ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:বর্তমান সরকারের সময় সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-হামলা, নির্যাতন ও গুম-খুনের তথ্য সংগ্রহ করেছে দলটি। এজন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের একটি সেল কাজ করছে। এরই মধ্যে সেলের নেতারা ৭৭টি সাংগঠনিক ইউনিট এলাকা সফর প্রায় সম্পন্ন করেছেন। অন্যদিকে সারাদেশে গুমের শিকার নেতাকর্মীদের ছবিসহ তালিকা তৈরি করে বই বের করার কার্যক্রমও শুরু করেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি উইং। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নিখোঁজ নেতাকর্মীর পাশাপাশি গুমের পর ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিদের জবানবন্দি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন টার্গেট করে এসব তথ্য নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করার জন্যই কয়েক মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছে তথ্য সংরক্ষণ সেলটি। তাদের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর খালেদা জিয়ার কাছে কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। এরপর তার নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে মুদ্রণ ও প্রকাশনার কাজ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং পাবনা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. সালাহউদ্দিন খান পিপিএম।
মো. সালাহউদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে দেশের ৫১টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি, ৬৯ উপজেলা ও ১৫৬টি ইউনিয়ন সফর করেছি। এসব এলাকায় নেতাকর্মীদের নামে মামলার সংখ্যা, ধরন, উদ্দেশ্য এবং গুম, খুন, ক্রসফায়ার, অপহরণ, হামলায় পঙ্গুত্ব বরণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের নির্যাতনের চিত্র তুলে এনেছি। এগুলো নিয়ে আমরা ডাটাবেজ তৈরি করছি। আমরা দ্রুত কাজ করছি।’
জানা গেছে, মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সেলে তিনজন কাজ করছেন। এর নেতৃত্বে রয়েছেন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খান পিপিএম। অন্য দু’জন হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা শরিফুল ইসলাম শাওন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা তারেক। এ কার্যক্রম নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় আলাদা জায়গা ও নানাবিধ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে ইচ্ছা করলেও কেউ তথ্য নষ্ট করতে না পারে এবং কার্যালয়ের তথ্য বেহাত হলে অন্য জায়গাতেও সুরক্ষিত থাকে।
সালাহউদ্দিন খান জানান, ‘আমরা এ পর্যন্ত যেসব এলাকা সফর করেছি তাতে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ২৩ হাজার ৭০০-র কিছু বেশি মামলার ডকুমেন্ট এসেছে। এতে আসামি করা হয়েছে তিন লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে। অন্যদিকে গুম করা হয়েছে ১০৭ জনকে।’
তিনি জানান, এ সময়ে আহত-পঙ্গুত্ব কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার। প্রায় দুই হাজার বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ কিংবা ধ্বংস করা হয়েছে। সারাদেশে নেতাকর্মীদের গুম ও অপহরণ নিয়ে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে গবেষণায়।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর তার নির্দেশনা মোতাবেক আগামী মাস থেকেই আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।’
সালাহউদ্দিন খান জানান, দেশের অন্যান্য সাংগঠনিক এলাকাগুলোয় সফর করে মামলা-হামলা আর নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র তুলে আনার কাজ শেষ করা হবে। এখনও চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে কাজ শুরু করতে পারেনি গবেষণা সেল।
সেলের আরেক কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের চিত্র নিয়ে ডকুমেন্টরি (তথ্যচিত্র) প্রকাশ করা হবে।
তিনি জানান, এই কাজ করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন মামলার অসঙ্গতিও পেয়েছেন। যেমন- বিএনপির আন্দোলনের সময়ে বেলা ১১টায় উত্তরার একটি ঘটনায় দলের মহাসচিবসহ আরও নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আবার একই সময়ের ঘটনা উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী এলাকায় আরেকটি মামলায় মহাসচিবকে আসামি করা হয়েছে। তাহলে একই ব্যক্তি, একই সময়ে দুই জায়গায় কীভাবে উপস্থিত থাকতে পারেন। আবার প্রায় সব মামলায় বাদী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। যাদের ভুক্তভোগী হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে তাদের দিয়ে, কিংবা অন্তত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে মামলা দায়েরের সংখ্যা নগণ্য। এটা মামলার অন্যতম দুর্বল দিক।
তবে বিএনপির এ তথ্য সংগ্রহকে দাপ্তরিক কাজ বলে দাবি করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের অসংখ্য নেতাকর্মী এখন মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত। তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্যও এ তথ্য কাজে লাগবে। দলের প্রয়োজনেই এ তথ্য সেন্টার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।১৪জানুয়ারী,২০১৮রবিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/সমকাল /আসাবি