ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট: ঢাকা : নদীর তলদেশের মাটির গঠনগত বৈচিত্র্যের কারণে কাজ শুরুর প্রায় ৩ বছর পরও পাওয়া যায়নি পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের ডিজাইন। বেশ কয়েকমাস ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডিজাইন পরিবর্তন করে ২টি উপায়ে সমাধানের কথা ভাবা হলেও, শেষ পর্যন্ত কোনটিকে চূড়ান্ত করতে পারছেন না দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞরা।
ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও এখনো আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে নির্ধারিত সময়ে ডিজাইন চূড়ান্ত করা না গেলে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ৪টি পিলার পুরো প্রস্তুত। এর মধ্যে দুটি পিলারের মধ্যে বসে গেছে প্রথম স্প্যানটিও।
অথচ যে মাওয়া প্রান্তের ৬ নম্বর পিলার দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজের উদ্বোধন করা হয়েছিলো, সেখানে নেই কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি। সেতুতে মোট পিলার হবে ৪২ টি। সেতুর ডিজাইনের সময় মোট ১৪টি জায়গায় নদীর মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিলো। কিন্তু পদ্মার তলদেশ এতই রহস্যময় যে, এখন প্রতিটি পিলারের নিচেই আলাদা আলাদা করে মাটির গঠন পরীক্ষা করে পৃথক ডিজাইন করতে হচ্ছে।
মাওয়া প্রান্তে ১৪টি পিলারে জটিলতা দেখা দেয়ার পর দায়িত্ব দেয়া হয় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেনডেলকে। তবে ডিজাইন দিতে তাদের কোন সময়সীমা বেধে দেয়া নেই। বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পর এখন পর্যন্ত সমাধানের দুটি উপায় বিবেচনা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে কয়েকটি পিলারে সর্বোচ্চ ১২৪ মিটার দীর্ঘ ড্রাইভিং করা হয়েছে। এ দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ১৩০ মিটার করা হতে পারে। তবে হ্যামার ব্যবহার করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ১২৪ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য বাড়ালে নতুন চুক্তি করতে হবে।
দ্বিতীয় উপায় হতে পারে দৈর্ঘ্য ঠিক রেখে এক একটি পিলারের পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬টি থেকে বাড়িয়ে ৭ অথবা ৮টি করা। তবে এক্ষেত্রে যে সব পিলারে এর মধ্যে ৩টি পাইল বসানো হয়ে গেছে, সেখানে আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এছাড়া পাইল সংখ্যা বাড়ালে ভূমিকম্পের সময় তা বেশি চাপ টেনে নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না ডিজাইন।
পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেল প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘যদি আমরা দৈর্ঘ্য কমায়, সংখ্যা বাড়ায়, ৬টি পাইলের যে নড়াচড়া বলি চাপটা আরো বেশি হবে। এটা শক্ত হবে। ভূমিকম্পের লোড টেনে নেবে বেশি। তাতে গিয়ে আবার ডিজাইন চেঞ্জ করতে হয় কিনা। সব ইন্টার রিলেটেড।’
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাটি পরীক্ষার তো সময় বাধা হয়নি। তারা একটা সঠিক সমাধানে পৌঁছালে তবেতো দিবে। আমরা বলেছি তাড়াতাড়ি দেওয়ার কথা। চাইলেইতো তারা দিতে পারছে না। ব্রিজটাতো নিরাপদ করতে হবে। আর নিরাপদ করতে যতটুকু সময় লাগবে সেটাতো দিতে হবে।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রায় ৪ হাজার টন ওজনের কোন জাহাজ সেতুর পিলারে ধাক্কা খেলে, সে ধাক্কা সামলানোর সামর্থ্যের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে পিলারের ডিজাইনে। এছাড়া তীব্র স্রোত এড়িয়ে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে হলে আগামী বর্ষার আগেই মাওয়া প্রান্তে প্রথম ১২টি পিলারের কাজ শেষ করতে হবে।
শুধু বাংলাদেশে নয়, এমন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা নিয়ে পদ্মা সেতুর মত চ্যালেঞ্জ কমই নিতে হয়েছে বিশ্বের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের। সমস্যা থাকবে তার সমাধানও মিলবে এমনটি ধরে নেওয়া হয়। পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলার নিয়ে গত ১ বছর ধরে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে বেশ কয়েকটি উপায়ের কথা ভাবা হলেও শেষ পর্যন্ত কোনোটিতেই চূড়ান্ত ভরসা করতে পারছে না প্রকৌশলীরা। যা নির্ধারিত সময়ে কাজি শেষ করার বিষয়টি দুরূহ করে তুলবে।
০৭জানুয়ারী,২০১৮রবিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি