ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, শুধু কর্মকর্তা কর্মচারীরাই নয়, মন্ত্রীরাও দুর্নীতি করে, তাই ঘুষ না নিতে বলার সাহস আমার নাই। শিক্ষা মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হলো-বর্তমান সরকার আত্মস্বীকৃত চোর ও দুর্নীতিবাজ। আজ পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, শুধু কর্মকর্তা কর্মচারীরাই নয়, মন্ত্রীরাও দুর্নীতি করে, তাই ঘুষ না নিতে বলার সাহস আমার নাই।
রোববার শিক্ষা ভবনের পরিদর্শন ও নিরীক্ষণ অধিদপ্তরে ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থার উপর এক প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়া খাবেন, সহনশীল হইয়া মানে এই নয় যে আপনারা ঘুষ খাইয়েন না, এটা অর্থহীন কথা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘খালি যে অফিসাররা চোর তাই না, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর, এই জগতে এরকমই চলে আসতেছে।’
বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি কমেছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, সব কার্যক্রম ডিজিটাল হলে দুর্নীতি আরো কমে আসবে। এর আগে ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থার উপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মাঝে লেপটপ ও সনদ বিতরণ করেন শিক্ষামন্ত্রী।হ্ন
————-0—————–
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত সরকার আত্মস্বীকৃত চোর ও দুর্নীতিবাজ: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হলো-বর্তমান সরকার আত্মস্বীকৃত চোর ও দুর্নীতিবাজ। দেশে যে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে সেটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যে জাতির হৃদয়ের স্পন্দনকে থামিয়ে দেয়ার সামিল। দেশে বিদ্যমান নৈরাজ্যকর অমানিষার মধ্যে তাঁর এই বক্তব্য দেশের জন্য আরো ভয়াবহ উদ্বেগ, ভয় ও বিপদের কারণ হতে পারে।
রোববার শিক্ষা ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন “মন্ত্রীরা দুর্নীতি করে, শুধু যে অফিসার চোর তাই না মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর, তাই ঘুষ না নিতে বলার সাহস আমার নাই”। এসময় শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়া খাবেন, সহনশীল হইয়া মানে এই নয় যে আপনারা ঘুষ খাইয়েন না, এটা অর্থহীন কথা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, দেশের শিক্ষামন্ত্রীর যদি এই বক্তব্য হয়, তাহলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা সততা, নৈতিকতার পাঠ কোথায় নেবে ? শিক্ষামন্ত্রী এক ভয়ঙ্কর বার্তা পাঠালেন শিক্ষাঙ্গনে-তাঁর বক্তব্যে এটাই ফুটে উঠছে যে, ছাত্র-ছাত্রীরা তোমরা নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ এবং ন্যায়বোধের বিবেকশাসিত উন্নত মানুষ হওয়ার বদলে তোমরা সহনীয় মাত্রায় দুর্নীতির পাঠ নিতে শেখো, তাহলেই তোমাদের সাফল্য আসবে।
তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর কথায় মনে হয়-সৃজনশীল, সৌম্য, সুশিক্ষিত মানুষ হওয়ার বদলে ছাত্ররা বখাটে হোক। তাঁর এই বক্তব্যে আরো প্রতীয়মান হয় যে, তিনি চাচ্ছেন-ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জ্ঞানদীপ্ত প্রকৃত শিক্ষার আলোয় আদর্শ জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ না হয়ে বরং দুর্নীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দলবাজি, দুর্বৃত্তপনা, ইভটিজিং ও মাদকসহ লুটপাট করার অর্থবিত্তের কাছে নতিস্বীকার করতে শিখুক।
রিজভী আরও বলেন, এই শিক্ষামন্ত্রীর আমলে গ্রীস্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত, হেমন্তে প্রশ্নপত্র গোপন থাকতে চায় না। বন্ধ দুয়ার ভেদ করে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই প্রশ্নপত্র বাজারে কেনা বেচা হয়। জড়বস্তু প্রশ্নপত্রে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে। এইজন্যই সে অর্গল ভেঙ্গে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেদের লোকদেরকে এই কেনা বেচার সুযোগও করে দিয়েছেন সুকৌশলে।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের মন্ত্রীরা এক অভিনব কায়দা উদ্ভাবন করেছেন যেখানে প্রাইমারির প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে পিইসি, জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি, এইচএসসি, বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেল ভর্ত্তি পরীক্ষা, চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষা সবখানেই প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস হয় লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে। এতো কিছুর পরও মিডিয়ার বদৌলতে এই প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারির সাথে যারা জড়িত তারা সরকারেরই মায়ামুগ্ধ ছাত্রলীগের সোনার সন্তানেরা।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর কথায় মনে হচ্ছে, তিনিই এসব কেলেঙ্কারির উৎসাহদাতা। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করেছিল হানাদার বাহিনী, সেই একই উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিকে মেধাহীন করতে শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের জন্য অবিরাম গতিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
২৫ডিসেম্বর২০১৭,সোমবার::ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি