ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটারবিহীন ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনোভাবেই ভোটারবিহীন হয়নি। নির্বাচনে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, ভোট কেন্দ্র পুড়িয়েছে, প্রিসাইডিং অফিসারদের হত্যা করেছে, তারপরও মানুষ এসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। মানুষ ভোট দিয়েছে বলেই আমরা নির্বাচনের ৪ বছর পূর্ণ করতে পারলাম। তিনি এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল বলেই তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শনিবার রাতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধীনতা এনেছে, আওয়ামী লীগের হাত ধরেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, যারা লুটপাট-দুর্নীতি করে, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, সেই বিএনপি আর যাই হোক দেশের কল্যাণ করতে পারে না। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন আমরা জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী তার বাঁ-পাশে বসা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, কী তুমি কি জোড়াতালি দিয়ে বানাচ্ছ নাকি? প্রধানমন্ত্রী এ সময় গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনারা খেয়াল রাখবেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর খালেদা জিয়া ও তার দলের নেতারা তাতে ওঠে কিনা! সাবমেরিন নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন, সাবমেরিন আনার পরপরই তলা ফুটো হয়ে পানিতে ডুবে গেছে। আসলে উনি কী জানেন না, সাবমেরিন পানিতে ডুবে থাকে। এ সময় খালেদা জিয়ার মানসিক সুস্থতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটু পরীক্ষা করা দরকার।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, এরশাদ কিন্তু পারেনি। ১৯৮৮ সালে নির্বাচন করেছে; ’৯০-এ তার পতন ঘটেছে। খালেদা জিয়া টিকতে পারেনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছে, ৩০ মার্চ মাত্র দেড় মাসের মাথায় খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। কারণ তারা ভোট চুরি করেছিলেন। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের ৪র্থ বর্ষপূর্তির পর সরকারপ্রধান এ বিষয়ে আরও বলেন, গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করা- এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। নইলে খালেদা জিয়া চেয়েছিল এদেশে কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন না থাকে।
বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা এখন গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কোন গণতান্ত্রিক ধারায় ক্ষমতায় এসেছে। সায়েম সাহেব রাষ্ট্রপতি ছিলেন …জিয়া সোজা গিয়ে তাকে বলেন, আপনি অসুস্থ। তারপর অস্ত্র দেখায়। সায়েম বলেন, হ্যাঁ বাবা; আমি অসুস্থ। জিয়া বললেন, লিখে দেন, আজ থেকে আমি প্রেসিডেন্ট এবং আপনি পদত্যাগ করলেন। উনি তাই করেছেন। যদি কারও এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকে, তাহলে সায়েম সাহেবের নিজের লেখা বই ‘লাস্ট ফেজ এট বঙ্গভবন’ পড়ে দেখেন। সেখানে তিনি নিজে লিখে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি যে এখন লম্বা লম্বা কথা বলে, তাদের গণতন্ত্র কোনটা? কোন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের জন্ম। জিয়াউর রহমান একাধারে সেনাপ্রধান, সেখানে আর্মি অ্যাক্ট ভঙ্গ করে তিনিই সেনাপ্রধান তিনিই রাষ্ট্রপতি। একই অঙ্গে দুই রূপ নিয়ে ক্ষমতায় বসেন। সেই অবস্থায় প্রথমে হ্যাঁ-না ভোট, তারপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। রাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি দল গঠন করলেন, যে দল প্রথমে ১৯ দফা বাস্তবায়ন কমিটি, তারপর জাগো দল, তারপর আরও কিছু করে-টরে এই বিএনপি সৃষ্টি। একটা সামরিক স্বৈরশাসক, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে যাদের জন্ম, তারা কী করে এত গণতন্ত্রের কথা আউড়ায়, সেটাই আমার প্রশ্ন। যাদের জন্মই হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের হাত ধরে, আজ তারা গণতন্ত্রের প্রবক্তা হয়ে গেছেন। যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল, একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেছিল, তারা ক্ষমতা দখল করে রাতারাতি গণতান্ত্রিক হয়ে গেল। আমি বুঝি না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার টুইটের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়া টুইট করেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে বুলেটে। তিনি ব্যালটে বিশ্বাস করেন।’ আপনারা অনেকেই জানেন, আমি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর বারবার বলতাম, ক্ষমতা পরিবর্তন হবে ব্যালটের মাধ্যমে, বুলেটের মাধ্যমে না। কারণ বুলেটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে জিয়াউর রহমান। আর খালেদা জিয়া আরও একধাপ ওপরে। গ্যাস বেচার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ কখনও সেটা করেনি। কাজেই বন্দুকের নলের মধ্য দিয়ে যাদের ক্ষমতা দখল, তাদের মুখে এই কথা শোভা পায় না। আবার নাকি টুইটও করছেন। জানি না, নিজে লিখছে কিনা! সেটাই সন্দেহ।
৪০ মিনিটের সূচনা বক্তব্যের পর গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজুলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, ফারুক খান, ওবায়দুল কাদের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।০৭জানুয়ারী,২০১৮রবিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি