ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট: উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের দেয়া রায় বাতিল চেয়ে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন দাখিল করা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আজ সকালে ৯০৮ পৃষ্ঠার এ রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়। আবেদন দাখিলের পর এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ব্রিফ করেন। এটর্নি জেনারেল বলেন, এ আবেদন বিষয়ে কবে শুনানি হবে তা আদালতের এখতিয়ার। রায় রিভিউতে আপিলে দেয়া রায়টি বাতিল চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আবেদনে ৯৪ টি গ্রাউন্ডস পেশ করা হয়েছে। বিগত ২ মাস নিরলস শ্রম দিয়ে একটি আইনজীবী প্যানেল এ আবেদন প্রস্তুত করেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম জানান, আপিলে দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে সংসদ সদস্যের নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করা হয়েছে, কোড অব কন্ডাক্ট করা হয়েছে তা এখন বাতিল চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে জাতীয় সংসদ সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদে ফিরে যেতে চায় সেখানে আদালতে এর বিপরীতে কোনো আদেশ বা রায় দিতে পারে না। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আলোকে এখনো আইন প্রণয়ন হয়নি। আইন প্রণয়নের পর বুঝা যাবে-আদালতের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে কি-না। তিনি বলেন, সংসদই বিচারপতি অপসারণ করবে তা কিন্তু না। কোনো বিচারপতি বিষয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে তা সংবিধানের ৯৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তদন্ত কমিটি তদন্ত করবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে-তা সংসদে যাবে এবং দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে তার সুরাহা হবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত না হলে সংসদে উত্থাপনের কোন সুযোগ নেই।
এটর্নি জেনারেল বলেন, কোড অব কন্টাক্ট করবেন রাষ্ট্রপতি। ষোড়শ সংশোধনী মামলায় কোড অব কন্ডাক্ট-এর কোনো প্রসঙ্গই ছিল না। প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো করে কোড অব কন্ডাক্ট তারা করেছেন। আমরা এখন তা বাতিল চেয়েছি। জিয়ার আমলে সামরিক ফরমান দিয়ে যে বিধান করা হয়েছে-তা আমরা বাতিল চেয়েছি।
এ মামলার শুনানিতে বিদেশী আইনজীবী চেয়ে বার কাউন্সিলে আবেদন করা প্রসঙ্গে এটর্নি জেনারেল বলেন, যারা এ আবেদন করেছেন তারা দেশদ্রোহী। আমাদের দেশে ৫০ হাজার আইনজীবী রয়েছেন। দেশের আইনজীবীদের প্রতি তাদের আস্থা নেই। কোনো দেশের সংবিধান নিয়ে উত্থাপিত মামলায় বিদেশী আইনজীবী দিয়ে শুনানি কোথাও হয়েছে কি-না তা জানা নেই। যারা এ আবেদন করেছেন তারা না বুঝেই তা করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। রিভিউতে রায় নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ ২ মাস ধরে অনেক পরিশ্রম করে এ আবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
ব্রিফিং-কালে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকিরসহ অন্যান্য আইন কর্মকর্তাগনও উপস্থিত ছিলেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে ৭৯৯ পৃষ্ঠার আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় পর্যালোচনা ও রিভিউ করতে এটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করেছে। এ কমিটি রায়টি পর্যালোচনা করে রিভিউ আবেদন তৈরি করেছেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিলের রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। এরপর ১১ অক্টোবর রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার কথা জানান এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
রায় প্রদানকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগষ্ট প্রকাশ করা হয়। গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপক্ষে আনা আপিল খারিজ করা হয় (বাই ইউন্যানিমাস ডিসিশান দ্যা আপিল ইজ ডিসমিসড)।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের ১৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গত বছর ১১ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ গতবছর ৫ মে বিষয়টির ওপর সংক্ষিপ্ত রায় দেয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য ছিলেন- বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। রায়টি লিখেছেন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের অপর বিচারপতি কাজী রেজাউল হক। তবে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আরেকটি রায় দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের রুলস অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে যে রায় দেওয়া হয়, সেটাই চূড়ান্ত হবে।
এক রিটের প্রেক্ষিতে কেনো ষাড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হবে এ মর্মে রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেয় হাইকোর্ট।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আলোকে বিচারপতি অপসারণের জন্য একটি খসড়া আইন প্রস্তত করা হয়েছে। অসদাচারণের জন্য সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’-এর খসড়ার গতবছর ২৫ এপ্রিল মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দেয়। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪-এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করে।বাসস
Check Also
বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন
দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …