নিহত ৩ ‘জঙ্গি’র লাশ সরানো হচ্ছে, তাদের পরিচয় কি

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ঢাকা: রাজধানীর তেজকুনিপাড়া ও নাখালপাড়া সীমান্তে অবস্থিত ‘রুবি ভিলা’ নামের সন্দেহজনক ‘জঙ্গি আস্তানায়’ র‌্যাবের অভিযানে তিন যুবক নিহত হয়েছে। র‍্যাবের দাবি, নিহত তিনজনই জঙ্গি।

শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে র‍্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল (বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট) রুবি ভিলায় কাজ শুরু করেছে। অভিযান শেষে এখন লাশগুলো সরানোর প্রক্রিয়া চলছে।

র‍্যাব জানিয়েছে, অভিযান চলাকালে তাঁরা গ্যাসের চুলায় গ্রেনেড রেখে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেছেন।

সকাল ১০টার পরে বাসার সামনে সাংবাদিকদের র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, নিহত তিন যুবকের একজনের নাম জাহিদ অথবা সজীব হতে পারে। ওই যুবকের দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। একটিতে তাঁর নাম জাহিদ ও আরেকটিতে সজীব বলে উল্লেখ রয়েছে। তিন যুবকেরই বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। চলতি মাসের ৪ তারিখে তাঁরা বাড়িটি ভাড়া নেন বলে জানান তিনি।

র‍্যাব মহাপরিচালক জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে শুরু হওয়া অভিযান চলাকালে ওই বাসায় ‘জঙ্গিরা’ বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেছে। বাসার ভেতরে পাওয়ার জেল, সুইসাইড ভেস্ট ও বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে। অবিস্ফোরিত আইডিও আছে। সম্ভবত তারা আত্মঘাতী হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাড়ির মালিক নতুন এই তিন যুবকের ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি জানতেন না। বাড়ির কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) ভাড়া নেওয়ার বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

র‌্যাব ডিজি বলেন, গত ৪ জানুয়ারি তারা জাহিদ পরিচয় দিয়ে বাসাটা ভাড়া নেয়। নিহতরা সবাই ২০ থেকে ৩০ বছরের যুবক। ভেতরে একটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। আরো একটি গ্রেনেড ভেতরে রয়েছে। তাদের রুমে পিস্তলসহ আরো কিছু আর্মস রয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে ছাপড়া মসজিদ সংলগ্ন ১৩/১ রুবি ভিলা নামে ৬তলা ভবনটি ঘিরে রাখার পর শুক্রবার পঞ্চম তলায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ভবনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১০০ মিটারের কিছুটা বেশি দূরত্বে এবং সাংসদ সদস্যদের সরকারি বাসভবন বা ন্যাম ভবনের কাছাকাছি অবস্থিত।

স্থানীয়রা জানান, বাড়িটি ১৯৯০ সালের দিকে তৈরি। সাব্বির নামের এক ব্যক্তি বাড়ির মালিক। চারপাশে বড় বারান্দা রয়েছে। বাড়ির ছাদে মোবাইল অপারেটরের একাধিক টাওয়ার আছে। এই বাসার পাঁচতলাতেই র‌্যাব সন্ধান পেয়েছে ‘জঙ্গি আস্তানা’র।

পশ্চিমদিকে বায়তুল আতীক জামে মসজিদ কমপ্লেক্স লোকমুখে ছাপড়া মসজিদ নামে পরিচিত। এখান থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে রুবি বিলার অবস্থান। বাড়ির উত্তরদিকে ন্যাম ভবন। ন্যাম ভবন থেকে দক্ষিণ পাশে তিনটি বাড়ির পরই এটি।

এ ঘটনায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভোরে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হলে হঠাৎ গুলি আর গ্রেনেডের শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। অনেককে চিৎকার-চেঁচামেচি করতেও শোনা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল অামিন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ওই বাসায় কিছু ব্যাচেলর ভাড়া থাকে। তবে অামাদের কাছে কখনওই জঙ্গি বলে মনে হয়নি।

নূরুজ্জামান মন্টু নামের অপর এক বাসিন্দা জানান, রাতের দিকে গোলাগুলির শব্দ পান। একপর্যায়ে মাইকিং করা হয়।

ছেলের ফোন পেয়ে গাজীপুর থেকে আসা কামরান হোসেন জানান, রুবি ভিলার ছয়তলায় তাঁর ছেলে পারভেজ হোসেন থাকেন। ছয়তলায় মেস করে বেশ কয়েকজন ছেলে থাকে। ভোররাত ৪টার দিকে পারভেজ ফোন করেন বাবাকে। বলেন, ‘গোলাগুলি হচ্ছে। কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আমি কী করব?’

পারভেজ হোসেন ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। বাসার ছয়তলায় কয়েকজন যুবককে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তাদেরই মধ্যে হয়তো পারভেজ রয়েছেন। নিচে ঘুরছেন উদ্বিগ্ন বাবা।

তখন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান ‘জঙ্গি আস্তানায়’ তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। র‍্যাব সূত্র জানায়, ছয়তলা বাসার পঞ্চম তলায় মেস বাসা ছিল এটি। সেখানে সম্ভবত তিনজন ছিল।

র‌্যাবের দাবি, আগে থেকেই তথ্য ছিল নাখালপাড়ার কোনো একটি বাড়িতে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিস্ফোরক মজুদ করছে জঙ্গিরা।

ভোরে র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৬ তলা বাড়িটির পঞ্চম তলায় কয়েকজন জঙ্গি সদস্য রয়েছেন বলে তারা জানতে পারেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাতে গেলে বাড়ির ভিতর থেকে গুলিবর্ষন ও গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয়। র‌্যাব সদস্যরা পাল্টাগুলি ছুঁড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে দুই র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। ভিতরে কয়কেজন জঙ্গির লাশ রয়েছে। এছাড়াও প্রচুর বিস্ফোরক ছড়ানো ছিটানো রয়েছে।

এদিকে, জিঙ্গাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক সাব্বির (৫৫) ও দারোয়ানসহ কয়েকজনকে র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়েছে। হয়তো নিহতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তাদের কাছ থেকে জানা যাবে।

১২জানুয়ারী,২০১৮শৃক্রবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।