ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হবে আজ শনিবার। জোটসঙ্গী জামায়াত আগে প্রার্থী থোষণা করায় বিএনপির সাথে শুরু হয় দর কষাকষি।
এ নিয়ে কয়েকদিন আগে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর শনিবার রাতে দলের নীতি-নির্ধারক ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন তিনি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এ বৈঠকের প্রধান এজেন্ডা থাকবে ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন চুড়ান্ত করা। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সাথে আলোচনা ছাড়াই আগে প্রার্থী ঘোষণায় কিছুটা অবাক হয়েছে ২০ দলের শীর্ষ নেতারা। তবে এটিকে জামায়াতের দর কষাকষির কৌশল হিসেবে দেখছেন তারা।
অপর দিকে জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, এর আগে জামায়াতের আলোচনা ছাড়া একক সিদ্ধান্তে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বিএনপি। তাই দলটিও বিএনপির সাথে এ নিয়ে আলোচনা করেনি। তাই দর কষাকষি শুরু হয়েছে। এখন প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে বিএনপি কি সিদ্ধান্ত নেয় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
তবে দলীয়ভাবে জামায়াত মনে করে, জোটের বাইরে গিয়ে হলেও ঢাকায় দলের অবস্থান পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। এর পেছনে কারণ হচ্ছে জামায়াতের নিজস্ব ভোট ব্যাংক এবং সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা। তাই ডিএনসিসি উপ-নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার আগেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে জামায়াত। এমনকি জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে একজন ইতিমধ্যে মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন।
গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন, আগামী শনিবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চান জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে। জোটের বন্ধন অটুটও রাখতে চান তিনি।
খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় জামায়াত
১২ জানুয়ারি,২০১৮ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জামায়াতকে এখনো তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি। জামায়াত নেতাদের ডেকে নির্বাচনের ব্যাপারে ‘সমঝোতা’ বৈঠক না করায় এখন পর্যন্ত মেয়রপ্রার্থী নিয়ে মাঠে আছে দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন জামায়াতের মেয়রপ্রার্থী। তবে তাদের প্রার্থিতা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বিএনপি। নিজেদের প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর তারা জামায়াতকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। তবে খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় রয়েছে জামায়াত।
একটি সূত্র জানিয়েছে, জামায়াত শেষ পর্যন্ত বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে না। চার-পাঁচটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড় দিয়ে সামান্য গুরুত্ব দেওয়া হলেই মেয়রপ্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থাকবে বলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
অবশ্য কেউ কেউ বলছে, নির্বাচনের আগে নির্বাচনী মাঠে থাকলে তাদের প্রার্থীর পরিচিতি বাড়বে। গণমাধ্যমে আলোচনার বাইরে থাকা জামায়াতের উপস্থিতিটাও পাওয়া যাবে। এর বেশি কিছু নয়। সময়মতো জামায়াত প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হবে।
জামায়াতের মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত সোমবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে একক প্রার্থী ঠিক করতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে জন্য শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। জামায়াত কী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আগে আমরা প্রার্থী চূড়ান্ত করব।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল নির্বাচনের জন্য পুরো প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন। তেজগাঁও ৪১৯-৪২০ ভবনে একটি নির্বাচনী অফিসও খুলেছেন। বৃহস্পতিবার ওই অফিসে তিনি ঘরোয়াভাবে বিএনপি নেতাকর্মীসহ আসা মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির ১৮ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে মহানগর উত্তর বিএনপি। প্রথম দিনে সাধারণ ও সংরক্ষিত পদে ২৮টি ফরম বিক্রি হয়। নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর বিএনপি কার্যালয় থেকে এ ফরম বিক্রি করা হচ্ছে।
উত্তর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তাই একক প্রার্থী চূ’ড়ান্ত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনে নিচ্ছেন।
প্রথম দিন যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, তারা হলেন মো. হেলাল তালুকদার ও মোতালেব হোসেন রতন (ওয়ার্ড-৪৭), দেওয়ান মো. নাজিমউদ্দিন (ওয়ার্ড-৪৯), মোস্তফা কামাল হৃদয় (ওয়ার্ড-৫১), মতিউর রহমান (ওয়ার্ড-৫০), সোহেলী পারভীন শিখা (সংরক্ষিত ৫২, ৫৩, ৫৪), আনোয়ার হোসেন আয়নাল (ওয়ার্ড-৪৪), শহিদুল ইসলাম (ওয়ার্ড-৪৮), জাকিয়া সুলতানা (সংরক্ষিত ৪৯, ৫০, ৫১), একেএম জিয়াউল হাসান (ওয়ার্ড-৩৭), আবদুস সালাম (ওয়ার্ড-৫১), মো. নুরুল ইসলাম (ওয়ার্ড-৩৭), মো. আতিকুর রহমান (ওয়ার্ড-৫৩), কামরুল হাসান (ওয়ার্ড-৪৮), ইলোরা পারভীন (সংরক্ষিত ৪৬, ৪৭ ৪৮), মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা (ওয়ার্ড-৩৮), আজহারুল ইসলাম সেলিম (ওয়ার্ড-৪০), রফিকুল ইসলাম খান (ওয়ার্ড-৪৬), আবদুর রহমান (ওয়ার্ড-৪৪), মো. ইসমাইল হোসেন (ওয়ার্ড-৪৭), মো. আলী হোসেন (ওয়ার্ড-৩৮), এমএ বাশার (ওয়ার্ড-৩৭), মো. দেলোয়ার হোসেন (ওয়ার্ড-৩৯), হারুনুর রশিদ খোকন (ওয়ার্ড-৫৪), সালেহা ইসলাম ও হেলেনা সিরাজ (সংরক্ষিত ৩৭, ৪১, ৪২), তাজুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও মো. মোস্তফা (ওয়ার্ড-৪১)।
জামায়াত সূত্রমতে, ৯ জানুয়ারি সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতারা মেয়রপ্রার্থী চূড়ান্তকরণে খালেদা জিয়াকে দায়িত্ব দেন। জোটের সঙ্গে আলোচনা না করে জামায়াত মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা দেওয়ায় বৈঠকে বেশিরভাগ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জবাবে বৈঠকে অংশ নেওয়া জামায়াত প্রতিনিধি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক হলে কোনো সমস্যা হবে না। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা খালেদা জিয়া যে সিদ্ধান্ত নেবেন, জামায়াত তা মেনে নেবে। কিন্তু জোট নেতারা বিএনপি থেকে একজন মেয়রপ্রার্থী করতে খালেদা জিয়ার ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
জামায়াত সূত্র জানায়, জামায়াতের একটি অংশের সঙ্গে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যোগাযোগ আছে বলে শোনা যায়। তার মধ্যে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠানের চার দিন পার হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। এ অবস্থায় জামায়াতের সরকারসমর্থক অংশ প্রচারে থাকার ঘোষণা দেয়।
জামায়াতের এক নেতা জানান, আমরা মেয়রপ্রার্থী দেব না জোটের বৈঠক শেষে তো আমরা বেগম জিয়াকে কথা দিয়ে এসেছি। জামায়াতের যে ইতিহাস, কাউকে কথা দিলে শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করে। এখানে কোনো রহস্য আছে।
বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিমউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, উত্তরের মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য আমার দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। উত্তরা, বনানী, গুলশান, মোহাম্মদপুর, আদাবর, বাড্ডাসহ প্রভৃতি স্থানে আমি ইতোমধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছি। ঘরোয়া বৈঠক করছি। আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। রবিবার মেয়র পদের জন্য রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ফরমও ক্রয় করব। উত্তর সিটির ভোটাররা মনে করেন, যোগ্যতম প্রার্থী হিসেবে জোটনেত্রী আমাকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন।
জোটের একক প্রার্থী হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন না পেলে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী থাকবেন কিনাÑ প্রশ্ন করা হলে সেলিমউদ্দিন বলেন, এ ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
যদিও বৈঠকে ২০ দলীয় জোটের শরিক বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের কারো ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রিয়তা থাকলেও সাংগঠনিকভাবে বিএনপিই দেশের সর্ববৃহৎ দল। তাই বেগম জিয়াকে বলেছি, বিএনপি থেকে মেয়রপ্রার্থী দেওয়ার জন্য।
এদিকে নিজেদের দ্বন্দ্বে বিভক্ত ২০ দলীয় জোট থেকে উপেক্ষিত লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও তার অংশ থেকে মেয়রপ্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে গড়া দলের এই চেয়ারম্যানও উত্তর সিটি করপোরেশনে এসএম ইউসুফ আলী নামের একজনকে মেয়রপ্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামানও মনোনয়নের জন্য খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন
১৩জানুয়ারী,২০১৮শনিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি