ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: ঢাকা: নানা অনিয়ম-জালিয়াতি ও বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচন।
কুমিল্লায় ঘটেছে জাল ভোটের ঘটনা, এর ছবি তোলায় সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনতাই এবং নাঙ্গলকোটের রায়কোট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্কুল ছাত্ররাও ভোট দিয়েছে। সেখানে নির্বিকার ছিল প্রিজাইডিং অফিসার। কেন্দ্রের আশপাশে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র মহড়াও ছিল ব্যাপকভাবে।
দাউদকান্দি উপজেলার নারানদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এভাবে সারাদেশে অস্ত্রের মহড়া আর নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো পৌরসভা নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বড় জয় পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হওয়া ছয়টি পৌরসভার (সাধারণ) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন চারটিতে। এছাড়া একটিতে জয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী।
ছয়টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মো. সাইফুর রহমান, দিনাজপুরের বিরলে সবুজার সিদ্দিক, পঞ্চগড়ের বোদায় ওয়াহিদুজ্জামান ও নাটোরের বনপাড়ায় কে এম জাকির হোসেন।
রাজশাহীর বাঘা পৌরসভায় জিতেছেন বিএনপির প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক। জামালপুরের বকশীগঞ্জ পৌরসভায় জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম।
বাঘা পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী জয়ী
রাজশাহীর বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে দেড় হাজার ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়লাভ করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি পেয়েছেন ১২ হাজার ২২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আক্কাছ আলী পেয়েছেন ১০ হাজার ৭০২ ভোট।
রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান এই খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট গ্রহণের সময় কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মোট ১০টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ২৭ হাজার ৭৮৯ জন। এছাড়া নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মোট ৫৩ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বকশীগঞ্জ পৌরসভা
জামালপুরের বকশীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম সওদাগর এগিয়ে রয়েছেন। রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলম জানান, পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম সওদাগর জগ প্রতীকে ৮ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ফখরুজ্জামান মতিন ধানের শীষ প্রতীকে ৭ হাজার ৭০৫ ভোট এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহিনা বেগম নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ১৬০ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বাহাদুর নারিকেল গাছ প্রতীকে পেয়েছেন ৮৩৩ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম. নুরুজ্জামান মোবাইল প্রতীক পেয়েছেন ৫৯৬ ভোট এবং অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সোলাইমান হক কম্পিউটার প্রতীক পেয়েছেন ১৩১ ভোট।
বকশীগঞ্জ পৌরসভার মোট ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। মালিরচর হাজিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে স্থগিত ওই কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৫২৫ ভোট। পরবর্তীতে স্থগিত কেন্দ্রের পুনরায় ভোট গ্রহণের পর বিজয়ী মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
গাবুরা ইউপিতে বিএনপি প্রার্থী জয়ী
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মাসুদুল আলম ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৮০৩৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী রবিউল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৩৩৬ ভোট। নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রবিউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পর গণনা শেষে বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে নারি ভোটারদের উপস্থিতি বেশি থাকলেও পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। আইলা বিধ্বস্ত এ গাবুরা ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ৩০০।
গত ২৮ জুলাই শ্যামনগরের গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আযম টিটো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় সেখানে শূন্য পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বনপাড়া পৌরসভায়-জোয়ারী ইউপিতে আ’লীগ, মাঝগাঁও ইউপিতে বিএনপি জয়ী
নাটোরের বড়াইগ্রামে বনপাড়া পৌরসভায় কেএম জাকির হোসেন ও জোয়ারী ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী চাঁদ মাহমুদ এবং মাঝগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপি প্রার্থী আব্দুল আলীম বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীক বর্তমান মেয়র কেএম জাকির হোসেন পূনরায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৯ হাজার ৬৮৫। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে মহুয়া ইয়াসমিন (নুর কচি) পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৫০ ভোট। পৌরসভায় ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট স্থগিত রয়েছে। এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৭৫৭ জন। ভোটের ব্যবধান ওই কেন্দ্রের চেয়ে বেশী হওয়ায় কেএম জাকির হোসেনকে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়াড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান চাঁদ মাহমুদ ১২ হাজার ২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে আলী আকবর পেয়েছেন ১০ হাজার ৭১ ভোট। মাঝগাঁও ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে আব্দুল আলীম ৮ হাজার ২৫৬ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান খোকন মোল্লা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৮৪ ভোট। অপর প্রতিদ্বন্দ্বী সতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকে জাসদের মহিবুর রহমান পেয়েছেন ৫ হাজার ৫০৭ ভোট।
পৌরসভা নির্বাচন ছাড়াও বৃহস্পতিবার ৩৭টি ইউপিতে সাধারণ-স্থগিত নির্বাচন, ৭৮টিতে উপ-নির্বাচন, জেলা পরিষদের দুইটি ওয়ার্ডে সাধারণ ও একটি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া তিনটি পৌরসভায় উপ-নির্বাচন হয়েছে।
২৯ ডিসেম্বর,২০১৭ শুক্রুবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি