দেবহাটায় চেয়ারম্যান রতনকে হত্যাচেষ্টা : ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৩ জন
আটকের আট দিনে পর সাতক্ষীরায় দুই শিবির নেতাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ
# আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রতন হত্যা প্রচেষ্টায় শিবির ও ছাত্রলীগ নেতা আসামী
পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার ৮ দিন পর সাতক্ষীরা জেলা শিবিরের সেক্রেটারী সহ দুই নেতাকে দেবহাটা থানায় গ্রেফতার দেখানো হল
ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ পুলিশ পরিচয়ে তালা থেকে তুলে নেয়ার আটদিন পর দেবহাটায় করা একটি হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলা হাজতে প্রেরণ করেছে সাতক্ষীরা জেলা শিবিরের সেক্রেটারী আব্দুল গফুর ও শিবির নেতা শিমুলকে। আজ সন্ধায় আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠানো হয়।
দেবহাটা উপজেলা আঃলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতনকে হত্যা চেষ্টার ৬ দিন পরে দেবহাটা থানায় এ মামলাটি করা হয়েছে হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন আহত চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতনের মা এবং শেখ আমজাদ হোসেনের স্ত্রী মিনা বেগম (৬৫)। সোমবার রাতে দেবহাটা থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা নং- ০২, তাং- ০৮-০১-১৭ ইং। মামলায় এজাহারভুক্ত হিসেবে ৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশ এই মামলায় এজাহারভুক্ত ১ জন ছাড়াও সন্ধিদ্ধ হিসেবে আরো ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মামলার এজাহারভুক্ত আসামী দেবহাটা উপজেলার নারিকেলী গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক শহিদুজ্জামান সাদ্দাম হোসেন (২৮) এবং সন্দিদ্ধ আসামী হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা শিবিরের সেক্রেটারী পাটকেলঘাটার মঙ্গলানন্দকাটি গ্রামের শেখ আব্দুল হকের ছেলে শেখ আব্দুল গফুর (২৪) ও তালা উপজেলার শ্রীমন্ডকাটি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মোড়লের ছেলে শিবির নেতা শিমুল মোড়ল (২০) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দক্ষ রাজনৈতিক কর্মী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন গত ২ জানুয়ারী মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মটরসাইকেল যোগে পারুলিয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকগজ দুরে সখিপুর টেলিফোন অফিসের কিছুদূর আগে পৌঁছালে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে গতিরোধ করে পরপর ৩টি গুলি ছোড়ে। এতে তিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩টি গুলির খোসা ও পাশের বাগানের মধ্য থেকে একজাড়া সেন্ডেল উদ্ধার করে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি অনেক সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে। দেবহাটা থানার ওসি কাজী কামাল হোসেন মামলা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে পুলিশী তদন্ত চলছে। ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অবিলম্বে এই ঘটনার কারন ও বাকী আসামীরা গ্রেফতার হবে বলে তিনি জানান।
এ মামলায় সন্দিদ্ধ আসামী হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা শিবিরের সেক্রেটারী পাটকেলঘাটার মঙ্গলানন্দকাটি গ্রামের শেখ আব্দুল হকের ছেলে শেখ আব্দুল গফুর (২৪) ও তালা উপজেলার শ্রীমন্ডকাটি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মোড়লের ছেলে শিবির নেতা শিমুল মোড়ল (২০) কে গ্রেফতার করায় মামলার গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আটক কৃত আব্দুল গফুর ও শিমুল মোড়লের পরিবারের দাবী সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতনকে হত্যা চেষ্টার দুই দিন পূর্বে এ মামলার দুই ও তিন নম্বর আসামী করা হয়েছে। এছাড়া শিবিরের ঐদুই নেতাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।
এছাড়া গতকাল দৈনিক সংগ্রামে সাতক্ষীরায় পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার সাত দিনেও সন্ধান মেলেনি দু’ শিবির নেতার ! এমন শিরোনামে সংবাদপ্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের এক দিন পর দেবহাটা থানায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২জানুয়ারী মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের চরগ্রামের পুরাতন মসজিদের দোতলা থেকে সাতজনকে আটক করা হয়। তার মধ্যে পাঁচজনকে ঘটনাস্থল ও ভিন্ন সময় উল্লেখ করে বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
সন্ধান না পাওয়া দু’জন হলো, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারী ও তালা উপজেলার মকলন্দকাটি গ্রামের শেখ আব্দুল হকের ছেলে শেখ আব্দুল গফুর (২০)। সে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। অপরজন হলো তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারী ও শ্রীমন্দকাটি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মোড়লের ছেলে শিমুল মোড়ল (১৮)। সে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইসলামিক ইতিহাসের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
শিবির নেতা আব্দুর গফুরের পিতা আব্দুল হক শেখ ও মা শাহনাজ খাতুন জানান, তাদের ছেলে আব্দুল গফুর মাগুরায় যাওয়ার কথা বলে গত ২ জানুয়ারী মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি থেকে মোটর সাইকেলে বের হয়ে যায়। বিকেলে লোকমুখে খবর পান যে চরগ্রাম পুরাতন মসজিদের দোতলা থেকে তাদের ছেলেসহ সাতজনকে পুলিশ পরিচয়ে চোঁখ বেঁধে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরদিন বুধবার তিনি খবর পান যে আটককৃত সাতজনের মধ্যে তার ছেলে গফুর ও শ্রীমন্দকাটি গ্রামের শিমুল মোড়ল ব্যতীত পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে।
একইসাথে আসা শ্রীমন্দকাটি গ্রামের আক্তারবানু জানান,তার দু’ ছেলে সুজন মোড়ল ও শিমুল মোড়লসহ সাতজনকে চোখ বেঁধে চরগ্রাম পুরাতন মসজিদ থেকে পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন সুজনসহ পাঁচজনকে পুলিশের উপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। অথচ তার বড় ছেলে শিমুল মোড়লকে পুলিশ গ্রেফতার দেখায়নি।
পুলিশ তাদেরকে আটকের কথা অস্বীকার করলেও জেল হাজতে থাকা সুজন মোড়ল ও অন্যান্য আসামীরা তালা থানা পুলিশ একইসাথে গফুর ও শিমুলসহ সাতজনকে আটক করে বলে দাবি করেছে। তারা গফুর ও শিমুল কোন অপরাধ করলে তাদেরকে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে আদালতে হাজির করে বিচার দাবি করেন।
সরেজমিনে শনিবার দুপুরে চরগ্রাম পুরাতন মসজিদ এলাকায় গেলে শাহাদাৎ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আঞ্জুয়ারা খাতুন, শাহানারা খাতুন, ইউপি সদস্য শেখ মোজাম্মেল হোসেন, মসজিদের ইমামসহ অনেকেই জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপপরিদর্শক নাজমুলসহ পুলিশের চারজন দু’টি মোটর সাইকেলে প্রথমে নতুন মসজিদ ও পরে পুরাতন মসজিদ এলাকায় আসেন। পরে পুলিশের একটি জিপ এসে মসজিদের দোতলা থেকে কম বয়সী সাতজন যুবককে চোখ মুখ বেঁধে নিয়ে যায়। এ সময় তাদেরকে এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। কপোতাক্ষ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর পার্শ্ববর্তী কামরুল ইসলাম, সবুজ, তুহিনসহ কয়েকজন জানান, বুধবার সকালে এই বিদ্যালয়ের ভিতর থেকে কোন ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে এমনটি তারা শোনেননি।
শনিবার বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের ফটকে এক সাক্ষাৎকারে সুজন মোড়ল জানান, তার ভাই শিমুল ও গফুরসহ সাতজনকে মঙ্গলবার সকালে পুলিশ চরগ্রাম মসজিদ থেকে আটক করে।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান জানান, গফুর ও শিমুল সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই। টানা আট দিনেও দুই শিবির নেতার সন্ধান মেলেনি। হঠাৎ গতকাল সন্ধায় শিুিবরের এ দুই নেতাকে আদালতে তোলা হয়।
দেবহাটা উপজেলার নারিকেলী গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে
এদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক শহিদুজ্জামান সাদ্দাম হোসেন ও শিবিরের জেলা সেক্রেটারী ও অপর শিবির নেতা কি ভাবে এক সাথে দেবহাটা উপজেলা আঃলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতনকে হত্যা চেষ্টা করতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
০৯জানুয়ারী,২০১৮মঙ্গলবার:::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি
Check Also
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী
জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …