ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশনে অংশ নিচ্ছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, শুধু আমি অনশন করছি না। আমার পরিবারও আজ অনাহারে। ১ জানুয়ারি আমি ঢাকায় এসেছি কর্মসূচিতে অংশ নিতে। ঘরে আমার ছেলে, স্ত্রী এবং বৃদ্ধা মা আছেন। কিন্তু আমি তাদের জন্য ঘরে কিছু রেখে আসতে পারিনি। ঢাকায় আসার পর ছেলে ফোন করে জানিয়েছে, বাবা আমরা না খেয়ে আছি।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি তাদের বলেছি ধৈর্য ধারণ কর, আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। আমিও না খেয়ে আছি।
গোলাম মোস্তফা বলেন, অভুক্ত স্ত্রী, সন্তানের কষ্ট সহ্য করার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। তাই এবার কাফনের কাপড় পরেছি। সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে এভাবেই অনশন করতে করতে মরে যেতে চাই। কিন্তু বেতনহীন জীবনের গ্লানি নিয়ে আর তাদের মুখ দেখাতে চাই না। বাড়ি ফিরতে চাই না।
ফাজিল পাস গোলাম মোস্তফা সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার রূপাখাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক। ২০০০ সাল থেকে তিনি বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন। গোলাম মোস্তফা বলেন, সামান্য জমি ছিল তা বিক্রি করে খাওয়া হয়ে গেছে। সকালে একজন ছাত্রকে প্রাইভেট পড়িয়ে মাসে ১০০ টাকা পাই। আর মসজিদে ইমামতি করে সামান্য যা পাই তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালাই। কিন্তু এটাকে জীবন বলে না। আমরা মরার মত বেঁচে আছি। পরিবারের কোনো চাহিদা পূরণ করতে পারি না।
মাদরাসা বোর্ড থেকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করছেন শিক্ষকেরা। গত ১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি থেকে গত ৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন তারা। অনশনে প্রতিদিন বাড়ছে শিক্ষকদের সংখ্যা। গতকাল চার হাজারের মতো শিক্ষক অনশনে যোগ দেন বলে হিসাব করেছেন শিক্ষকেরা। দাবি আদায়ের ব্যাপারে অনড় অবস্থান ব্যক্ত করে অনেক শিক্ষক বলেছেন, মরে যাবো কিন্তু এবার আর দাবি আদায় না করে বাড়ি ফিরব না। জাতীয়করণ ছাড়া রাজপথ ছাড়ব না।
এ দিকে আমরণ অনশনের দ্বিতীয় দিন গতকালও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত গোবিন্দগঞ্জ সাখৈল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার তরুণ শিক্ষক আবু সাঈদ জানান, এ দিন বিকেল পর্যন্ত নতুন করে ১৪ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার আগের দিন ২৩ জন অসুস্থ হন। অসুস্থদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিক্ষকেরা জানান, এক দিকে তীব্র শীত তার ওপর বাথরুমের সমস্যা মোকাবেলা করছেন তারা। বিশেষ করে শিক্ষিকারা। পুরুষ শিক্ষকরা আশপাশের বিভিন্ন মসজিদ বা পাবলিক টয়লেটে যেতে পারলেও অনশনে অংশ নেয়া মহিলাদের তীব্র সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
শিক্ষকেরা জানান, ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে রেজিস্টার্ড প্রাইমারি স্কুল ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা ভাতার আওতায় আনার ঘোষণা দেয়ার পর সব রেজিস্টার্ড প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করা হয়। অথচ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ তো দূরের কথা ভাতার ব্যবস্থাও করল না। ১৯৯৪ সালে দেড় হাজারের কিছু বেশি মাদরসায় ভাতা দেয়ার পর বন্ধ হয়ে গেল। এটা আমাদের প্রতি বৈষম্য। প্রাইমারি স্কুলের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাও জাতীয়করণের ঘোষণা চাই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।
১৯৮৪ সালে মাদরাসা বোর্ড ১৮ হাজার ১৯৪টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রেজিস্ট্রেশন দেয়। তবে বেতন ভাতার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক মাদরাসা।
গত বছর পর্যন্ত মাদরাসা বোর্ডের তথ্যানুসারে ছয় হাজার ৯৯৮টি মাদরাসা তালিকায় রয়েছে। অবশ্য বোর্ডের তালিকার বাইরেও অনেক মাদরাসা চলমান রয়েছে বলে জানান শিক্ষকেরা। সব মাদরাসা জাতীয়করণ চান তারা।
১১জানুয়ারী,২০১৮বৃহস্পতিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি