আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে সাতক্ষীরা সহ উপকুলীয় অঞ্চল সমূহ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। হুমকির মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও জীব বৈচিত্র। চরম আকারে হ্রাস পেয়েছে কৃষি উৎপাদন। বিলুপ্ত হয়েছে ৬০ প্রজাতির মাছ ও অসংখ্য প্রজাতির পশুপাখি। কর্মসংস্থানের অভাবে এ জেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। শ্যামনগর,কালিগঞ্জ,আশাশুনি,তালার নিন্মাঞ্চল বছরের বেশির ভাগ সময়ে জলাবদ্ধা থাকে। এসব অঞ্চলের অন্তত্য পাঁচ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে থাকতে হয় বছরের বেশির ভাগ সময়ে। কৃষি জমি হ্রাস পেয়েছে উল্লেখ যোগ্য হারে। কৃষি জমিতে নোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষের ফলে কৃষির ক্ষেত সমূহ চরম আকাওে হ্রাস পেয়েছ। ফলে বছরের বেশির ভাগ সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়ছে কয়েক লক্ষ কৃষক। অনেকে কাজের সন্ধানে,দেশের অন্যান্য জেলা সমূহে পাড়ি জমাচ্ছে।
২০ লক্ষ মাুষের এ জেলাতে প্রায় ১০ লক্ষ লোক কর্মহীন থাকতে হচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয় ও নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে না উঠায় এ জেলা দিন দিন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
সূত্র মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর ক্ষতিগ্রস্থ জেলা সমূহের মধ্যে অন্যতম সাতক্ষীরা।
বিশ্লেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আগামী ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে দেশের উপকূলীয় জেলা সমূহ এবং দ্বীপ জেলা ভোলা ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া পুরোপুরি সাগর গর্ভে বিলিন হয়ে যাবার আশঙ্খা রয়েছে। সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ১০০ সেঃ মিঃ বাড়লে পানির নিচে তলিয়ে যাবে ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চল, পরিবেশ শরণার্থী হবে দু’কোটি মানুষ। শতকরা ২৯ শতাংশ নিচু এলাকা বন্যার ঝুকি বাড়বে। পরিসংখ্যান মতে, গত ৩৩ বছরে বাংলাদেশের কৃষি জমি কমেছে ১ কোটি ১৯ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর।
এ হিসেবে প্রতি বছর গড়ে ৬৫ হাজার হেক্টর আবাদী জমি কমছে। এই হারে কমতে থাকলে আগামী ২০ বছর পর দেশে কৃষি জমির পরিমাণ দাড়াবে ৫০ হাজার হেক্টরে। এক সময়ের কৃষি অধ্যুষিত উপকুলীয় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলে ষাটের দশকে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে গোটা এলাকা কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটে। সবুজ গাছপালায় উপকূলীয় এলাকা পরিণত হয় মিনি অরণ্যে। ঐ সময় প্রতিটি বাড়িতে ছিল গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান। এলাকার চাহিদা পুরণ করে উদ্বৃত খাদ্য শস্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। এক পর্যায়ে ৮০’র দশকে এ অঞ্চলে শুরু হয় পরিবেশ বিধ্বংশী লবণ পানির চিংড়ি চাষ। বর্তমানে উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর, দেবহাটা, আশাশুনি,খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, রূপসা, বাগেরহাটের শরণখোলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, মংলায় প্রায় দেড় লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে লবণ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয় ও লবণ পানির আগ্রাসনে এ অঞ্চলে চরম আকারে হ্রাস পেয়েছে কৃষি জমি। গত দু’দশক ধরে রয়েছে খাদ্য ঘাটতি। ষাটের দশকে নির্মিত বাঁধগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত জোয়ারের উপচে পড়া পানিতে প্লবিত হচ্ছে বিস্তৃীর্ণ এলাকা। অসংখ্য নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
শুধুমাত্র গত বছরেই বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরা সহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়ে। সুপেয় পানির রয়েছে চরম সংকট। বিচরণ ক্ষেত্র ও গো খাদ্যের অভাবে হ্রাস পেয়েছে গবাদি পশু। গাছ-পালার অভাবে জ্বালানী সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
আবাসস্থল সংকটের কারণে ময়না, টিয়া, ঈগল, দোয়েল, শ্যামা, ঘুঘু সহ অসংখ্য পাখি বণ্য প্রাণী এবং অনেক উভচরপ্রাণী বিলুপ্ত প্রায়। বিলুপ্ত হয়েছে শৈল, টাকি, বাইম, মলা, চেলা সহ ৬০ প্রজাতির সাধু পানির মাছ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে উপকূলীয় অঞ্চল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ও উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ সহায়ক টেকসই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করার লক্ষে গতকাল থেকে ঃ শ্যামনগর উপজেলা ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে ৩ দিন ব্যাপী জলবায়ু মেলা। মেলার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ এস,এম,জগলুল হায়দার। জলবায়ু সৃষ্ট পরিবেশের ক্ষতিকর দিক ও তার ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয় পদক্ষেপ নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে মেলাতে। মেলার ১ম দিনে বর্ণাঢ্য র্যালী,জলবায়ু সংলাপ,লাঠি খেলা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।মেলা আগামী ২৬ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …