মন্ত্রিসভায় রদবদল নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ : চমক না অন্যকিছু

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:মন্ত্রিসভায় নতুন তিনজনের অন্তর্ভুক্তির পরদিনই চারজনের দফতর বদল নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে এসে মন্ত্রিসভায় এ পরিবর্তনকে অনেকেই বলছেন তাৎপর্যপূর্ণ। নতুন যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তাদের প্রায় সবাই রাজনৈতিকভাবে অপরিচিত মুখ।

সরকারি দলের মধ্যে তাদের তেমন কোনো অবস্থান নেই বলা চলে। তা সত্ত্বেও হঠাৎ করেই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন তারা। আবার গতকাল বুধবার যে চারজনের দফতর বদল হয়েছে তার মধ্যে তিনজনই মহাজোটের শরিক দলের। ফলে নতুন অন্তর্ভুক্তি ও রদবদল নিয়ে শুরু হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্লেষণ।

আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলোর একাধিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার যে চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন তারা কেউই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ নন। আওয়ামী লীগে পুরনো ও সক্রিয় এমন অনেকেই আছেন যারা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবি রাখেন। কিন্তু সরকার সে দিকে যায়নি। বেশ কিছু দিন পর নতুন মুখ হিসেবে যারা এসেছেন তারা সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট হলেও ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে-বাইরে তাদের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তাদের মধ্যে একজন বর্তমান সরকারের সিনিয়র একজন মন্ত্রীর সম্পর্কে বেয়াই। অপর একজন ব্যবসায়ী। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক হলেও মন্ত্রী হয়েছেন টেকনোক্র্যাট কোটায়।

জাতীয় নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়ার কথা এ যাবৎ ঘুণাক্ষরেও শোনা যায়নি। অপর একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে। যিনি প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন তাকে কোন বিবেচনায় সামনে আনা হয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের অনেকেই তা বুঝতে পারছেন না।

আলাপকালে সরকারি দলের একাধিক নেতা জানান, কাউকে মন্ত্রী করা না করা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি সরকারের মেয়াদের শেষে হয়তো নেতাদের এ বার্তাই দিতে চান, সরকার ও দলের ভালো-মন্দ বিবেচনায় তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অন্য কিছু চিন্তা করে কোনো ফল হবে না। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সরকার পরিচালনায় আনুগত্যের বিষয়কেই বর্তমানে গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। কর্মদক্ষতা থাকলেও রাজনৈতিক আনুগত্যে কারো ঘাটতি থাকলে তাকে কোনোভাবেই বিবেচনায় নেয়া হয় না। সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা রদবদলের ক্ষেত্রেও সরকারপ্রধান বিষয়টি বিবেচনা করেছেন।

একাধিক সূত্র জানায়, বেশ কিছু দিন শরিক দলগুলোর মন্ত্রী ও দায়িত্বশীল নেতাদের কিছু বক্তব্য সরকারকে বিব্রত করে। দলের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। মন্ত্রিসভায় দফতর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি সরকার প্রধানের একান্ত। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সমালোচনা কিংবা নেতিবাচক তৎপরতা দৃষ্টিগোচর হলে সরকার তা উপেক্ষা করবে না। সে ক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়া এবং তা বাস্তবায়নের অধিকার সরকারের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রুলস অব বিজনেসে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এসব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দফতর বণ্টন ও পুনর্বণ্টন করেছেন।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, সরকারের মেয়াদের শেষে এসে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করার ক্ষেত্রে ভোটের রাজনীতিরও একটা বড় সমীকরণ কাজ করেছে।

যেসব এলাকা থেকে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় ওই এলাকার কেউই এর আগে ঠাঁই পাননি। ফলে রাজনীতিতে তাদের অবস্থান না থাকলেও আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নতুন মন্ত্রিসভায় তাদের যুক্ত করা হয়েছে। তারা আরো জানান, মন্ত্রিসভায় যারা আছেন তারা কতটুকু যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এরপর আবার মন্ত্রিসভার কলেবর বৃদ্ধি। নতুন মন্ত্রীদের নিয়োগ দিয়ে আসলে একটা চমক দেয়া হয়েছে।

তবে নতুন যে মন্ত্রীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের মূলত নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের মনরার প্রয়োজনেই সামনে আনা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে যেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় সে জন্য নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান  বলেন, একুশ শতকের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যে ধরনের যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন মন্ত্রিসভা দরকার আমরা এখনো তা পাইনি। শুধু নতুনভাবে কয়েকজনকে যুক্ত করে মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ানো হয়েছে। যাদের মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়েছে তাদের অতীত অভিজ্ঞতা আছে কি না তা দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, তার মন্ত্রণালয়ে কোনো ইংরেজি চিঠি গ্রহণ করবেন না। তাহলে কি বিদেশীদের সাথে ওই মন্ত্রণালয়ের কোনো যোগাযোগ থাকবে না! বর্তমান সরকার তো তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। এক প্রশ্নের জবাবে ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার জন্যই অলিখিতভাবে জেলা কোটায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় যারা নতুন যুক্ত হয়েছেন তাদের জেলা থেকে বর্তমান সরকারে আগে কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন না। তবে এটা সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে আমি মনে করি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন  বলেন, মন্ত্রিসভায় নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী যা করেছেন ভেবেচিন্তে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমি মনে করি।

০৪জানুয়ারী,২০১৮বৃহস্পতিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/নয়া দিগন্ত/আসাবি

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।