দখলদার সেনাবাহিনীর প্রতি আমার বার্তা, এই ভূখ- আমাদের। আমরা এটার অধিকার ছেড়ে দেব না। যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের স্বীকৃতি প্রত্যাহার করতে হবে।
তবে জায়েদ বলেন, আবু থুরায়ার অক্ষমতা স্পষ্ট ছিল। যে গুলি করেছে তার সেটা না বোঝার কোনও কারণ নেই। এটা খুবই অমানবিক কাজ। তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, সেদিন ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে আবু থুরাইয়াসহ চারজন নিহত হন। আহত হন ১৫০ জন।
মৃত্যুর আগে আবু থুরাইয়াহ গাজা উপত্যকার ইসরাইল সীমান্তে প্রতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ২০০৮ সালের এপ্রিলে আবু থুরাইয়াহ কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে গাজার আল-বুরেইজ শরণার্থী ক্যাম্পে বসে ছিলেন। এ সময় ইসরাইলের বিমান হামলায় তিনি দুই পা ও একটি কিডনি হারান। ওই হামলায় আরও সাত ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও থেমে যাননি তিনি। তিনি (আবু থুরাইয়াহ) বাড়ি থেকে হুইল চেয়ারে করে গাজা শহরে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে মিছিলে যোগ দিতেন। ইসরাইলি স্নাইপারের গুলিতে নিহত হওয়ার সময়ও তার হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ছিল। ফিলিস্তিনি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠা আবু থুরাইয়াহর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষ গাজা শহরে উপস্থিত হয়েছিলেন।
বাড়ি থেকে ২৪ ফিলিস্তিনীকে ধরে নিয়ে গেছে ইসরাইলী বাহিনী : রাতের বেলা অভিযান চালিয়ে ফিলিস্তিনের দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ২৪ ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ফিলিস্তিনি কারাবন্দি সোসাইটির বরাত দিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা গতকাল বুধবার এই খবর জানায়।
ফিলিস্তিনি কারাবন্দি সোসাইটির এক বিবৃতিতে জানায়, মঙ্গলবার রাতে পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ ও নাবালুস শহরের বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী। সে সময় ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয় বলে খবরে উল্লেখ করা হয়।
জেরুসালেম কারাবন্দিদের পারিবার কমিটির প্রধান আমজাদ আবু আসাব বলেন, জেরুসালেমের কাছে আল ইসাবিয়া এলাকা থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘চিহ্নিত’ ফিলিস্তিনিদের খোঁজার অজুহাতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ব্যাপক ধর-পাকড় শুরু করেছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, ৬ হাজার ৪০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি এখন ইসরাইলের কারাগারে আটক রয়েছে।এর আগে সোমবার ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের সংগঠন প্রিজনার ক্নাব জানিয়েছিল, পশ্চিম তীর ও জেরুসালেম থেকে ৪৩০ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে ইসরাইল।
এর মধ্যে ২৩১ জন শিশু, ৯ জন নারী ও তিন জন আহত ফিলিস্তিনি রয়েছে। আর ৬ ডিসেম্বরের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ২ হাজার ৮০৯ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময়ে গাজা উপত্যকায় চিকিৎসা নিয়েছেন ৬২৪ জন।মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির বাইরে গিয়ে গত ৬ ডিসেম্বর জেরুসালেমকেই ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। ফিলিস্তিনে শুরু হয়েছে তীব্র বিক্ষোভ। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুসালেম ও গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে ইসরাইলি বাহিনীর। বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক ধর-পাকড় শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী।
২১ডিসেম্বর২০১৭,বৃহস্পতিবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/ রয়টার্স/আসাবি