ক্রাইমবার্তা রিপোট: রাজশাহী: প্রায় ৫শ কোটি টাকা নিয়ে হয়েছে উধাও জনতা সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি। দেশের বিভিন্ন জেলাতে এক সময়ে দাপটের সাথে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত হত। দুর্ণিতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির বেশির ভাগ শাখা বন্ধ হয়ে গেচে। সর্ব শেষ বন্ধ হল রাজশাহীর “কেশর হাট শাখা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও রাজশাহীর “কেশর হাট জনতা সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি” । গত ২৫ অক্টোবর থেকে আর্থিক এই প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে সবাই উধাও হয়ে গেছে ।গ্রাহকরা তাদের জমানো কষ্টের টাকা ফেরত না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে । মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমানো টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় প্রায় প্রতিদিনই তালাবদ্ধ অফিসের সামনে ধরনা দিচ্ছেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রতারিত গ্রাহকেরা।
সমিতির মালিক হলেন আবুল কালাম আজাদ । জানা গেছে কুষ্টিয়ার তারাগুনায়ায় মালিকের বাসা ।তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় জনতা মাল্টাপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন ।এর পর তিনি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করেন । জানা যায় পরবর্তীতে কেশরহাটের তার প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় কেশরহাট জনতা সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি ।
উচ্চমাত্রার সুদের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় । পরবর্তীতৈ একের পর এক বন্ধ হতে থাকে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শাখা ।
এর আগে মেহেরপুর, বগুড়া, রাজশাহীর বাঘা, মাগুরা প্রভৃতি জেলায় অবস্থিত শাখা গুলো বন্ধ হয় একের পর এক । এবার বন্ধ হলো কেশরহাট শাখা ।
বিভিন্ন শাখা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় শাখা গুলোর হেড অফিস । তারপর কৌশলে সেসব শাখার ব্যবস্থাপকের উপর সব দায়ভার চপিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়ে আবুল কালাম আজাদ লাপাত্তা হয়ে গেছে । জানা যায় দেশের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৫৬ টা শাখা থেকে ১০০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক
এর আগে মাগুরায় পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমানো টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় প্রায় প্রতিদিনই তালাবদ্ধ অফিসের সামনে ধরনা দিচ্ছেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রতারিত গ্রাহকেরা। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চায়ের দোকান থেকে আয়ের একটি অংশ জনতা সমবায় সমিতিতে জমা করতেন নিজাম উদ্দিন। দুই বছরে সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪২ হাজার টাকা। টাকা আনতে গিয়ে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। পরে জানতে পারেন এই সংস্থার সবাই এখন লাপাত্তা।
শুধু নিজাম উদ্দিন নয়, তার মতো প্রায় ৫০০ গ্রাহকের অবস্থা এখন এমন। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া গ্রামের খন্দকার আবুল কালাম আজাদ জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মাগুরা শহরের আল আমিন মার্কেটের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। খন্দকার আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনায় ছিলেন শাহরিয়ার রহমান নামে এক কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষক ডলি, একজন পিয়ন ও চারজন মাঠকর্মী।
স্থানীয় চায়ের দোকানি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকদের টার্গেট করে ঋণ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে তারা। এভাবে গত ৮ বছরে প্রতিষ্ঠানটি অন্তত ৫০০ গ্রাহক তৈরি করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড মাগুরায় প্রায় ৮ বছর ধরে ব্যাংকিংসহ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। স্থানীয় দরিদ্র গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত তিন কোটি টাকা। টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতারিত গ্রাহকদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেছেন আবদুল আজিজ।
মামলার নথি ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, মাগুরা শহরের ভায়নার মোড়ে আল আমিন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়। এখান থেকেই তারা দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করত।
মাগুরা জেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া চালু করে এফডিআর, ডিপিএসসহ বিভিন্ন স্কিম। বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে।
আল আমিন মার্কেটের মালিক হাফিজুর রহমান জানান, বার্ষিক ১২-১৪ শতাংশ হারে মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সমিতি। এ কারণেই গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে। চেয়ারম্যান খন্দকার আবুল কালাম আজাদ ১০ বছরের জন্য তার কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। গত ৮ বছর তিনি কোনো ভাড়া নেননি। এর পরিবর্তে ভাড়াবাবদ প্রাপ্য টাকা সমিতিতে গচ্ছিত রাখেন। এখন সমিতিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘর ভাড়া বাবদ প্রায় ৬ লাখ ও ডিপিএসের প্রায় ৩ লাখসহ প্রায় ৯ লাখ টাকা ফিরে পাওয়ার কোনো আশা নেই তার।
এ নিয়ে হাফিজুর রহমান মাগুরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে পুলিশ জানায়।
এ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আবদুল আজিজ। তিনি ৫ লাখ টাকার এফডিআর করেছিলেন জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিতে। এ ছাড়া ডিপিএস হিসেবে সমিতিতে প্রতি মাসে জমা রাখতেন দেড় হাজার টাকা। এতে সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আত্মসাৎ করেছে তার প্রায় ৯ লাখ টাকা। সব হারিয়ে আজিজ এখন নিঃস্ব।
জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির কার্যালয়ের নিচ তলায় রয়েছে এসএ পরিবহনের মাগুরা শাখার কার্যালয়। এখানে কাজ করেন পারনান্দুয়ালি এলাকার নাসিমা খাতুন। তিনি জানান, শহরের বেশকিছু বড় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ এফডিআর, ডিপিএসসহ নানা স্কিমের আওতায় সমিতিতে গচ্ছিত রেখেছিলেন তাদের সঞ্চয়। সমিতির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ারের প্ররোচনায় তিনি নিজেও সাড়ে ৯ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন সমিতিতে।
মাগুরার পুলিশ সুপার বলেন, জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
২৬,ডিসেম্বর ২০১৭,মঙ্গলবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি