ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের তাদের নির্ধারিত এলাকায় সাধারণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের সমস্যা দেখা এবং সেসব সমস্যা সমাধানে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস এডমিনিস্ট্রেটিভ একাডেমির ১০২ ও ১০৩ তম আইন ও প্রশাসনিক কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে শেখ হাসিনা বলেন, যে সব কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন, স্থানীয় জনসাধারণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা থাকতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়ান এবং তাদের আস্থা অর্জন করুন।’
তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শুধু ফাইলে সই করাই তাদের দায়িত্ব নয়, বরঞ্চ মানুষের কল্যাণে নিষ্ঠা ও সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবশ্যই আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা থাকতে হবে- উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন বিষয়ক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদিক এবং একাডেমির রেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে জনপ্রশাসনের ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। সরকার গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালীকরণের দিকে যে দৃষ্টি দিয়েছে কর্মকর্তারা নিরলসভাবে সেবা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার জীবন থেকে শিক্ষা পেয়েছি যে, মানুষের যত কাছে যাব তাদের জন্য তত বেশি ভালো কিছু করতে পারবো।
প্রশাসনের নতুন ক্যাডারদের মন থেকে মানুষের সমস্যা বোঝার আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে তারা তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা উদ্ধৃত করে বলেন, ‘মানুষের সেবা করার মত আনন্দের আর কিছু নেই।’
সরকার জনপ্রশাসনকে সুদক্ষ করে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা তাদের ভবিষ্যতে অগ্রসর হতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সামর্থ বৃদ্ধিও জন্য একটি প্রকল্পের কাজ চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ৯তলা বিশিষ্ট বিসিএস একাডেমি ভবন নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এবং তা ২০০১ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। বর্তমান সরকারের মেয়াদে এটি ১৫ তলা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সর্বশেষ পে-স্কেল গঠনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করেছে। তিনি বলেন, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের আন্তরিক উদ্যোগের স্বীকৃতিদানে বিভিন্ন পদক প্রদান ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং তাদের সৃজনশীল কার্যক্রমের উৎসাহ প্রদানে একটি উদ্ভাবনী তহবিল গঠন করা হয়েছে।
পদোন্নতি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মূল উদ্দীপক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ১৪৪ জন কর্মকর্তাকে সচিব পদে, ৮৪৩ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে, ১ হাজার ৬ শ ৭৩ কর্মকর্তাকে যুগ্ম-সচিব পদে এবং ১ হাজার ৯শ’ ৮১ জন কর্মকর্তাকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে। এর আগে এত পদোন্নতি জনপ্রশাসক কখনও দেখেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছর সরকার পরিচালনা কালে প্রতিটি অঞ্চলের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে দেশের একটি স্থিতিশীল ভিত্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু, ১৯৭৫ সালের পর সেই অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, সর্বজনীন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃত্ব পরিসেবা, অর্থনৈতিক উন্নতিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে বাংলাদেশ এখন একটি রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
২২ডিসেম্বর,২০১৭ শুক্রুবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি