ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: কলকাতা: আসামের বির্তকিত নাগরিক তালিকার বিরুদ্ধে ভারত সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার বীরভূমের আমোদপুরে এক জনসভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আসাম থেকে বাঙালিদেরকে তাড়িয়ে দিতে চায় বিজেপি। আমি বলছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না। এনআরসির মাধ্যমে লোকজনকে তাদের মাতৃভূমি থেকে তাড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যদি বাঙালিদেরকে আসাম থেকে বিতাড়নের চেষ্টা করা হয় তাহলে আমারা বসে থাকবো না।’
বিতর্কিত এই নাগরিক তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগকে ১৯৬০ সালের ‘বাঙাল খেদাও’ আন্দোলনের সাথে তুলনা করে মমতা ব্যানার্জী বলেন, এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।
গত রবিবার মধ্যরাতে প্রকাশিত হয় আসামের নাগরিক তালিকার প্রথম খসড়া। এতে রাজ্যের ৩.২৯ কোটি নাগরিকের মধ্যে ১.৯ কোটিকে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর থেকে শুরু হয়েছে বির্তক, অশান্তি। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরো তালিকা আসবে শিগগিরই।
বিজেপি সরকার প্রণয়ন করা তিন তালাক বিলের কড়া সমালোচনা করে মমতা বলেন, ‘এই বিল আইন হলে মহিলাদের সুরক্ষিত করার পরিবর্তে বিপদ আরও বাড়িয়ে দেবে। এই বিল নিয়ে বিজেপি আসলে রাজনীতি করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাথায় রাখবেন, আমরা কিন্তু এই বিলের কঠোর বিরোধিতা করিনি। কারণ, আমরা মেয়েদের পক্ষে। কিন্তু বিজেপির এই ত্রুটিপূর্ণ বিলের মাধ্যমে মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে বিপদ আরও বেড়ে যাবে।’
প্রসঙ্গত, ২৮ ডিসেম্বর তাত্ক্ষণিক তিন তালাক বিল লোকসভায় উঠলে সভায় অনুপস্থিত থাকেন তৃণমূল সাংসদরা। ফলে এই বিলে সরকারিভাবে তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছিল। তবে, এদিন রাজ্যসভায় তিন তালাক বিল পেশ হওয়ার পর কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীদের সঙ্গে একযোগে বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর আবেদন জানান তৃণমূল সাংসদরা।
মধ্যরাতে তালিকা প্রকাশ, উৎকণ্ঠায় অধীর আসাম
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সরকার এদিন ঠিক মধ্যরাতে সেখানকার বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের প্রথম খসড়া তালিকাটি প্রকাশ করতে চলেছে।
৩১ ডিসেম্বর, অর্থাৎ বছরের শেষ দিনে ঠিক রাত বারোটায় এই তালিকাটি অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। আর পরদিন সোমবার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তালিকার প্রতিলিপি টাঙিয়ে দেওয়া হবে।
‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস’ (এনআরসি) নামে এই বহুল-আলোচিত তালিকা থেকে রাজ্যের বহু বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম বাদ পড়তে পারেন, এই আশঙ্কা থেকে তালিকাটিকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে তীব্র বিতর্ক আর উৎকণ্ঠাও তৈরি হয়েছে।
এই তালিকায় যাদের নাম থাকবে, তারাই কেবল আসাম তথা ভারতের বৈধ নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন এবং রাজ্যের বাদবাকি বাসিন্দাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গণ্য করা হবে – এই কারণেই তালিকাটিকে ঘিরে এত বিতর্ক।
তবে এদিন মধ্যরাতে যে তালিকাটি প্রকাশ করা হবে সেটিই চূড়ান্ত তালিকা নয়, এর পরেও অন্তত আরও দুটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে – আসাম সরকার এ কথা স্পষ্ট করে দেওয়ার পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
রাজ্যের মানবাধিকার আইনজীবী আমন ওয়াদুদ, যিনি আসামের বহু বাঙালি মুসলিমের কেস নিয়ে লড়ছেন, তিনিও এদিন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন সরকারের এই ঘোষণার ফলে অনেকটাই স্বস্তি ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘যে সোয়া তিন কোটিরও বেশি লোক এই তালিকাভুক্ত হওয়ার আবেদন করেছিলেন তার মধ্যে প্রথম খসড়া তালিকায় সোয়া দুই কোটি মতো লোকের নাম থাকছে। কিন্তু আপাতত যেটা স্বস্তির বিষয় তা হল বৈধ নাগরিকদের নামের তালিকা এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না।’
আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়ালও ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রথম তালিকায় যাদের ঠাঁই হচ্ছে না, তাদের অনেকেরই নথিপত্র পরীক্ষা এখনও বাকি আছে।
নাগরিকত্বের সে সব প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় খসড়াও মাসকয়েকের মধ্যেই প্রকাশিত হবে।
তবে এই তালিকা প্রকাশের আগে গোটা আসাম জুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্তত পঁয়তাল্লিশ হাজার নিরাপত্তাকর্মী গোটা রাজ্যে মোতায়েন রয়েছে, সেনাবাহিনীকেও ‘স্ট্যান্ডবাই’ রাখা হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গুপ্তাও গত সপ্তাহে দুদিন আসামে কাটিয়ে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও তালিকা প্রকাশের আগের প্রস্তুতিপর্ব পর্যালোচনা করে গেছেন।
গোয়েন্দা সূত্রগুলোও জানিয়েছে, তালিকা প্রকাশের সময় আসামের বিশেষত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে গন্ডগোল হতে পারে, এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে সেখানে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে।