সাতক্ষীরায় গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যান রতন ঢাকায় ভর্তিঃ অবস্থা আশঙ্কা জনক:গরুর খাটাল ব্যবসা ও মাদক নির্মুলের কারণে এঘটনা ঘটতে পারে  আশঙ্কা এলাকা বাসির

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:সাতক্ষীর প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান , দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গুলিবিদ্ধ শেখ ফারুক হোসেন রতনের অবস্থা আশংকাজনক। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল দুপুরে হেলিকপ্টরযোগে ঢাকাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে অবস্থা একই রকম। অবস্থার উন্নতি না হলে উন্নত্ত চিকিৎসার জন্যে বিদেশ পাঠানো হতে পারে। আজ সকাল পর্যন্ত তার শাররিক অবস্থার কোন উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তার অপারেশন হয়। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফরহাদ জামিল ও ডা: কাফী জানান, চেয়ারম্যান রতনের তলপেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাতেই তাকে অপারেশন করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে চেয়ারম্যান রতনের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলেও দেবহাটা থানায় বুধবার সন্ধা পর্যন্ত কোন মামলা রেকর্ড হয়নি। তবে এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় পুলিশ ক্লু খুঁজে পেয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু কিছু বলা যাচ্ছে না। পরবর্তীতে সব কিছু জানানো হবে।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী কামাল হোসেন জানান, এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন জনকে আটক করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনিটি গুলির খোসা ও প¦ার্শবর্তী একটি বাগান থেকে এক জোড়াজুতা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ সাড়াশি অভিযানে নেমেছে বলে ওসি জানান। তবে যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেনি পুলিশ। বুধবার সন্ধা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ দাখিল না করায় এ ব্যাপারে থানায় কোন মামলা রেকর্ড হয়নি বলে জানান ওসি কাজী কামাল হোসেন।
প্রসঙ্গত. সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন (৪৫)কে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার সখিপুর মোড়ে তার উপর এ অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এদিকে পুলিশ মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
আহত ফারুখ হোসেন রতন দেবহাটা উপজেলার তিলকুড়া গ্রামের শেখ আমজাদ হোসেন আমুর পুত্র ও সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পারুলিয়া বাজার থেকে মোটরসাইকেলযোগে সখিপুর ইউনিয়নের তিলকুড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে সখিপুর মোড়ে পৌছুলে একটি প্রাইভেট কার থেকে তাকে গতিরোধের সিগন্যাল দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তিনি না থেমে এগুতে থাকলে তাকে লক্ষ করে প্রাইভেট কার থেকে গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে তিনি তলপেটে গুলিবিদ্ধ হন। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার প্রথমে স্থানীয় সখিপুর হাসাপাতলে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে তার অপারেশন করা হয়।
ডা: রুহল কুদ্দুস, ডা: মনোয়ার হোসেন, ডা: শরিফুল ইসলাম, ডা: কাফি , ডা: রাজিব কাওছার ও ডা: জয়ন্ত সরকার তাকে অপারেশন করেন। তারা জানান, অপারেশন সফল হয়েছে। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার দুপুরে তাকে হেলিকপ্টরযোগে ঢাকাতে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চেয়ারম্যানে সাথে দেবহাটা উপজেলার গরুর খাটাল নিয়ে একটি পক্ষের সাথে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি চেয়ারম্যান গরুর খাটালের অনুমোদন পায়। তাছাড়া এলাকায় মাদক নিমুলে চেয়ারম্যানের বড় ভুমিকা রয়েছে। এসব কারনে তার উপর হামলা হতে পারে বলে এলাকাবাসি আশংকা করছেন। এছাড়া, ইউনিয়র পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ওই বিরোধের কারণেও তার উপর হামলা হতে পারে বলে ধারনা স্থানীয়দের।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ফারুক হোসেন রতনকে দেবহাটার সখিপুর কলেজ মাঠে সন্ত্রাসীদের হামলার স্বীকার হন। তারা তাকে কুপিয়ে আহত করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় দুবৃত্তরা। সে সময় তিনি প্রাণে রক্ষা পান।
মঙ্গলবার রাতে সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুখ হোসেন রতন গুলিবৃদ্ধের ঘটান ছড়িয়ে পড়লে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তাকে দেখতে যান জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন, পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহামান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুনছুর আহমেদ, জেলা আওয়ামীলীগে সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগে যুগ্ম সম্পাদক সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু আহমেদসহ প্রশাসনের উর্দ্বেতন কর্মকর্তারা।
এদিকে দেবহাটায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন কে গুলি করে হত্যা চেষ্টাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামীলীগ। বুধবার সন্ধায় সখিপুর মোড়স্থ’ আহছানিয়া ক্লিনিক চত্তরে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মুনছুর আহম্মেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের েেচ য়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সস্পাদক ও দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডর আলহাজ্ব আব্দুল গণি, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আনারুল হক, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন সাহেব আলী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবু রায়হান তিতু, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর, সাধারণ সম্পাদক বিজয় ঘোষ, শ্রমিকলীগের সভাপতি আবু তাহের, ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান সবুজ। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ক্রিড়া সম্পাদক আব্দুর রউফ, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সেলিম, সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কাসেম, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দীন খোকন, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম হফিজ, তাঁতীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আকবার আলী প্রমূখ। এসময় প্রধান অতিথির তার বক্তব্যে বলেন ২০১৩ সালে যারা রাস্তায় জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের কবর বানিয়ে রাজপথ অবরুদ্ধ করেছিল তারাই সেদিন আমাদের আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান, শ্রমিক লীগ নেতা আলমগীর হোসেন বাকুম, আব্দুল আজিজকে হত্যা করেছে। আওয়ামীলীগের অগনিত নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাঠ লুটপাঠ ও অগ্নী সংযোগ করে। তারা সে সময় প্রকাশ্য দিবালোকে এই সখিপুরের কলেজ মাঠে বিএনপি জামায়াতের সান্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে শেখ ফারুক হোসেন রতনকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আবারও হত্যাকান্ডে মেতে উঠেছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই এটা ২০১৩ সাল নয়, এটা ২০১৮ সাল সময়ের অনেক ব্যবধান। রতনকে যারা গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে তারা কোন মতে রেহাই পাবে না। সাথে সাথে স্বাধীনাতা বিরোধী বিএনপি জামায়াতের কোন সন্ত্রাসীকে বিন্দু মাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

০৪জানুয়ারী,২০১৮বৃহস্পতিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।