ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:পুলিশ সপ্তাহ শুরুর প্রেক্ষাপটে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে তুলনামূলক অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই সময়ে ডাকাতি, খুন, নারী নির্যাতন, অপহরণের মতো অপরাধের ঘটনার হার কমেছে।
ভালো কাজের পুরস্কার স্বরুপ আইজিপি পদকও পাচ্ছেন এবার ৩২৯ জন পুলিশ সদস্য। তারপরও এই পুলিশ বাহিনীকে নিয়েই প্রচণ্ড অসন্তোষ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
পুলিশের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা কেন বদলাচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদার কাছে পুলিশের কাজ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সেজন্য অল্প কিছু লোকের নিয়মবহির্ভূত কাজের প্রভাব অনেক বেশি হয়।
তিনি বলেন, “কেউ যদি অন্যায়ভাবে আটক হয় তার প্রভাব বেশি থাকে। সামান্যতম বিচ্যুতিও মানুষকে প্রভাবান্বিত করে। সেজন্যই হয়তো পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে। অল্প হলেও এর প্রভাব অনেক। পুলিশকে আইনত মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার দেয়া আছে ন্যায়সঙ্গত উপায়ে। কিন্তু সবসময় ন্যায়সঙ্গত উপায়ে সেটা হয়না”।
তিনি আরো বলেন, অনেক সময় মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা সঙ্গত কারণেই ক্ষুণœ হয় আর সেজন্য মানুষের ক্ষোভ বেশি থাকে।
কিন্তু সাধারণ মানুষের অনেকেই এতো সহজে বিষয়টি মানতে রাজী নন।
ঢাকার একজন বেসরকারি চাকুরে পুলিশ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তার নাম প্রকাশ করতে রাজী হননি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ” একটা আতঙ্কের নাম পুলিশ। আস্থার চেয়ে অনাস্থাই বেশি”।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তারা নিজেদের জনগণের প্রভু হিসেবে বিবেচনা করে।
কিন্তু পুলিশ নিয়ে এ অভিযোগ আর ভীতি খুব ব্যাপক নাকি বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় ? জবাবে আরেকজন ব্যক্তি বলেন, “মাঝে মধ্যে ওনারা দুর্নীতি করে বলেই অনেকে খারাপ বলে, তবে আমরা বিপদে পড়লে তারাই উদ্ধার করবে”।
আরো বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলেও পুলিশ সম্পর্কে তারা অন রেকর্ড কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। দু-একজন অবশ্য বলেছেন পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।
কিন্তু পুলিশ নিয়ে আস্থার ঘাটতি এতো ব্যাপক হওয়ার কারণ কি ? জবাবে সংস্থাটি নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামানকে বিবিসি বাংলাকে বলেন, “পুলিশ বলপূর্বক অর্থ আদায় বা ঘুষের সাথে ব্যাপকভাবে জড়িত। আমাদের গবেষণায় ৭০ শতাংশ মানুষই বলেছেন ঘুষ না দিলে কোন সেবাই পাওয়া যাবেনা”।
তার মতে এর সাথে রয়েছে পেশাদারিত্বর ঘাটতি আর ক্ষমতার অপব্যবহার। নিয়োগ পদোন্নতি বদলীতে পেশাদারিত্বের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক প্রভাব।
তবে পুলিশ সম্পর্কে বহু মানুষের মনে যে অনাস্থা বা ভীতি সেটি কিংবা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ সেটিকে পুলিশ বাহিনী কিভাবে নেয়? তারা কি বিষয়গুলো আদৌ স্বীকার করে বা বিবেচনায় নিয়ে থাকে ?
এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেলি ফেরদৌস বলেন , “অন্য সংস্থা যেভাবেই কাজ করুক মানুষের প্রত্যাশা থাকে পুলিশের নজরে কেনো আসেনি। এই যে বিপুল চাহিদা বা প্রত্যাশা পুলিশকে নিয়ে এটি ইতিবাচক। কিন্তু এটি পূরণ না হলেই অনাস্থা তৈরি হয়”।
তিনি বলেন, জনবলের ঘাটতি বা লজিস্টিক সাপোর্ট কম থাকায় সেবা প্রত্যাশিত মাত্রায় না গেলে যে অনাস্থা তৈরি হয় সেটিও বিবেচনায় নেয়ার মতো বিষয়।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাড়ছে জনবল, নিরাপত্তা সক্ষমতা। গঠন করা হয়েছে কয়েকটি বিশেষায়িত ইউনিট, জরুরী সেবার জন্য চালু হয়েছে ট্রিপল নাইন নাম্বার, জনমানুষের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে বাহিনীটি সক্রিয় হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। কিন্তু সেগুলো ঠিক কতটা কাজে এসেছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে ড: ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশ সংখ্যা খুবিই কম।
তিনি বলেন, “পুলিশের সংস্কার বিচ্ছিন্নভাবে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ খসড়া আইন পড়ে আছে। জাতীয় পুলিশ কমিশনের মতো কিছু প্রস্তাব ছিলো সেগুলোও হয়নি”।
সোহেলি ফেরদৌস অবশ্য বলছেন, পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা চালু রয়েছে যাতে করে বাহিনীর কেউ অপরাধ বা অনিয়মে জড়িয়ে না পড়ে। তারপরেও কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ এলে সেটি গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয় জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই।
০৮জানুয়ারী,২০১৮সোমবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/বিবিসি/আসাবি