জাল নথির সপক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ পাঁচ সাক্ষী: খালেদার আইনজীবী

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, জাল দলিল তৈরি করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ। আর এই জাল নথির সপক্ষে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন হারুন-অর-রশিদসহ পাঁচজন সাক্ষী।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার পর দিকে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে ষষ্ঠ দিনের মতো খালেদা জিয়া হাজির হন এবঙ তার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি হয়

মামলার এজাহারের তারিখ, অনুসন্ধানের তারিখ ও অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করার কথা। অথচ ৩৯৫ কার্যদিবস সময় নেওয়া হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে জাল দলিল তৈরি করা হয়।

এ ছাড়া রুলস অব বিজনেস, সচিবালয় নির্দেশমালা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কার্যবিবরণীর বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলী বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী যেভাবে অতিরিক্ত নথি তৈরির কথা তা সেভাবে করা হয়নি। নথির গতিবিধি–সংক্রান্ত বিধানও অনুসরণ করা হয়নি। এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সাবেক মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত সচিব সৈয়দ জগলুল পাশার এতিম তহবিলসংক্রান্ত নথি দেখার কোনো এখতিয়ারই ছিল না।

এর আগে এই মামলায় খালেদা জিয়ার দুজন আইনজীবী তাঁদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। তৃতীয় আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অব্যাহত রেখেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল প্রথমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন।

এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পঞ্চম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহাবুব হোসেন।

২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিশেষ আদালতের জজ মো. আখতারুজ্জামান পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আগামী ৩ ও ৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। এর আগে আদালতে ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক দিন ধার্য ছিল।

ওই দিন খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এজে মোহাম্মদ আলী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আজ ৩ জানুয়ারি ও আগামীকাল ৪ জানুয়ারি তিনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।

১৯ ডিসেম্বর এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে খালেদার সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করেন। ২০ ডিসেম্বর খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন তার আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান। এদিন শেষ না হওয়ায় ২১ ডিসেম্বর পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন আদালত। ২১ ডিসেম্বর খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। ওইদিন ও শেষ না হওয়ায় ৩ ও ৪ জানুয়ারি পরবর্তি দিন ধার্য্য করেন।

এছাড়া জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাও কার্যক্রমের দিন ধার্য্য রয়েছে।

মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে বলেন, ‘এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। এই মামলায় রাজনৈতিক কালিমা লিপ্ত আছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে হয়রানি করার জন্যই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ক্ষমতাসীনরা আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। তবে আমরা আশা করছি, আল্লাহকে হাজির-নাজির রেখে আদালত ন্যায়বিচার করবেন।’

খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মামলা দিয়ে ধাওয়া করা হচ্ছে। তিনি নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না। তারপরও মাথা ঠাণ্ডা রেখে তিনি এই মামলা লড়ছেন।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া একটি সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে এসেছেন। তিনি তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি কখনো রাজপ্রাসাদে বসবাস করেননি। তিনি মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। সেই খালেদা জিয়ার নামে কেন এই মামলা দায়ের করা হয়েছে, তা ইতিহাসের কাছে প্রশ্ন হয়ে থাকবে। জনগণ এই মামলার বিচার করবে।’

এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে টাকাটি এসে দুইটি ট্রাস্টে দুই ভাগ হয়েছে। এর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমানের টাকা হালাল দেখানো হয়েছে এবং খালেদা জিয়ার টাকা হারাম দেখানো হয়েছে। মাননীয় আদালত, এটি সব রাজনৈতিক।’

তার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুরু করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে এম মোহাম্মদ আলী। আগামী ৩ জানুয়ারি তিনি আবারো যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করবেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

মামলায় বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানকে আসামি করা হয়।

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।

০৩জানুয়ারী,২০১৮বুধবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি

Check Also

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল

র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।