ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা : আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে মোহাম্মদনগর দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসার এক একর পাঁচ শতক জমি ভূমিদস্যু সাইফুল আযমের লাঠিয়াল বাহিনী দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে করা দলিল মূলে এই জমি দখল করা হয়েছে। এ ঘটনার পর কালিগঞ্জ থানা পুলিশসহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর মৌজার ২৪০ নং জে,এল এর ৭৪৫ নং এসএ খতিয়ানের ২১৪০, ২১৪৮, ২১৪৯, ২১৫২, ২১৫৩, ২১৫৫, ২১৯৪, ২১৯৫, ২১৯৬, ২২০৪ দাগের ২২ শতক, ১৪১০ নং খতিয়ানের ২১৪১, ২১৪২, ২১৪৪, ২১৯৮, ২১৯৯, ২০০০ ও ২২০১ দাগের ২৩ শতক, ৭৪৩ নং খতিয়ানের ২২৭৪, ২১৫৯ ও ২১৬১ দাগের ৩০ শতক, ৭৫১ নং খতিয়ানের ২১৫৪ দাগের ১৮ শতক, ৮৬৪ নং খতিয়ানের ২১৬০ দাগের ৩৫ শতক, ৮৬৬ নং খতিয়ানের ২১৫৬ দাগের ১৩ শতক, ৮৬৫ নং খতিয়ানের ২১৫৭ দাগের ১৪ শতক জমি সবমিলিয়ে মোট এক দশমিক ৫৫ শতক জমি ওয়ারেশ সূত্রে বছির উদ্দিন সরদারের ছেলে কিনু সরদার পায়। কিনু সরদার মারা যাওয়ার পর একইভাবে তার তিন ছেলে-মেয়ে যথাক্রমে জালালউদ্দীন সরদার, আব্দুল গণি সরদার ও ওলীজান বিবি পায়। পরে জালালউদ্দীন সরদার ও আব্দুল গণি সরদার অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেলে সব জমি তাদের একমাত্র বোন ওলীজান বিবি পায়। উত্তারাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত এক দশমিক ৫৫ শতক জমি ওলিজান বিবি ১৯৮৭ সালের ১৯ অক্টোবর ৬৭৪৪ নং রেজিষ্ট্রি দানপত্র দলিল মূলে মোহাম্মদনগর দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসায় দান করেন। এরপর একই এলাকার মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে আইয়ুব আলী জাল-জাতিয়াতির মাধ্যমে একটি দলিল করে। ঐ দলিল দেখিয়ে মাদরাসায় দান করা জমি দখল করার পায়তারা করে। এরপর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালত থেকে মাদরাসা পক্ষে একাধিকবার রায়ও হয়। এরপরও প্রতারক ও ভমিদস্যু আইয়ুব আলী উক্ত জমি দখলে নিতে একাধিকবার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে হামলা চালায়। এতে অনেকেই আহত ও জখম হয়। যা একাধিকবার সালিশী ও মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়িয়েছে। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এ মামলা মোকদ্দমা চলছে। মামলার রায় মাদরাসার পক্ষে হওয়ায় উক্ত জমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভোগ দখল করে আসছিল। এরমধ্যে ভমিদস্যু আইয়ুব আলী চলতি জানুয়ারি মাসের শুরুতেই মাদরাসার ভোগ দখলীয় এক একর ৫ শতক জমি নামমাত্র মূল্যে একই এলাকার আরেক ভমিদস্যু সাইফুল আযমের কাছে বিক্রি করে। এ খবর পাওয়ার পর মাদরাসার অভিভাবক সদস্য মো. রাজগুল বাহার বাদি হয়ে সাইফুল আযম গং এর বিরুদ্ধে গত ৯ জানুয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-পি-৮৬/১৮। এরপর ১৪৫ ধারা জারি করেন। হঠাৎ করে সাইফুল আযমের ৩০/৪০ জনের লাঠিয়াল বাহিনী গত ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার মাদরাসার জমি দখল করে নেয়। সেখানে তারা ঘর-বাড়ি তৈরী করে বসবাস করছে। এ ঘটনার পর কালিগঞ্জ থানা পুলিশসহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মৃত মাস্টার আব্দুল হক সরদারের ছেলে সাইফুল আযম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত নবেম্বর মাসে আমি আইয়ুব আলীর ছোট ছেলে রেজাউল করীমের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে এক একর জমি ক্রয় করেছি। যা ১১ জানুয়ারি বিকেলে দখল করে নিয়েছি। সেখানে একটা ঘর ও একটা রান্না ঘর তৈরী করে বসবাস করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আফসার উদ্দিন বলেন, বহুদিন ধরে এই জমি নিয়ে মামলা চলছে। আমি যতটুকু জানি মামলার সব রায় মাদরাসার পক্ষে গেছে। এরপরও একটি গ্রুপ মাদরাসার জমি জবর দখল করে নিয়েছে। এ নিয়ে চেয়ারম্যনের দপ্তরে সালিশ ছিল। সে সালিশে সাইফুল আযমের লোকজন উপস্থিত না হয়ে জোর পূর্বক জমি দখল করেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় সাইফুল আযম, জিয়াউর রহমান, হাফিজুর রহমান ৩০/৪০ জনের ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে মাদরাসার তিন বিঘা জমি জোর করে দখল করে নিয়েছে। এ নিয়ে আমার দপ্তরে সালিশ ডাকা হয়। কিন্তু সেই সালিশীতে সাইফুল আযমের কেউ উপস্থিত হয়নি। তিনি বলেন, ধুরন্দর সাইফুল আযম ৩০ লাখ টাকার জমি মাত্র দেড় লাখ টাকায় কিনেছে। যা অবিশ্বাস্য। তিনি মাদরাসায় এই দখলীয় জমি উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার এস আই মুরাদ হোসেন বলেন, ঘটনা শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে সাইফুল আযমকে বলে দিয়েছি, জমির কাগজপত্র যাদের রয়েছে তারাই জমি পাবে। আপাতত মাদরাসার জমিতে উঠানো ঘর তুলে নিতে বলেছি। তিনি বলেন, যে যত বড়ই হোক না কেন অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠানের জমি কাউকে দখল করতে দেয়া হবে না। তিনি আবার ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জি এম আফজাল হোসেন বলেন, যথাযথভাবে দায়িত্ব অর্পন কর্মকর্তাগণ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নোটিশ জারি করলে ও সাইফুল আযম গংয়ের আইন আদালতের সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে মাদরাসার জমিতে ঘর নির্মাণ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনসহ সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কালিগঞ্জ থানার ওসি সুবির দত্ত বলেন, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। আদেশ পেলে সে পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে
১৪জানুয়ারী,২০১৮রবিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি