ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ধামরাইয়ে আবারো ভণ্ড সাধুর প্রতারণা বেড়েছে। তার ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। সর্বরোগ সারানোর কথা বলে ওইসব ভণ্ড সাধু ঝাড়-ফুঁক, পানি পড়া আর তাবিজ-কবজ দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করছেন তারই পাতানো কয়েকজন চাটুকার। জানা গেছে, ধামরাইয়ের চৌহাট গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র পালের ছেলে নিতাই চন্দ্র পাল ওরফে নিতাই যে বছর কয়েক আগেও এলাকায় ঘুরে ঘুরে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতো। সেই নিতাই আজ মস্তবড় সাধু হয়েছে।
ভণ্ড সাধুর ফাঁদে নিঃস্ব সাধারণ মানুষ
যে সর্বরোগের চিকিংসা করে ঝাড়-ফুঁক, আর তাবিজ-কবজ দিয়ে। তার নাম-ডাক ছড়িয়েছে ধামরাই পার্শ্ববর্তী সাটুরিয়াসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সে খালি গায়ে নারী-পুরুষের চিকিৎসা করে থাকে। তার চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। স্থানীয়রা জানান, নিতাই সাধু বন্ধ্যা নারীদের সন্তান হওয়া, অল্প বয়সে চুল পাকা, প্রতিবন্ধী শিশুদের ভালো করা, প্রেমিক-প্রেমিকাকে পাইয়ে দেয়া, জিন- ভূত তাড়ানো, যেসব নারীদের বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে হচ্ছে না ক্যানসার, ডায়াবেটিকস, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, পিত্তথলিতে পাথর, প্যারালাইজড, বাতের ব্যথা, হাঁপানি, একশিরা, যৌন দুর্বলতা, আলসার, ব্যথা, স্বপ্নদোষসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করে। আর রোগের ধরন দেখে চিকিৎসার ফি ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা নিচ্ছে। এসব কাজ করে তার এখন প্রতি মাসে আয় প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। সরজমিনে দেখা যায়, নিতাই সাধুর বাড়িতে ভোর বেলায় তার ছাপড়া ঘরের আস্তানার সামনে পানির বোতল হাতে নিয়ে ধামরাই, সাটুরিয়া, মির্জাপুর, নাগরপুর এলাকা থেকে শাহানাজ বেগম, রওশন আরা, বাবুল হোসেন, রোকসানা বেগম, অজুফ আক্তার, শেফালি আক্তার, আসমা বেগমসহ শতাধিক নারী-পুরুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন চিকিৎসা নেয়ার জন্য। এ সময় নিতাই পালের খাদেম রিপন হোসেনসহ কয়েকজন ১০০ টাকা করে নিয়ে টিকিট দিচ্ছে রোগীদের। আর ছাপড়া ঘরের ভেতর আসর বসিয়ে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে খালি গায়ে নিতাই পাল রোগীদের ঝাড়-ফুঁক করছে এবং আধা লিটার বোতলে পানি পড়া দিচ্ছে। আবার যারা মাঝেমধ্যে পাগল হয়ে যায়, তাদের দেয়া হচ্ছে তাবিজ-কবজ। একপর্যায়ে নারী রোগীদের সঙ্গে বলছে কানে-কানে গোপন কথা। এ ব্যাপারে নিতাই পালের কাছে শিক্ষা বিদ্যা কতটুকু জানতে চাইলে বলে, অভাবের কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। তবে এখন শুধু নাম লিখতে পারি। একপর্যায়ে নিতাই পাল সাংবাদিকদের বলেছে, অভাবের কারণে দুই বছর আগেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। এখন নিজ বাড়িতেই আসর বসিয়ে সর্বরোগের পানি পড়া দিয়ে মানুষের কাছ থেকে যে টাকা পায় তাতেই তার আর কোনো অভাব হয় না। তবে সাধারণ মানুষ এখনো বুঝতে পারেনি নিতাই পালের পুরোটাই প্রতারণা। গত কয়েক বছর ধরে নিতাই কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে নিরীহ লোকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রতিনিয়তই প্রশাসনের চোখের সামনে এ প্রতারণা হলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম মানবজমিনকে জানান, প্রতারণার সত্যতা পেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।