এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে শিক্ষক-কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। পরে গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় আমরণ অনশন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে প্রেস ক্লাবের সামনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় তিনি জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে সম্মত হয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এখন নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্তি করা হবে।
রাস্তায় বসে কষ্ট না করে শিক্ষকদের ফিরে যাওয়ারও আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এ সময় শিক্ষকরা চারিদিক থেকে চিৎকার করে জানতে চান, এমপিওভুক্ত কবে করা হবে? আমাদের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানান। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ জানাননি। এতে হই-হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। শিক্ষকরা স্লোগান দিতে থাকেন- ‘শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা, মানি না-মানব না’, ‘আন্দোলন চলবে’।
এরমধ্যেই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী তড়িঘড়ি করে প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
এরপর নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের অনশন চলবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছাড়া আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা সুশৃঙ্খলভাবে শুয়ে আছেন। চারজনের শরীরে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী অনশন ভাঙাতে আসছেন- জেনে গেছেন শিক্ষকরাও।
শিক্ষামন্ত্রী যখন আসেন অনেক শিক্ষক ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিতে থাবেন। শিক্ষামন্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এসএম ওয়াহিদুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে অনশন স্থলের মাঝামাঝি জায়গায় গিয়ে দাড়ান।
এ সময় সচিব সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আপনাদের দাবিপূরণে আমরা কাজ করছি। একটু পর মন্ত্রী এ বিষয়ে আরও বলবেন। আমি আশা করি মন্ত্রী মহোদয় যা বলবেন আমরা সবাই তা মেনে নেব।’
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য মনোপুত না হওয়ায় শিক্ষকরা প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে যান এবং শ্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষকদের মুহুর্মুহু স্লোগানের মধ্যেই শিক্ষামন্ত্রীকে স্থান ত্যাগ করতে হয়।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। সারাদেশে ৭ হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
বছরের পর বছর কোনো ধরণের বেতন-ভাতা ছাড়াই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। জীবন ধারণে কাউকে কাউকে সবজি বিক্রি, দোকানদারি, অটোরিকশা চালাতে হচ্ছে। কেউ কেউ শ্রমিকের কাজও করছেন বলে অনশনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন।