ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা:জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন আজকের মতো শেষ হয়েছে। আদালত আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন।
আজ বুধবার শুনানি শেষে বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের বিচারক বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ আদেশ দেন।
এর আগে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। এ সময় তিনি জাল, মিথ্যা নথি উপস্থাপনের অভিযোগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩০ সাক্ষীর শাস্তি দাবি করেন।
এ জে মোহাম্মদ আলীর বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার জন্য আদালতে দাঁড়ান ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। তার পরই আদালত মুলতবি করা হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিনি ফের যুক্তিতর্ক তুলে ধরবেন।
এর আগে আজ বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বকশীবাজারের আদালতে হাজির হন। এরপরই এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
এ মামলায় এর আগে ৪ জানুয়ারি নিজের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এর আগে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মাদ আলী এ আবেদন জমা দেন।
এতে বলা হয়েছে, সরকারি নথি জালিয়াতি করে খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রধান হারুন-অর-রশীদসহ সংশ্লিষ্টরা। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে আজ বুধবার আদালতে বেশ হৈচৈয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এজলাসের সামনেই বসেছিলেন খালেদা জিয়া।
আজ বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে খালেদা জিয়া রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে পৌঁছান। এর পরই বিচারক বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান মামলার কার্যক্রম শুরু করেন।
শুরুতেই আদালত বলেন, ‘আদালত বসার সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিট। কিন্তু আপনারা ১২টায় এলেন, এভাবে চলতে পারে না। আগামীকাল থেকে ১০টায় হাজির হবেন।’
আপনারা আগে সাড়ে ১০টায় আসতেন, ১১টায় আসতেন, মেনে নিয়ে বসতাম। কিন্তু ১২টায় আদালতে এলেন, এটা হতে পারে না।’
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আমাদের মামলায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এ জন্য আমরা দেরি করে এলাম।’
জবাবে আদালত বলেন, ‘আপনারা আইনজীবীরা তো ১০টায় এলেন, আমিও এলাম। কিন্তু ১২টায় শুনানি করতে হলো। এভাবে চলতে পারে না।’
এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘আপনি বিরতির আগে আপনার যুক্তিতর্ক শেষ করবেন। আজ নবম দিনের যুক্তিতর্কের মধ্যে আপনিই পাঁচ দিন চালাচ্ছেন। খন্দকার মাহবুব একদিন, আবদুর রেজাক খান দুদিন বললেন। আর কত দিন বলবেন? প্রসিকিউশন তো মাত্র একদিন বলল।’
এ কথা শুনে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে হৈচৈ শুরু করেন। এ সময় খালেদা জিয়া আদালতের সামনে একটা চেয়ারে বসেছিলেন। আইনজীবীরা হৈচৈ শুরু করলে তিনি আদালতের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
এ সময় ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ‘এটা তো মার্শাল কোর্টের চেয়েও খারাপ নজির। ওয়ান-ইলেভেন ক্যাঙ্গারু কোর্টে এমনভাবে সময় বেঁধে দেয়নি।’
এ সময় জুনিয়র আইনজীবীরা হৈচৈ শুরু করে আদালতের উদ্দেশে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে থাকেন।
এ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত, আপনি আমাকে শুনানি করার জন্য আটকিয়ে দিতে পারেন না, সময় বেঁধে দিতে পারেন না। আসামিকে বলার সুযোগ করে দিতে হবে।’
এরপর আদালতে আইনজীবীরা আবারও হৈচৈ শুরু হলে আদালত বলেন, ‘আমি এখন মুলতবি করে দেবো।’
জবাবে খালদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী আবদুর রেজাক খান আদালতকে বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত আমাকে এক মিনিট বলার সুযোগ দেন।’
বিচারক বলেন, ‘সিনিয়র, আপনি বলেন।’
পরে আবদুর রেজাক খান বলেন, ‘এ মামলায় মূল কথা তিনটি। খালেদা জিয়া আ্যকাউন্ট খুলেছেন কি না? টাকা উত্তোলন করেছেন কি না? ব্যয় করেছেন কি না? তাহলে প্রসিকিউটর কি এসব প্রমাণ করতে পেরেছেন? আমি মনে করি, পারেননি।’
‘যে কারণে আমাদের এতসব যুক্তিতর্কের সময় নিতে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যারও বিচার এত বছর পর নিষ্পত্তি হয়নি, রাজীব গান্ধী হত্যা চোখের সামনে হয়েছে। এরপরও এত বছরে তা নিষ্পত্তি হয়নি। তাহলে এখানে আসামিকে শুনতে দিচ্ছেন না কেন? আসামিকে শোনার সুযোগ দিতে হবে।’
এই পর্যায়ে আদালত আবার বলার সুযোগ দেন। এরপর এ জে মোহাম্মদ আলী আবার যুক্তিতর্ক শুরু করেন।
০৯জানুয়ারী,২০১৮মঙ্গলবার:::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি