শামসুজ্জোহা বাবু,গোদাগাড়ী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জুলাই থেকে ডিসেম্বর গত ছয় মাসে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারালো ১৩ জন। আহত দুই শতাধিক এভাবেই প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে পড়ছে চীর চেনা অসংখ্য তরতাজা মুখ। উপজেলায় মোট সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫০ টি এ তথ্য নিশ্চিত করেন গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন মাষ্টার আতাউর রহমান। সড়ক দূর্ঘটনা শব্দটি শুনতে যতটা ছোট মনে হোক না কেন এর পরিণতি বরাবরই ভয়াবহ। বর্তমানে সব জায়গায় মূখ্য সমস্যা গুলোর মধ্য সড়ক দূর্ঘটনাকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখা হয়। বর্তমানে যে সড়ক দূর্ঘটনা গুলো ঘটে তাতে প্রাণনাশ নিশ্চিত। আর যদিও উপর ওয়ালার কৃপায় প্রাণে বেঁচে যায় তাও আহত ব্যাক্তিকে পঙ্গুত্ব নিয়ে অন্ধকারের মতই জীবনযাপন করতে হয়।
সড়ক দূর্ঘটনার কারনে প্রাণ হারায় কিছু অসহায় মানুষ। এতে করে কেউ হারায় বাবা,কেউ হারায় ভাই,কেউ বা মা,বোন এবং বিভিন্ন আত্মীয়স্বজন। অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিটি সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর ফলে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পথে বসে।
সারাদেশে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর গড়ে ছয় হাজার মানুষ নিহত হয়। বিশ্ব নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে মৃত্যু ২১ হাজার এটা প্রকাশিত হয় অক্টোবর ২০, ২০১৫ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে প্রায় ৫০ হাজার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৪২ হাজার মানুষ।
অন্যদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গোদাগাড়ী উপজেলাতে গত ছয় মাসে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারালো ১৩ জন । আর আহত হয়েছে প্রায় ২০০ জন। এবং সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫০ টি এর আগে গত ছয় মাসের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা অন্য যে কোনো বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার ( ভূমি) সানওয়ার হোসেন বলেন দিনে দিনে বাংলাদেশের সড়কগুলো যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হচ্ছে।সড়ক দুর্ঘটনা এমন কোন দুর্ঘটনা নয় যা এড়ানো সম্ভব নয় । চালক যদি যোগ্য-দক্ষ-অভিজ্ঞ হয় ও যানবাহন চালানোকালে শারীরীকভাবে ফিট থাকে, যানবাহনের যদি ফিটনেস থাকে, ও যান্ত্রিক দিক দিয়ে ত্রুটিমুক্ত থাকে, গতিবেগসহ সার্বিক বিষয়ে চালক ট্রাফিক বিধি-বিধান মেনে চলেন, সড়ক-মহাসড়ক যদি যানবাহন চলাচলের পূর্ণ উপযোগী থাকে তাহলে যানবাহনকে দুর্ঘটনা মুক্ত রাখা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুবই সম্ভব । যে চালক বেপরোয়া যানবাহন চালায়, ওভারটেক করে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে যাত্রীদের প্রাণহানি ঘটায়, তাদের কিছু হয়না বলেই অদক্ষ ও বেপরোয়া চালকদের হাতে সাধারণ যাত্রীরা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
অদক্ষ চালক এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি। তিনি আরো বলেন, ‘ভালো রাস্তাতে আপনি যদি গতিসীমার মধ্যে ভালো মানসিকতার ড্রাইভার দিয়ে, ট্রেইনড (প্রশিক্ষিত) ড্রাইভার দিয়ে না চালান তাহলে ভালো রাস্তায় কিন্তু আরো ভয়াবহ অ্যাকসিডেন্ট বেশি হবে।’ নিরাপদ সড়কের জন্য ডিজিটাল স্পিড এনফোর্সমেন্ট সিস্টেম চালু করার প্রয়োজনীয়তার অাছে।
ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা সার্জেন্ট আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার মত করে প্রতিদিন যানবাহন বাড়ছে । যানবাহন বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা গুলো ঘটে মহাসড়কেই, এসবের ৯০ ভাগই ভুটভুটি,ট্রাক,আটো রিক্সা,বাস ও মিনিবাসের কারণে হয়। চালক-যাত্রী এবং প্রশাসনের সচেতনতার মাধ্যমেই দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে।
গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শান্ত কুমার মজুমদার বলেন, এই পরিস্থিতির দ্রুত অবসান হওয়া উচিত । সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে যাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব প্রথমত, যে সংস্থা যানবাহনের ফিটনেস সনদ ও চালকের লাইসেন্স প্রদান করে, দ্বিতীয়ত, সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা-পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং তৃতীয়ত, যানবাহন মালিকদের । সুতরাং সংশ্লিষ্ট এই তিন মহলের সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতাই দেশে সড়ক দুর্ঘটনাকে দ্রুত শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার দিকে নিয়ে যেতে পারে । সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে আর কোন জীবন যেন অকালেই ঝড়ে না যায় এবং আর কোন বাবা-মা-স্ত্রী-ভাই-বোন-সন্তান যেন আপনজন হারা না হয়।