ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভির টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় আগমন ঠেকাতে গতকাল দিনভর রাজধানীর বিমানবন্দর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন তাবলিগ জামাতের একাংশ ও কওমি আলেমরা। এর মধ্যেই গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২১ ফাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী। পরে পুলিশি নিরাপত্তায় তাকে কাকরাইলের মারকাজ মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। তাবলিগের এ বিক্ষোভের কারণে গতকাল উত্তরাসহ আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষকে।
মাওলানা সাদ আসছেন এমন খবরে গতকাল সকাল থেকেই বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নেন তাবলিগ জামায়াতের একটি অংশ ও কয়েক হাজার কওমি আলেম-ছাত্ররা। তারা ব্যানার নিয়ে বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। এ সময় ওই সড়কে যান চলাচল সীমিত হয়ে যায়। এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী। কিন্তু তিনি যাতে বের হতে না পারেন সেজন্য তাবলিগের হাজার হাজার সাথী ও কওমি আলেম-ছাত্ররা পুরো বিমানবন্দর এলাকা অবরোধ করে রাখেন।
তাবলিগকর্মী রুমি জানান, বিমানবন্দর থেকে ইজতেমা মাঠে যাওয়ার সব রাস্তায় প্রতিবাদ করছেন তাবলিগ কর্মীরা। এ কারণে বিমানবন্দরে এলেও তিনি দীর্ঘ সময় আটকে থাকেন। পরে আড়াইটার দিকে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে পুলিশি পাহারায় তাকে কাকরাইলের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা সাড়ে ৩টায় তিনি কাকরাইল মারকাজ মসজিদে এসে পৌঁছান। তিনি আসার আগে থেকেই মসজিদের বাইরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। রমনা থানা পুলিশের পাশাপাশি কাকরাইল মসজিদের মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের (ডিবি) সদস্যরা। এ ছাড়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকায়ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
জানা যায়, মসজিদের মূল ফটক দিয়ে সাধারণ মুসল্লি প্রবেশ করতে পারছেন না। শুধু ভেতরে অবস্থানরত মুসল্লিরা কাউকে পরিচিত মনে করলে তাকে ঢুকতে দিচ্ছেন। এ ছাড়া সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে অনেকেই মসজিদে যেতে পারেননি। গতকাল বিকেলে অন্তত অর্ধশত মুসল্লিকে মসজিদের বাইরে অপো করতে দেখা যায়।
কয়েকজন জানান, আসরের নামাজের আগ থেকে মূল ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে। ভেতরে পরিচিত ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কঠোর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রমনা থানা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসা ও ইজতেমায় অংশগ্রহণকে ঘিরে তাবলিগ জামাতের একটি অংশ ও কওমিপন্থীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে এ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ীতে বিক্ষোভ : ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আসাকে কেন্দ্র করে যাত্রাবাড়ীতে কওমি মাদরাসা শিা বোর্ড বেফাকের সামনে সকালে বিক্ষোভ করেন আলেমরা। পরে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি ও তাবলিগের শূরার উপদেষ্টা আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, সরকার গঠিত ওলামায়ে কেরাম ও তাবলিগের মুরুব্বিদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত উপো করে মাওলানা সাদের বিশ্ব ইজতেমোয় আসার ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া হবে। মাওলানা সাদ যদি চলেও আসেন তাহলে বিমানবন্দর থেকে ফিরে যেতে হবে। অন্যথায় ওলামায়ে কেরাম যেকোনো পদপে নিতে বাধ্য হবেন।
বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দস বলেন, মাওলানা সাদ কয়েক বছর ধরে আকাবিরে আসলাফের মানহাজের বিপরীতে বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এমনকি তিনি কুরআন-হাদিসেরও অপব্যাখ্যা করছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা গত বছর চেষ্টা করেছিলাম তিনি যেন ইজতেমায় না আসেন। এ বছরও সরকারের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি গঠন হয়। কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ও সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাওলানা সাদের ইজতেমায় না আসার মতামত দেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কছে সেই মতামত হস্তান্ত করেন। এরপরেও মাওলানা সাদ কিভাবে বাংলাদেশে আসেন আমরা তা জানি না।
বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজল হক বলেন, আমরা দেওবন্দ সফর করেছি, নিজামুদ্দিন সফর করেছি। তারপর শূরা কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এরপর শূরা কমিটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তা হস্তান্তর করেছেন। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওলামায়ে কেরামকে আশ্বস্ত করেছিলেন ওলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছুই করা হবে না। কিন্তু এখন কার ইশারায়, কার সহযোগিতায় মাওলানা সাদ বাংলাদেশে আসছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, হাটহাজারী মাদরাসার মুফতি কেফায়েতুল্লাহ, বাইতুন মাদরাসার মুহতামিম মুনিরুল ইসলাম, বেফাকের পরীা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফ, মুফতি ফয়জুল্লাহ, কাকরাইলসহ যাত্রবাড়ী মারকাজের মুরুব্বিরা।
কাকরাইলে বিক্ষোভ : ‘সাদ সাহেবের আগমন মানি না, মানবো না’- এমন স্লোগান দিয়ে প্রায় ১০০ শিার্থী ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে ট্রাকে চড়ে সন্ধ্যায় কাকরাইল মসজিদের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এরপর ট্রাকে চড়েই কিছু দূর এগিয়ে হোটেল শেরাটনের দিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের উল্টো পাশে এসে নামেন ওই মাদরাসা শিার্থীরা। কিন্তু এখানে তারা মাত্র কয়েক মিনিট অবস্থান করতে পারেন। এরপর পুলিশ এসে রাস্তা থেকে তাদের সরিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে ডিএমপি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সর্দার বলেন, যানচলাচলে যেন বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য মাদরাসা শিার্থীদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
নতুন কর্মসূচি : আসরের নামাজের মধ্য দিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মসূচি শেষ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে জামিয়া ইমদাদিয়া ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম ও তাবলিগের উপদেষ্টা সদস্য মাওলানা আবদুল কদ্দুস বলেন, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত পুরো মাদরাসার ছাত্র তাবলিগ জামাতের সাধারণ মুসল্লিরা পাহারায় থাকবেন যেন সাদ সাহেব ইজতেমার ময়দানে না যেতে পারেন।
তিনি বলেন, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সীমানার জন্য আমির নির্ধারণ করা হয়েছে টঙ্গী দারুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাসউদুল করীমকে। মহাখালী থেকে কাকরাইল পর্যন্ত সমস্ত মাদরাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে কাকরাইলে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে, যার নেতৃত্ব দিবেন মাওলানা মাহফুজুল হক। উত্তরার বিােভে উলামায়ে কেরামের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাবলিগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, জামিয়া নূরিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাসউদুল করিম, জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, বাবুস সালামের মুহতামিম মাওলানা আনিসুর রহমান, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক শরীফ মুহাম্মদসহ অসংখ্য আলেম।
যানজট : মাওলানা সাদ দেশে প্রবেশ করায় বিকেলে বিক্ষোভকারীরা বিমানবন্দর এলাকার পুরো সড়কজুড়ে অবস্থান নিলে ব্যস্ততম এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নতুন বাজার থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কে উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। এর মধ্যে বিমানের যাত্রীও রয়েছেন অনেকে। যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে যাত্রা শুরু করেন। বিমানবন্দর সড়ক বন্ধ থাকায় গুলশান-১ নম্বরের লিংক রোড থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের বাম লেনে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। অন্য দিকে বিপরীত পাশে যানবাহন আসতে না পারায় সড়ক ফাঁকা দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর খিলতে এলাকায় কয়েক হাজার যাত্রী লাগেজ ও ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু কোনো যাত্রীবাহী বাসের দেখা নেই। এমনকি সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা প্রাইভেট কারও চলতে দেখা যায়নি। যানবাহন না পেয়ে ােভ প্রকাশ করেন সাধারণ যাত্রীরা। বিকেলে নতুন বাজার এলাকায় যানজটে আটকা পড়া তুরাগ পরিবহনের চালক ইলিয়াস হোসেন বলেন, সকাল থেকে থেমে থেমে গাড়ি চালাতে পেরেছি। কিন্তু দুপুরের পর থেকে যানজট আর ছাড়ছে না। শুনেছি, বিমানবন্দর এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে তাবলিগের হুজুররা বিােভ করছেন।
যানজটের দৃশ্য দেখা গেছে কাওরানবাজার, ফার্মগেট, মহাখালী, বনানী, খিলতে, কুড়িল সড়কেও। সুপ্রভাত পরিবহনের কয়েকজন যাত্রী জানান, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তারা বাসে বসে ছিলেন। গাড়ি নড়ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই তারা হেঁটে যাত্রা শুরু করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরা, জসিম উদ্দীন, রাজলক্ষ্মী, হাউজ বিল্ডিং, আব্দুল্লাহপুরসহ পুরো এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে যানজট ছড়িয়ে পড়ে আরো তীব্র আকার ধারণ করে।
