ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা: ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের তিনজন সৈন্য সোমবার সকালে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়লে তাদেরকে আটক করে ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই তিনজন ভারতীয় সৈন্য রাজশাহীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় এক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছিলো।
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতীয় সৈন্যরা সোমবার সকালে ভুল করে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ে। খবর বিবিসির।
পদ্মা নদী দিয়ে ওখানকার সীমান্ত বিভক্ত। বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, কোথাও কোথাও নদীর পানি শুকিয়ে দুদেশের সীমান্ত একসাথে মিশে গেছে।
রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল শামীম মাসুদ আল ইফতেখার বলেন, ‘যে জায়গা দিয়ে ওরা ঢুকেছিলো সেটি একটি চর এলাকা। ওখানে সীমান্ত চিহ্নিতকারী অনেক পিলার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওখানে কাঁটাতারের কোনো বেড়াও নেই। তখন রাতের বেলায় টহল দেওয়ার সময় চোরাকারবারিদের দাবড়াতে দাবড়াতে ভুল করে সীমান্তের এপাশে ঢুকে পড়েছে।’
এরপর সীমান্ত এলাকায় টহলরত বিজিবির রক্ষীরা তাদেরকে পাকড়াও করে ভারতীয় রক্ষীদের আটক করে।
বিজিবির সৈন্যদের কাছে প্রায় ছ’ঘণ্টা আটক থাকার পর দুপুরে তাদেরকে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় রক্ষীরা বিজিবির কর্মকর্তাদের বলেছেন যে কুয়াশার কারণে তারা পথ হারিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন।
যেভাবে ধরা হয়
বিএসএফের এই তিনজনকে ধরার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজিবির মাঝারদিয়া পোস্টের নায়েক সুবেদার শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, সকালে স্থানীয় রাখালরা তাকে টেলিফোন করে জানায় যে কয়েকজন ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। তিনি তখন ১৬ জন রক্ষীর একটি দল নিয়ে তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে আটক করতে সক্ষম হন।
‘হাজিরবাতান একটা চরের মতো জায়গা। পদ্মা নদীর মাঝখানের একটি চর। ওখানে লোকজন তেমন থাকে না। কিন্তু সেখানে কিছু রাখাল তাদের গরু চরাচ্ছিলো। ওরা তখন তাদেরকে ধাওয়া করে। আমাকে মোবাইল করে জানায় যে বিএসএফের লোক বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়েছে।’
সুবেদার ইসলাম জানান, তারা কখন ঢুকেছে সেটা তারা জানেন না তবে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তারা তাদেরকে আটক করেন।
‘আমি যখন টহল দল নিয়ে যাই তখন দেখি ওরা বাংলাদেশের দিকে দৌড়ে আসছে। আমাদেরকে দেখার পর ওরা থমকে দাঁড়ায়। চারদিক থেকে ওদেরকে ঘিরে ফেলি এবং আত্মসমর্পণ করতে বলি। ওরা সারেন্ডার করলে আমরা ওদের নিরস্ত্র করে ক্যাম্পে নিয়ে আসি।’
তিনি জানান যে তাদের তিনজনের হাতে তিনটি অস্ত্র ছিলো।
কেন ও কিভাবে ঢুকেছে
বিজিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতীয় রক্ষীরা ভুল করে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলো।
‘ওরা বলেছে যে কুয়াশার কারণে ওরা বুঝতে পারেনি। দিক হারিয়ে ওরা ভেতরে ঢুকে পড়েছে।’
সুবেদার ইসলাম বিএসএফের সৈন্যদের আটক করার পর তাদের কাছে জানতে চান যে তারা যদি কুয়াশায় পথ হারিয়ে থাকেন, তাহলে তারা বাংলাদেশের এতো ভেতরে ঢুকলেন কিভাবে?
‘তোমরা ১০ গজ ২০ গজ ভেতরে আসতে পারো কিন্তু এক কিলোমিটার ভেতরে আসলা কিভাবে?’ সুবেদার ইসলামের প্রশ্ন।
তারা এর কোনো উত্তর দিতে পারেনি। কিন্তু তারা বলেন যে তাদের ভুল হয়ে গেছে।
বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল শামীম মাসুদ আল ইফতেখার বলেছেন, পরে দু’দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠকে বিএসএফ এই ভুলের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
বিএসএফের কাছে ফেরত
ভারতীয় এই তিনজন সীমান্তরক্ষী হলেন এএসআই হররম সিং, সিপাহী রাকেশ কুমার এবং সিপাহী সন্তোষ কুমার। এরা ভারতের হারুডাঙ্গা বিএসএফ ক্যাম্পে মোতায়েন ছিলেন।
তাদের ধরার পর বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়। পরে দুটো দেশের নোম্যান্সল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় পতাকা বৈঠক।
ওই বৈঠকের পর দুপুর দেড়টার দিকে ভারতীয় সীমান্ত-রক্ষীদেরকে বিএসএফ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
২৫ডিসেম্বর২০১৭,সোমবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি