‘ঘুষ-দুর্নীতি’ ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি টিআইবির

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা: সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে ‘সহনশীল’ মাত্রায় ঘুষ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান ও ঘুষ গ্রহণে বাধা দেয়ার সাহস নেই বলে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মাননীয় মন্ত্রী কর্তৃক নিজেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা দেয়া সাহসিকতার পরিচায়ক হতে পারে; তবে একই সাথে এই সৎ সাহসের যথার্থতার স্বার্থেই নৈতিক অবস্থান থেকে তিনি পদত্যাগ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন- এই প্রত্যাশা করছে টিআইবি।

বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদসূত্রে জানা যায়, ২৪ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ইতিপূর্বে মন্ত্রণালয়ের এক অধিদপ্তরের দুর্নীতির ব্যাপকতা রোধে কর্মকর্তাদের ‘সহনশীল’ মাত্রায় ঘুষ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নিজেসহ মন্ত্রীপরিষদের সকল সহকর্মীদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর ওই বক্তব্য যেমন জাতির জন্য উদ্বেগজনক, তেমনি এতে কেবল তার নিজের বিভ্রান্তি ও হতাশার প্রতিফলন ঘটেছে। মন্ত্রীর বক্তব্যে এটাও পরিষ্কার যে ইতিপূর্বে শিক্ষাখাতে টিআইবির একাধিক গবেষণায় উঠে আসাব্যাপক মাত্রার দুর্নীতির চিত্র ও বিশ্লেষণকে তিনি শুধু ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার ও উপেক্ষাই করেননি, বরংপ্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছেন, যার ফলে তাকে এখন নিজেকে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের হাতে জিম্মি ভাবতে হচ্ছে। তার যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সৎসাহস ও দৃঢ়তা থাকত তাহলে এরূপ অসহায়ত্বের মাধ্যমে দুর্নীতির আরো বিস্তার ঘটানোর প্রেসক্রিপশন দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। সেক্ষেত্রে তিনি তার দাবি অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার কার্যকর প্রয়োগ করতে পারতেন।

দুর্নীতি রোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন: টিআইবি
ঢাকা: টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি রোধ করতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা যদি একসঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন তবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কোনো দেশই দুর্নীতিরোধ করতে পারেনি।

রবিবার বিকেলে গাজীপুর জেলা পরিষদ হলরুমে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের মতবিনিময় সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইফতেখারুজ্জামান।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক মো. আয়েশ উদ্দিনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) প্রণয় ভূষণ দাস, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান, গাজীপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সংকর শরণ সাহা, বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান শুকুর, গাজীপুর সনাকের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুকুল কুমার মল্লিক, সদস্য অধ্যাপক এম এ বারী, অধ্যাপক মো. শহীদ উল্লাহ, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ প্রমুখ।

ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, আমাদের দুর্নীতি যদি মধ্যম পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে উন্নীত করা সম্ভব। কঠিন হলেও দুর্নীতিরোধ করা অসম্ভব নয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি খাতে সেবা নিতে গিয়ে সেবাগ্রহীতারা দুর্নীতির শিকার হন। এক জরিপে দেখা গেছে ৬৭ শতাংশ সেবাগ্রহীতা কোনো না কোনোভাবে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে। যারা ঘুষ দিয়েছে তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মনে করেন এ ছাড়া সেবা পাওয়ার অন্য কোনো উপায় নেই।

টিআইবি পরিচালক বলেন, বিদুর্নীতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এটা অবশ্যই দুর্নীতিবাজদের জানাতে হবে। তাদের বিচারের আওতায় আনতে পারলে দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। দুর্নীতি হ্রাসের আরেকটি শক্তিশালী বিষয় হচ্ছে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।২৬,ডিসেম্বর ২০১৭,মঙ্গলবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।