ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ‘বিএনপি একটি অদ্ভূত দল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।অন্য দিকে আ’লীগকে ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে তুলনা করেছে বিএনপির প্রবীণ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। আজকে রাজধানীতে পৃথক দুটি সমাবেশে তারা এসব মন্তব্য করে।
‘বিএনপি একটি অদ্ভূত দল। তারা জিতলে বলে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা আছে। হেরে গেলে বলে আস্থা নেই। আপনারা তো রংপুরে থার্ড হয়েছেন। বুঝতে পারছেন না যে জনগণ আপনাদের আর চায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার দুপুরে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির নেতারা বিভিন্ন সময় বলে আসছে দেশে আইনের শাসন নাই। এ বক্তব্যের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, অনেক ছাত্রলীগের ছেলে আছে এখন জেলে। কারো কারো যাবজ্জীবন জেল হয়েছে। কারো ফাঁসি পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু বিএনপির আমলে তাদের দলের কোনো নেতাকর্মীর বিচার হয়েছে?
এ সময় রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিষয়ে সংবাদপত্রের সমালোচনা করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রংপুর নিয়ে কত রকমের লেখা হচ্ছে। কেউ কেউ আদাজল খেয়ে রাজনৈতিক কারণে নেমে দাঁড়িয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। সেটা আমরা বুঝি। ফার্স্ট পেজ, ব্যাক পেজ সরকারের বিরুদ্ধে যা লেখা যায়! কুমিল্লায় আমরা হেরেছি। কিন্তু গতবারের চেয়ে ৩৫ হাজার ভোট বেশি পেয়েছি, সেটা তো কেউ লেখেনি! যারা সমালোচনা করেন, তাদের কথা বলছি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, রংপুরে আওয়ামী লীগ মেয়র নির্বাচনে দ্বিতীয় হয়েছে। কিন্তু কাউন্সিলরে প্রথম হয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের ১৪ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, আরও ছয়জন স্বতন্ত্র কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করবে। আর বিএনপির সাতজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির দুজন। এসব লেখা হয় না। এসব না লিখে বলা হয়, আওয়ামী লীগ তলানিতে চলে গেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্কুল কমিটি করে সমালোচনা ডেকে আনার দরকার নেই। ছেলে-মেয়েরা পিঠে বই পুস্তকের বোঝা নিয়ে যেন মরুভূমির পথ বেয়ে চলছে, বাচ্চাগুলোকে দেখলে এমনই মনে হয়। তারপর আবার রাজনীতির আরেক বোঝা! দরকার নেই এসবের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কোমলমতি বাচ্চাদের কাজ পড়াশোনা করা। রাজনীতি না। কমিটি গঠন অন্ধের হাতে তীর-ধনুক দেওয়ার মতো একটি কাজ। এটা ছাত্রলীগের অজ্ঞতা এবং অভিজ্ঞতার অভাবে হয়েছে। এসময় তিনি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্যে করে এই স্কুল কমিটি দ্রুত বিলুপ্ত করার নির্দেশ দেন।ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সময় তারা মাথা নিচু করে ছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিকদের সাথে কথা কাটাকাটি করে চলে যান তারা।
তিনি বলেন, এ ধরনের আলোচনাসভাগুলো ঘরোয়া সেমিনার ধরনের না হওয়াই ভালো। এমন আলোচনা সভা বটতলায় হওয়া ভালো। কারণ, এমন মিলনায়তনে একটি হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটির নেতাকর্মীদের স্থান সংকুলান হয় না।
এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ২১ নভেম্বর মাধ্যমিক স্কুলে কমিটি তৈরি করতে সব সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের এই নির্দেশ পেয়ে বিভিন্ন স্কুলে কমিটিও হয়। এরপর পিরোজপুরে একটি স্কুলের ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি দায়িত্ব পেয়েই শিক্ষককে পেটায় এক ছাত্র।
–০—
অন্যদিকে ‘আজকে সরকার এই দেশে বিভাজন সৃষ্টি করছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও বিপক্ষের শক্তি বলে। এটা দলটির ঔপনিবেশিক চিন্তাধারা ফসল।’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির প্রবীণ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের ২১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ ও শহীদ জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মঈন খান বলেন, আজকে দুঃখের বিষয় একটি স্বাধীন দেশের সরকার তারা, তাদের কার্যক্রম দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা ওই ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতিনিধি। তারা (সরকার) তাদের ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার জন্য সেই ডিভাইড এন্ড রুল অনুসরণ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, তারা কেন এটা করছে? কারণ হচ্ছে,‘বিশ্বে যখন ঔপনিবেশিকতা বিস্তার করেছিল কয়েক শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক শক্তিরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে মানুষদের উপর খবরদারি করতো, তখন তারা একটি অস্ত্র ব্যবহার করতো, সে অস্ত্রের নাম ডিভাইড এন্ড রুল। অর্থাৎ এই বিভাজন। তারা সেখানকার জনগণকে দুটি – তিনটি ভাগে ভাগ করে দুর্বল করে দিত, যাতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঔপনিবেশিক শক্তিকে প্রতিহত করে স্বাধীনতা অর্জন না করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, যে দলটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জন্মই হয়নি সে দলটি কিভাবে স্বাধীনতার বিরোধী হয়? যে দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান, সে দলকে তারা (আওয়ামী লীগ) কিভাবে বলে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি? সেদিন বিএনপি নামে কেউ তো ছিল না।
ড. আব্দুল মঈন খান আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ঘটনার সেই সাইকোলজিতে কেনো তারা বিএনপিকে শত্রু হিসেবে ভাবে? এর কারণ হল আওয়ামী লীগের একটি সমস্যা হয়েছে, সে সমস্যাটির নাম হীনমন্যতাবোধ।
মঈন খান বলেন, যারা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্ত যারা পলায়নপর, ভীত, রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সীমারেখা পার হয়ে, লাফ দিয়ে অন্য একটি দেশে গিয়ে পড়েছিল কাপুরুষের মত তারা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিল?
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগের) এই হীনমন্যতাবোধের কারণ হল, রাতের গভীরে যখন চিন্তা করে যে, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বীরের মতো সামনে না গিয়ে কাপুরুষের মত পালিয়ে গিয়েছিল। এটাই হচ্ছে তাদের হীনমন্যতাবোধ। সে কারণেই তারা বিএনপিকে সহ্য করতে পারে না।’
সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঈশপের এক গল্পের উদাহরণ দিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে তিন বাটপাড়ের নির্বাচন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন হলো এক বাটপাড়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হলো আরেক বাটপার, আর প্রধানমন্ত্রীর আওয়ামী লীগ হলো তিন নম্বর বাটপার। তাই এদের কাছে ভালো কোনো নির্বাচন আশা করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
সভায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আমাদেরকে হয়তো আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। যেই মুক্তিযুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক দেবেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেই আন্দোলনে আমরা সবাই যেন শরিক হয়ে খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে পারি।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটর সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের প্রচার সম্পাদক লায়ন সাইফুল ইসলাম সেকলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবদীন প্রমুখ।