জানা গেছে, দিল্লির নিজামুদ্দিনের ‘বিতর্কিত’ মুরব্বি মাওলানা মুহাম্মদ সাদের আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় আসার বিরোধিতা করছেন তাবলিগ জামাতের একাংশ ও কওমি আলেমরা। তারা বলছেন, দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে সাদের ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের কারণে তার সাথে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আহমদ শফীসহ বাংলাদেশের সিনিয়র আলেমরাও চান, বিশ্ব ইজতেমায় সংঘর্ষ এড়াতে সাদ ও তার অনুসারী বা বিরোধীরাও যেন ইজতেমায় অংশ না নেন। যদিও তাবলিগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ খান শাহাবুদ্দীন নাসিম, অধ্যাপক ইউনূস শিকদার, মাওলানা মোশাররফ হোসাইন সাদের ঢাকা সফরের পক্ষে রয়েছেন।
ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিভিন্ন বক্তব্যকে ইসলামবিরোধী উল্লেখ করে দীর্ঘদিন থেকেই বিভক্ত হয়ে পড়েছে তাবলিগ জামাত। বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজ মসজিদের তাবলিগের মুরব্বিদের মধ্যেও দু’টি গ্রুপ হয়ে গেছে। যাদের একটি অংশ প্রকৌশলী ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে মাওলানা সাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
অপর দিকে মাওলানা যোবায়ের আহমেদের নেতৃত্বে তাবলিগের আরেকটি অংশ তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দিল্লির দেওবন্দের অনুসারী দেশের কওমি আলেমরাও মাওলানা সাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মাওলানা যোবায়ের আহমেদের পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাওলানা সাদের আগামীকাল টঙ্গীতে শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয়া ঠৈকাতে বেশ কিছুদিন থেকে প্রচেষ্টা শুরু করেন মাওলানা যোবায়ের আহমেদের নেতৃত্বাধীন তাবলিগের একাংশ ও কওমি আলেমরা। এ নিয়ে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথেও দফায় দফায় মিটিং করেন।
মাওলানা সাদ ইজতেমায় অংশ নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তার পরে শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আলেমদের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার বিষয়ে আলেমদের যে বক্তব্য তা আমরা শুনবো, এরপর দেখা যাবে তিনি ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন কি না।
তবে সাদবিরোধী হিসেবে পরিচিত তাবলিগের কর্মী প্রকৌশলী মাহফুজুল হান্নান বলেন, মাওলানা সাদকে ইজতেমায় না অংশগ্রহণের শর্তে কাকরাইল মসজিদে আনা হয়েছে। তাকে এখানেই রাখা হবে।
এ প্রসঙ্গে তাবলিগ কর্মী শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, গত ৭ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় তাবলিগের শূরা উপদেষ্টা, শূরা সদস্য ও ভারতে সফরকারী প্রতিনিধিদলসহ ২১ জনের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সবাই সাদের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। এরপরও মাওলানা সাদ বাংলাদেশে আসায় তাবলিগের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
তাবলিগ জামাতের লোকজন বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নেয়ায় যে যানজট সৃষ্টি হয় তা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায়। রাস্তায় তাবলিগ জামাতের লোকজনের অবস্থানের কারণে প্রায় ৬ ঘণ্টা ভিআইপি সড়ক অবরুদ্ধ ছিল। যানজট একদিকে মহাখালী আর অন্যদিকে গাজীপুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন ঢাকায় আসতে গিয়ে আটকা পড়েন। আলী আজম নামের এক যাত্রী বলেন, গাজীপুর এসে তাদের গাড়ি আটকে পড়ে। এরপর ৪ ঘণ্টা ওই একই স্থানে দাঁড়ানো। গাজীপুর থেকে অনেকে হেঁটে বিমানবন্দর পর্যন্ত আসেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। যারা হেঁটে আসতে পারেননি তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের মধ্যে আটকে থাকেন।
সাধারণ যাত্রীদের সাথে আটকা পড়েন বিদেশগামী যাত্রীরাও। অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে গতকাল এয়ারপোর্টে পৌঁছতে পারেননি বলে জানা গেছে। টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরা ও আব্দুল্লাহপুরসহ আশপাশের এলাকার যারা কাজের জন্য নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করেন তাদের অনেকেই গতকাল কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেননি। বিল্লাল নামের আব্দুল্লাহপুরের এক বাসিন্দা বলেন, তিনি হেঁটে বিমানবন্দর এলাকা পার হয়ে গাড়িতে চড়েছেন। তারপরও তার মতিঝিলে আসতে লেগেছে সাড়ে ৪ ঘণ্টা।
এদিকে মহাখালী পর্যন্ত অনেক মানুষ আটকে যান রাস্তা আটকা থাকার কারণে। এদিকে অনেক বিদেশগামী যাত্রী রাস্তায় আটকে পড়েন। তবে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন বিদেশফেরত যাত্রী এবং তাদের স্বজনেরা। গতকাল অনেকেই বিদেশ থেকে ঢাকায় আসেন। রাস্তা অবরুদ্ধ থাকায় তাদের ৬ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় বিমানবন্দরে। এ সময় তাদের রিসিভ করতে আসা স্বজনেরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিদেশী নাগরিকেরাও আটকে পড়েন বিমানবন্দরে।
১১জানুয়ারী,২০১৮বৃহস্পতিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/নয়াদিগন্ত/আসাবি